ঘরের জিনিস বিক্রি করে ঢাকা ছাড়ছে মানুষ
কঠোর লকডাউন শুরু হচ্ছে আগামীকাল বৃহস্পতিবার ভোর ৬টা থেকে। ঘোষণা আসার পর ঢাকার ভাড়া বাসা ছেড়ে গ্রামের পথে রওনা হয়েছেন অনেক মানুষ। তাদের বেশিরভাগই চাকরি হারিয়েছেন, ব্যবসায় লোকসান গুনেছেন। এখন আর এই জাদুর শহরে তাদের কোনো কাজ নেই৷
আজ বুধবার সকাল ৭টা থেকে বিকাল সাড়ে ৫টা পর্যন্ত মুন্সিগঞ্জের শিমুলিয়া ঘাটে দেখা যায়, অর্ধশতাধিক পিকআপ ভ্যানে বাসা-বাড়িতে ব্যবহৃত মালামাল নিয়ে পদ্মা পার হয়েছেন মানুষ। তাদের বেশিরভাগই ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ ও গাজীপুর থেকে এসেছেন।
ঘরমুখী এই মানুষের কাছে বাসা ভাড়া ও বাসার মালামাল পরিবহনের গাড়ি ভাড়াও নেই। বাধ্য হয়ে ঘরের আসবাবপত্র, ব্যবহৃত জিনিসপত্র বিক্রি করে ভাড়ার টাকা জোগাড় করেছেন অনেকেই। কেউ কেউ আবার গ্রামে গিয়ে বাবা, মা কিংবা আত্মীয়-স্বজনের কাছ থেকে টাকা নিয়ে ভাড়া পরিশোধ করবেন।
পদ্মা পার হতে আসা মো. জাহিদ হোসেন বলেন, ‘ঢাকার লালবাগ শহীদনগর এলাকায় একটি গাড়ির গ্যারেজে কাজ করতাম। স্ত্রী, তিন বছরের ছেলে আর দুই ছোট ভাইকে নিয়ে ভালোভাবেই দিন কাটছিল। কিন্তু করোনাভাইরাসের কারণে সব শেষ হয়ে গেল।’
তিনি আরও বলেন, ‘গ্যারেজে বেশি গাড়ি মেরামতের জন্য আসে না। যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দেওয়ায় আয় নেই বললেই চলে। তাই ঢাকার বাসা ছেড়ে দিয়ে ফরিদপুরে নিজ বাড়িতে চলে যাচ্ছি। ছয় হাজার টাকা দিয়ে পিকআপ ভাড়া করেছি। বাড়ি গিয়ে বাবার কাছ থেকে নিয়ে ভাড়াটা দিতে হবে। তিন সপ্তাহ ধরে আয় নেই। বাসার মালিক ভাড়ার জন্য চাপ দিচ্ছিল, খাবারের টাকাও ছিল না। তাই ঢাকা ছেড়ে চলে যাচ্ছি।’
মো. আলামিন হোসেন (২৬) হাতের চুরি তৈরির কারখানায় কাজ করতেন। দুই সপ্তাহ আগে তার কারখানা বন্ধ হয়ে যায়। কার্মহীন হয়ে পড়ায় ঢাকায় থাকা কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে আলামিনের। করোনায় বিভিন্ন সময়ে কারখানা বন্ধ থাকায় দুই লাখ টাকা ঋণও নিতে হয়েছে তাকে। সবদিক চিন্তা করে মালামাল পিকআপে নিয়ে গ্রামের বাড়ি শরিয়তপুর চলে যাচ্ছেন তিনি।
আলামিন বলেন, ‘একটি খাট, সিলিং ফ্যান ও আলমারি বিক্রি করেছি। এর সঙ্গে আরও কিছু যোগ করে গাড়ি ভাড়া করেছি।’
গার্মেন্টস শ্রমিক মো. পারভেজ হোসেন বলেন, ‘স্ত্রী, এক বছর বয়সী ছেলে, তিন বছর বয়সী মেয়েকে নিয়ে গাজীপুরের টঙ্গী এলাকায় থাকতাম। কিন্তু গার্মেন্টসে কাজের চাপ বাড়িয়ে দিয়েছে কয়েকগুণ। সরাসরি বাদ না দিয়ে চাপ দিয়ে ছাটাই করছে। এজন্য চাকরি ছেড়ে দিয়েছি। গ্রামে গিয়ে কৃষিকাজ করবো।’
বাসা ভাড়া ও গাড়ি ভাড়া পরিশোধ করতে একটি ফ্রিজ ও একটি সাইকেল বিক্রি করেছেন বলে জানান তিনি।
ঢাকায় রাইদা বাসে কাজ করতেন শেখ সারোয়ার আহম্মেদ সাকিল। তিনি বলেন, ‘পরিবার নিয়ে প্রায় ২৪ বছর ধরে ঢাকায় ছিলাম। করোনায় বাস চলে না, আয় নেই। আর তো পারছি না এই শহরের খরচ চালাতে। তাই শরিয়তপুরে নিজ বাড়িতে চলে যাচ্ছি। ওখানে গিয়ে টাকার ব্যবস্থা করে ভাড়া পরিশোধ করব।’
Comments