মন্দাবস্থায়ও ব্যাংকগুলোর প্রত্যাশার চেয়ে মুনাফা বেশি

করোনা মহামারির কারণে ব্যবসায়িক মন্দা সত্ত্বেও ২০২১ সালের প্রথমার্ধে বাংলাদেশের ব্যাংকগুলো অধিক পরিমাণে পরিচালন মুনাফা আয় করেছে।
স্টার ফাইল ছবি

করোনা মহামারির কারণে ব্যবসায়িক মন্দা সত্ত্বেও ২০২১ সালের প্রথমার্ধে বাংলাদেশের ব্যাংকগুলো অধিক পরিমাণে পরিচালন মুনাফা আয় করেছে।

দেশের ২০টি ব্যাংকের কাছে থেকে এই তথ্য পাওয়া গেছে।

ব্যাংক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, আমানতের ওপর স্বল্প সুদের হারের বিপরীতে ঋণের সুদের হার বেশি হওয়ায় ব্যাংকগুলোকে জানুয়ারি-জুন সময়কালে অধিক পরিমাণে পরিচালন মুনাফা আয় করতে সহায়তা করেছে।

এই সময়ে শেয়ারবাজারে ভালো আয় হওয়ায় দেশের ও পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করে ভালো ধরনের আয় করেছে ব্যাংকগুলো।

বৈদেশিক বাণিজ্যেও ভালো অবস্থানে রয়েছে ব্যাংকগুলো। রপ্তানি ও আমদানি বাড়ায় সেখান থেকে ভালো কমিশন ও ফি পেয়েছে ব্যাংকগুলো।

বাংলাদেশ ব্যাংকের কয়েকজন কর্মকর্তা বলেছেন, কিছু ব্যাংক বছরের প্রথমার্ধে ঋণ থেকে কোনো কিস্তি না পেয়েও সেখান থেকে আয় দেখিয়েছে।

ব্যাংকগুলোকে প্রথম প্রান্তিকে ঋণগ্রহীতাদের মুলতুবি সহায়তা দেওয়ার অনুমতি দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এর অর্থ হলো ঋণগ্রহীতারা ঋণ পরিশোধে ব্যর্থ হলেও ঋণ খেলাপি হিসেবে ধরা হবে না।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এক কর্মকর্তা জানান, এমন পরিস্থিতিতে ব্যাংকগুলো সম্ভবত অনাদায়ী ঋণ থেকে অনাদায়ী ঋণের সুদ মুনাফা দেখিয়েছে।

ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ বছরের প্রথমার্ধে সর্বাধিক মুনাফা করেছে এক হাজার ২০ কোটি টাকা। গত বছরের একই সময়ে এই মুনাফার পরিমাণ ছিল এক হাজার সাত কোটি টাকা।

ডাচ-বাংলা ব্যাংকের মুনাফা এক বছরে ২১ শতাংশ বেড়ে ৫০৪ কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে।

মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘ব্যবসায়িক মন্দার কারণে প্রথম ছয় মাসে ঋণ এবং আমানতের সুদের হার উভয়ই কমে গেছে।’

তবে, ঋণের হারের চেয়ে সঞ্চয়ের সুদ হার বেশি কমে যাওয়ায় ব্যাংকগুলো অধিক মুনাফা আয় করতে পেরেছে।

অনেক ব্যাংক এখন তিন থেকে চার শতাংশ সুদে আমানত সংগ্রহ করছে। অন্যদিকে, তারা সাত থেকে আট শতাংশ সুদে ঋণ দিচ্ছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ঋণ এবং আমানতের মধ্যে মে মাসে সুদের হারের ব্যবধান দাঁড়িয়েছে তিন দশমিক দুই ছয় শতাংশ। এক বছর আগে এই ব্যবধান ছিল দুই দশমিক নয় চার শতাংশ।

সৈয়দ মাহবুবুর রহমান জানান, বেসরকারি খাতের ঋণের প্রবৃদ্ধি কমে যাওয়ার পরেও ব্যাংকগুলো প্রত্যাশার তুলনায় অনেক বেশি মুনাফা করেছে।

এপ্রিল মাসে বেসরকারি খাতে ঋণের প্রবৃদ্ধি আট দশমিক আট শতাংশ দাঁড়ায়। গত বছরের একই সময়ে এই হার ছিল আট দশমিক দুই শতাংশ।

মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘কিছু ব্যাংক আয়ের সঙ্গে তাদের অনর্জিত সুদ যুক্ত করায় মুনাফা বেড়ে থাকতে পারে।’

ঢাকা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এমরানুল হক জানান, বছরের প্রথমার্ধে রপ্তানি ও আমদানি থেকে ব্যাংকগুলোর আয় উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বেড়েছে।

‘এটি ব্যাংকগুলোকে অধিক পরিমাণে আয় করতে সহায়তা করেছে’, বলেন তিনি।

মহামারি সত্ত্বেও দেশে ব্যাপক অবকাঠামো নির্মাণ কাজ চলছে।

এমরানুল হক বলেন, ‘এই প্রকল্পগুলোতে ব্যাংকগুলোর ঋণ অত্যন্ত সুরক্ষিত এবং এই খাত থেকে তারা অনেক আয় করেছে।’

সাউথইস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম কামাল হোসেন বলেন, ‘তাদের ব্যাংক সম্প্রতি পরিচালন ব্যয় কমিয়েছে, যা মুনাফা বাড়াতে সাহায্য করেছে।’

ব্যাংকটির মুনাফা ৩৮ শতাংশ বেড়ে ৪৭২ কোটি টাকা হয়েছে।

তিনি অধিক মুনাফার জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মুলতুবি দেওয়ার বিষয়টি উল্লেখ করেন।

যমুনা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মির্জা ইলিয়াস উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘সেকেন্ডারি বন্ড মার্কেটে বিনিয়োগে তাদের ব্যাংকের মুনাফা বেড়েছে।’

ব্যাংকটির মুনাফা ১৫ শতাংশ বেড়ে ৩০১ কোটি টাকা হয়েছে। তারা সেকেন্ডারি বন্ড বাজারে ১০ হাজার কোটি টাকার বেশি বিনিয়োগ করেছে।

পূবালী ব্যাংকের অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ আলী বলেন, ‘মহামারির সময় তাদের ব্যাংক মুনাফাকে ভালো অবস্থানে রাখতে বিভিন্ন ব্যবস্থাগ্রহণ করেছিল।’

পূবালী ব্যাংকের মুনাফা ২৫ দশমিক চার তিন শতাংশ বেড়ে ৫০৩ কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে।

বাংলাদেশে ৬০টি ব্যাংক রয়েছে।

প্রতিবেদনটি ইংরেজি থেকে অনুবাদ করেছেন সুমন আলী

Comments

The Daily Star  | English

Three difficult choices to heal economy

Bangladesh yesterday made three major decisions to cushion the economy against critical risks such as stubborn inflation and depletion of foreign currency reserves.

3h ago