ন্যাজাল ক্যানুলার সংকট সমাধান হবে কবে

প্রতীকী ছবি

দেশের খুলনা ও রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মতো অধিকাংশ জেলা হাসপাতালগুলো বর্তমানে রোগীতে পূর্ণ হয়ে গেছে এবং করোনা রোগীদের চিকিৎসা দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। এর পেছনে প্রধান কারণ হলো পঞ্চগড় ও ফরিদপুর ছাড়া সেন্ট্রাল অক্সিজেন প্ল্যান্ট থাকা সব জেলাগুলোতে যারা করোনা আক্রান্ত হয়ে গুরুতর অবস্থায় রয়েছেন, তাদের হাই ফ্লো অক্সিজেন প্রয়োজন। কিন্তু, জীবনরক্ষাকারী হাই ফ্লো ন্যাজাল ক্যানুলার সংকটের কারণে এই হাসপাতালগুলো তা দিতে পারছে না।

দ্য ডেইলি স্টারের প্রতিবেদন অনুযায়ী, সারাদেশে ব্যবহৃত এক হাজার ৭১৪টি  হাই ফ্লো ন্যাজাল ক্যানুলার মধ্যে এক হাজার ৫৯টি শুধু ঢাকাতেই রয়েছে। কমপক্ষে দেশের ৫৬টি হাসপাতালে পাঁচটিরও কম হাই ফ্লো ন্যাজাল ক্যানুলা রয়েছে এবং ১৫টি হাসপাতালে কোনো হাই ফ্লো ন্যাজাল ক্যানুলা নেই। তবে, প্রায় প্রতিটি হাসপাতালে অক্সিজেন সরবরাহের জন্যে সেন্ট্রাল অক্সিজেন প্ল্যান্ট রয়েছে।

সরকারি স্বাস্থ্যসেবাকে অতিরিক্ত মাত্রায় কেন্দ্রীয়করণ করার কারণে কিছু কিছু জেলায় পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। হাই ফ্লো অক্সিজেনের অভাবে অনেকে মারা যাচ্ছেন। বগুড়ার মোহাম্মদ আলী জেলা হাসপাতালে আটটি আইসিইউ বেড থাকলেও ২ জুলাই ছয় জন করোনা রোগী মারা যায়। হাসপাতালটিতে মাত্র দুটি হাই ফ্লো ন্যাজাল ক্যানুলা ছিল। এই মৃত্যুর সংবাদ ছড়িয়ে পড়ার পর হাসপাতালটি ব্যক্তিগত দাতাদের কাছ থেকে আরও ১৭টি নতুন হাই ফ্লো ন্যাজাল ক্যানুলা পেয়েছে।

বিনয়ের সঙ্গে প্রশ্ন করা যায় যে, বাজারে যদি হাই ফ্লো ন্যাজাল ক্যানুলার সরবরাহ থাকে, তবে, কর্তৃপক্ষ যে হাসপাতালগুলোতে বেশি প্রয়োজন সেই হাসপাতালগুলোর জন্যে হাই ফ্লো ন্যাজাল ক্যানুলা সংগ্রহে ক্ষমতার সর্বোচ্চ ব্যবহার কেন করছে না? ন্যাজাল ক্যানুলার সংকটের বিষয়টি অনেক পীড়াদায়ক। কারণ আগের বছর স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের উন্নয়ন বাজেটের দিকে তাকালে দেখা যাবে যে, স্বাস্থ্য খাতের ২৪ শতাংশ উন্নয়ন বাজেট অব্যবহৃত ছিল। মহামারির মধ্যে জীবনরক্ষাকারী চিকিত্সা সরঞ্জামে বিনিয়োগের এই ব্যর্থতার কারণে এখন সাধারণ নাগরিকদের জীবন দিতে হচ্ছে।

এখনো ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের ব্যাপক সংক্রমণের কারণে পুনরায় কোভিড-১৯ সংকটের মাঝামাঝি সময়ে আমরা কর্তৃপক্ষের একই ধরনের অলসতা ও নিষ্ক্রিয়তা দেখতে পাচ্ছি। দুই মাসেরও বেশি সময় আগে বুয়েট গবেষকদের একটি দল স্বল্প দামের পোর্টেবল ভেন্টিলেটর তৈরি করেছে, যা রোগীদের বিদ্যুৎ ছাড়াই কার্যকরভাবে অক্সিজেন সরবরাহ করতে পারে। অক্সিজেট সি-প্যাপ নামক এই ডিভাইসটি ইতোমধ্যে ফিল্ড-টেস্ট করা হয়েছে এবং ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের জন্যে অনুমোদন পেয়েছে। জরুরি অবস্থার ক্ষেত্রে (বর্তমানে জেলা হাসপাতালে যেমন ঘটছে) এটি অক্সিজেন সরবরাহে হাই ফ্লো ন্যাজাল ক্যানুলার বিকল্প হিসেবে ব্যবহার করা যেতে পারে। তবে, প্রতিবেদন অনুসারে, বুয়েট তাদের যন্ত্রটি উৎপাদনের জন্য ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের কাছে কোনো অনুমোদন পায়নি। কারণ এটি কোনো উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান কর্তৃক তৈরি হয়নি! হাইকোর্ট তিন দিন আগে এই বিষয়ে হস্তক্ষেপ করে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় (পিএমও) ও অ্যাটর্নি জেনারেলকে অক্সিজেট সম্পর্কে অবহিত করতে বলেন।

মহামারির প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রে স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষের নেওয়া সিদ্ধান্তগুলো পুনরায় সক্রিয় করতে হয়েছে। তীব্র ও অসংলগ্ন উদ্যোগগুলো কেবল তখনই সমাধান হয়, যখন একটি সংকটের উত্থান ঘটে। এমনকি এই উদ্যোগগুলো প্রায়শই বিলম্বিত হয়। দেশের মানুষ এমন একটি স্বাস্থ্য খাতের প্রত্যাশা করে, যা কোনো সংকটের জন্যে অপেক্ষা না করে যেকোনো সংকট মোকাবিলা করত পারবে। ন্যাজাল ক্যানুলা সংকটের সমাধান করতে কর্তৃপক্ষ ইতোমধ্যে অনেক দেরি করেছে। আর কোনো জীবন হারাতে হবে না, এই সমাধান নিশ্চিত করতে তারা আর এক সেকেন্ডও অপচয় করতে পারে না।

Comments

The Daily Star  | English
Anti-Terrorism Act

Banning party activities: Govt amends anti-terror law

The interim government is set to bring the curtain down on the Awami League as a functioning political party.

3h ago