পরিস্থিতি করুণতম: স্বাস্থ্য অধিদপ্তর

robed_amin_11july21.jpg
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মুখপাত্র অধ্যাপক ডা. মো. রোবেদ আমিন

স্বাস্থ্যবিধি পালনে উদাসীন হলে দেশে করোনা পরিস্থিতির আরও অবনতি হতে পারে বলে আশঙ্কা করছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। আজ বুধবার দুপুরে করোনার সর্বশেষ পরিস্থিতি নিয়ে আয়োজিত ভার্চুয়াল বুলেটিনে অধিদপ্তরের মুখপাত্র অধ্যাপক ডা. মো. রোবেদ আমিন এ কথা বলেন।

তিনি বলেন, গত বছর থেকে বিভিন্ন ধরনের ভ্যারিয়েন্ট অব ইন্টারেস্ট ও ভ্যারিয়েন্ট অব কনসার্ন নিয়ে বাংলাদেশ সংগ্রাম করে যাচ্ছে। আমরা পর্যবেক্ষণ করছি, বর্তমান সময়ের করুণতম পরিস্থিতির উপক্রমে আমরা চলে এসেছি। যেখানে সংক্রমণের মাত্রা ও মৃত্যু ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছে। আমরা সক্ষমতা বৃদ্ধির চেষ্টা করে যাচ্ছি। এর একটি মূল জায়গা হলো টেস্ট। আমরা টেস্টের সংখ্যা বাড়ানোর চেষ্টা করছি।

ডা. রোবেদ আমিন বলেন, গত কয়েকদিন ধরে আমরা দুই শ-এর উপরে মৃত্যু দেখতে পাচ্ছি। এক দিনে শনাক্তের হারও অনেক বেশি এখন প্রায় ২৯ দশমিক ২১ শতাংশ। প্রথম থেকে হিসাব করলে ১৪ দশমিক ৮৪ শতাংশ। আমাদের মৃত্যুর হারও বাড়ছে। গত দুই সপ্তাহে ঢাকায় এবং খুলনায় সবচেয়ে বেশি মৃত্যু হয়েছে। প্রথম থেকে হিসাব করলে মৃত্যুর হার সবচেয়ে বেশি ঢাকা ও চট্টগ্রামে। সংক্রমণের মাত্রা বরিশাল ও চট্টগ্রামে সবচেয়ে বেশি।

তিনি বলেন, বরিশালে গত এক সপ্তাহে শনাক্তের হার সবচেয়ে বেশি। গত এক সপ্তাহে ১১৪ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। চট্টগ্রামে ৭৭ শতাংশ বেড়েছে। ঢাকায় অন্যান্য বিভাগের চেয়ে সংক্রমণ ২৫ শতাংশ কম। রাজশাহীতে সংক্রমণ সবচেয়ে কম যেখানে চাঁপাইনবাবগঞ্জের মাধ্যমে প্রথমে রাজশাহীতে আমরা সংক্রমণের ঢেউ দেখেছিলাম। সেখানে এখন সংক্রমণ মাত্র ১৫ শতাংশ। এর কারণ হিসেবে চাঁপাইনবাবগঞ্জকে আদর্শ বলা হচ্ছে। সামগ্রিকভাবে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে যে পদ্ধতি গ্রহণ করা হয়েছিল, প্রশাসন সহায়তা করেছে এবং প্রান্তিক মানুষ স্বাস্থ্যবিধি পালন করেছে— দুই থেকে তিন সপ্তাহের স্থানীয় কঠোর লকডাউনের মাধ্যমে তারা ৭২ শতাংশ থেকে সংক্রমণের হার ১৩ শতাংশে নামিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছে। এটি প্রমাণ করে যেসব নির্দেশনা দেওয়া হচ্ছে তা কঠোরভাবে পালন করলে সংক্রমণের মাত্রা কমিয়ে আনা সম্ভব। সারা বাংলাদেশে গত সাত দিনের চিত্রে দেখা যাচ্ছে, কিছুটা হলেও যেসব উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে তার মাধ্যমে সংক্রমণের মাত্রা ৩২ শতাংশ থেকে ২৯ শতাংশে নেমে এসেছে।

জুলাই মাস অত্যন্ত কঠিন মাস। জুনে এক লাখ ১২ হাজার ৭১৮ রোগী শনাক্ত করা হয়েছিল। জুলাইয়ের ১৪ দিনে আমরা এত রোগী পেয়ে গেছি। এই মাসের আরও ১৬ দিন বাকি আছে। যেহেতু সংক্রমণের মাত্রা এখন অনেক বৃদ্ধি পাচ্ছে, স্বাস্থ্যবিধি ও প্রতিরোধে ব্যবস্থা যদি না নেওয়া হয়, দুই সপ্তাহ পর্যন্ত কিন্তু টানা এভাবে চলতে পারে। মৃত্যু তিন সপ্তাহ পর্যন্ত এভাবে চলতে পারে। হাসপাতালে যদি আর নতুন রোগীকে জায়গা দেওয়া না যায় তাহলে আমরা সবাই বিপদে পড়ে যাব, বলেন ডা. রোবেদ আমিন।

তিনি আরও বলেন, সরকারের নির্দেশে পবিত্র ঈদুল আজহাকে সামনে রেখে চলমান বিধি-নিষেধ ১৫ থেকে ২২ জুলাই আট দিনের জন্য শিথিল করা হয়েছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তর মনে করে এই বিধি-নিষেধ শিথিল করা সাপেক্ষে আমাদের সংক্রমণ বৃদ্ধি হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা আছে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে যেন গণপরিবহন, বাজার ও পশুরহাট এবং শপিং মলগুলো খোলা রাখা হয় সেটা স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বারবার কঠোরভাবে বলার চেষ্টা করছে। পরিবহনে যাত্রীর সংখ্যা অর্ধেক করা না হলে সংক্রমণের মাত্রা কমার কোনো সুযোগ থাকবে না। ঢাকায় ১৭ থেকে ২১ জুলাই পর্যন্ত কোরবানির পশুরহাট বসবে, সেখানে স্বাস্থ্যবিধি না মানলে সংক্রমণ বাড়তে পারে। তাই বিধি-নিষেধ শিথিল করা হোক বা না হোক, আমাদের ব্যক্তিগত স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতেই হবে।

shamsul_haque_14july21.jpg
ভ্যাকসিন ডেপ্লয়মেন্ট কমিটির সদস্য সচিব ডা. শামসুল হক

ভার্চুয়াল স্বাস্থ্য বুলেটিনে অংশ নিয়ে ভ্যাকসিন ডেপ্লয়মেন্ট কমিটির সদস্য সচিব ডা. শামসুল হক বলেন, বিদেশে আমাদের অনেক ছেলে-মেয়ে পড়ালেখা করেন। করোনার কারণে তারা দেশে ফিরে এসেছেন। তাদের ভ্যাকসিনের রেজিস্ট্রেশনের জন্য একটি পরিপত্র পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে আমাদের হাতে এসেছে। বিদেশে অধ্যায়ণরত এসব শিক্ষার্থীদের করোনা রেজিস্ট্রেশনের আবেদন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় গ্রহণ করবে। তাদের ছাত্রত্ব প্রমাণের প্রয়োজনীয় কাগজপত্র এবং পাসপোর্ট ও ভিসার কপি ২৭ জুলাইয়ের মধ্যে ইমেইল করতে হবে।

ডা. শামসুল হক আরও বলেন, পৃথিবীর প্রায় সব দেশেই ফাইজার, মডার্না, অ্যাস্ট্রাজেনেকা ও জনসন— এই চারটা ভ্যাকসিনই গ্রহণযোগ্য। প্রবাসীকর্মী যারা জনশক্তি ব্যুরোর মাধ্যমে ভ্যাকসিন পেতে নিবন্ধন করেছেন, এই চারটি ভ্যাকসিনের যে কোনো একটি গ্রহণ করে বিদেশে গেলে কোয়ারেন্টিন থাকতে হবে না। সৌদি আরবে যারা যাচ্ছেন তাদের জন্য এই চারটি ভ্যাকসিন প্রযোজ্য। সৌদি গেজেট থেকে একটি তথ্য আমাদের কাছে এসেছে, সিনোফার্মের ভ্যাকসিন নিয়েও তাদের দেশে যাওয়া যাবে।

তিনি বলেন, অনেক জায়গায় ফাইজারের টিকা শেষ হয়ে যাওয়ায় আমরা মডার্নার টিকা সরবরাহ করেছি। অনেক জায়গায় সেই টিকা দেওয়া শুরু হয়েছে, বাকি কেন্দ্রেগুলোতে দুএক দিনের মধ্যে শুরু হবে। আমাদের বিদেশগামী ভাইয়েরা সেই টিকা নিচ্ছেন না। এতে আমাদের সিস্টেমে ঝামেলা হয়ে যাবে। ফাইজারের যে ভ্যাকসিন ছিল, দ্বিতীয় ডোজ সংরক্ষণ করে আমরা প্রথম ডোজ বিতরণ করেছি। ইতোমধ্যে সব কেন্দ্রে পৌঁছেও গেছে। ফাইজারের টিকা শেষ হয়ে যাওয়ার পরে মডার্নার টিকা চালু করায় শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে প্রবাসীকর্মীরা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করেছেন। আমরা মডার্নার ভ্যাকসিন দেওয়ার জন্য প্রস্তুত আছি, আপনারা মডার্নার ভ্যাকসিন নেবেন।

আমরা আরও অনুরোধ করবো, যাদের বিদেশে যাওয়ার দেরি আছে তারা পরে নিবন্ধন করবেন। আমাদের মধ্যে সংশয় কাজ করতে পারে কোন ভ্যাকসিন ভালো। সব ভ্যাকসিনই ভালো, কোনোটাই কোনোটার চেয়ে বেটার না— বলেন ডা. শামসুল হক।

Comments

The Daily Star  | English

Students to resist AL event today

The student movement against discrimination will hold a mass gathering at Zero Point in the capital’s Gulistan today, demanding trial of the Awami League.

3h ago