পা রাখার জায়গা নেই পাবনায় পশুর হাটে

পাবনা শহরের পুরনো পশুর হাট হাজিরহাটের প্রবেশ মুখ থেকেই ভিড় শুরু। ছবি: স্টার

পাবনা শহরের বাসিন্দা কলেজ শিক্ষক রফিকুল ইসলাম শুক্রবার বিকেলে কোরবানির পশু কেনার জন্য শহরের পুরনো পশুর হাট হাজিরহাটে গিয়েছিলেন। কিন্তু, ভিড়ের কারণে হাটে ঢুকতে না পেরে, পশু না কিনেই বাড়ি ফিরেছেন তিনি।

আজ শনিবার রফিকুল ইসলাম দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, হাটের প্রবেশ মুখে ছাগলের হাট বসায়, রাস্তা থেকেই ভিড় শুরু হয়। হাটের প্রায় এক কিলোমিটার আগে থেকেই ভিড় ছিল। মানুষের চাপে হাটের প্রবেশ মুখে পা পর্যন্ত রাখার জায়গা ছিল না বলে জানান তিনি।

করোনা মহামারি উপেক্ষা করে হাটে মানুষের ঢল দেখে আতঙ্কিত হয়ে বাড়ি ফিরে এসেছিলেন তিনি। তিনি জানান, হাটে অধিকাংশ মানুষের মুখেই মাস্ক ছিল না, স্বাস্থ্যবিধির বালাই নেই। এ অবস্থা দেখে হাটে ঢোকার সাহস করতে পারেননি তিনি।

পাবনার পশুর হাটগুলোতে স্বাস্থ্যবিধির তোয়াক্কা করছে না কেউ। ছবি: স্টার

এই প্রতিবেদক গত তিন দিনে পাবনার তিনটি পশুর হাটে সরেজমিনে গিয়ে কোরবানির পশু কেনার জন্য মানুষের উপচে পড়া ভিড় দেখতে পেয়েছেন। কোথাও স্বাস্থ্যবিধির তোয়াক্কা করছে না কেউ।পাবনা সদর উপজেলার হাজির হাট, পুস্পপাড়া হাট এবং ঈশ্বরদী উপজেলার আওতাপারা হাট ঘুরে দেখা যায়, ব্যবসায়ীরা গাদাগাদি করে হাটে পশু আমদানি করছে। ক্রেতারা হুড়োহুড়ি করে পছন্দের পশু কিনতে হাটে হুমড়ি খেয়ে পড়ছে। এতে পশুর হাটগুলো জনসমুদ্রে পরিণত হয়েছে।

হাজিরহাটের ইজারার টাকা সংগ্রহকারী কামরুল ইসলাম দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘হাটে স্বাস্থ্যবিধি মেনে মাস্ক পরে প্রবেশ করতে এবং অতিরিক্ত ভিড় না করতে প্রতিনিয়ত মাইকিং করা হচ্ছে। তবে, ক্রেতা বিক্রেতাদের উপচে পড়া ভিড়ের কারণে এগুলো মেনে চলতে সমস্যা হচ্ছে।’

কামরুল জানান, একটি গরু বা একটি ছাগল কেনার জন্য অধিকাংশ ক্রেতা কমপক্ষে পাঁচ থেকে ছয় জন লোক নিয়ে হাটে আসে। ফলে, হাটে দুই হাজার পশু থাকলে ১০ হাজারের বেশি মানুষের সমাগম হয়।

ঈদের আগের শুক্রবার গতকাল হাটে বেশি জনসমাগম হয়েছে এবং এদিন অন্তত দুই হাজার গরু ও ছাগল বিক্রি হয়েছে জানিয়ে কামরুল বলেন, ‘হাট কর্তৃপক্ষ প্রতিনিয়ত ক্রেতা বিক্রেতাদের সচেতন করার চেষ্টা করলেও, অতিরিক্ত মানুষের চাপে তা করা সম্ভব হয়ে উঠছে না।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে পাবনা জেলা প্রশাসনের স্থানীয় সরকার বিভাগের উপপরিচালক মখলেছুর রহমান দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘করোনা মহামারির এই কঠিন পরিস্থিতিতে স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে ১৯টি শর্ত পূরণ করে পশুর হাট পরিচালনার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।’

পাবনা জেলায় এ বছর ২৬টি পশুর হাটের অনুমতি দেওয়া হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘প্রতিটি হাট কর্তৃপক্ষকে কঠোরভাবে স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করার নির্দেশনা দেওয়া হলেও, বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই কেউই তা মানছে না।’

তিনি আরও বলেন, ‘প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রতিটি হাটে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী দায়িত্ব পালন করছে। এছাড়া, ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হচ্ছে। চেষ্টা করা হচ্ছে বিধিনিষেধ মেনে যেন হাট পরিচালনা হয়।’

‘কিন্তু, কেবল প্রশাসন চেষ্টা করলেই তা সম্ভব হবে না, জনসাধারণকেও তাদের নিজেদের নিরাপত্তার কথা ভেবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে,’ বলেন তিনি।

পাবনার পুলিশ সুপার মুহিবুল ইসলাম খান দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘কোরবানির পশুর হাটে আইন শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণ করার জন্য জেলা পুলিশ প্রতিটি হাটে পুলিশ মোতায়েন করেছে। পাশাপাশি স্বাস্থ্যবিধি মেনে হাট পরিচালনা করতে জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে প্রতিটি হাটের সামনে নির্দেশনাসহ ব্যানার রাখা হয়েছে।’

পাবনার সিভিল সার্জন ডা. মনিসর চৌধুরী দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘সাধারণ মানুষের অসচেতনতার কারণে করোনা পরিস্থিতি এত ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। প্রতিদিন আক্রান্ত ও মৃত্যুর নতুন নতুন রেকর্ড সৃষ্টি হচ্ছে তারপর মানুষ সচেতন হচ্ছে না।’

‘ঈদের আগে পশুর হাট গুলোতে যেভাবে মানুষ উপচে পড়ছে, এতে ঈদের পরের স্বাস্থ্যঝুঁকি নিয়ে আতঙ্কিত হওয়া ছাড়া করার কিছুই নেই,’ বলেন সিভিল সার্জন।

এ অবস্থা থেকে বাঁচতে সবাইকে সচেতন হয়ে স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করার আহবান জানান তিনি।

 

Comments

The Daily Star  | English

Students to resist AL event today

The student movement against discrimination will hold a mass gathering at Zero Point in the capital’s Gulistan today, demanding trial of the Awami League.

3h ago