রহমান: এদেশের সিনেমার প্রথম রোমান্টিক নায়ক

ঢাকাই সিনেমার স্বর্ণালী দিনের সাড়া জাগানো নায়ক রহমান। ষাটের দশক ছিল তার দখলে। সত্তরের দশকজুড়ে তিনি ঢাকাই সিনেমায় রাজত্ব করেছেন। এমনকি আশির দশকেও চলচ্চিত্রে সরব ছিলেন তিনি।
নায়ক রহমান। রহমান ও শবনম জুটি অভিনীত একটি সিনেমার দৃশ্য। ছবি: সংগৃহীত

ঢাকাই সিনেমার স্বর্ণালী দিনের সাড়া জাগানো নায়ক রহমান। ষাটের দশক ছিল তার দখলে। সত্তরের দশকজুড়ে তিনি ঢাকাই সিনেমায় রাজত্ব করেছেন। এমনকি আশির দশকেও চলচ্চিত্রে সরব ছিলেন তিনি।

পাশাপাশি উর্দু সিনেমাতেও নায়ক হিসেবে সফল হয়েছিলেন রহমান। অভিনয় করেছেন পশতু ভাষার চলচ্চিত্রেও।

রহমান ও শবনম জুটি ছিল সে সময়ের সবচেয়ে সেরা রোমান্টিক জুটি। বলা হয়ে থাকে ঢাকাই সিনেমার প্রথম রোমান্টিক নায়ক রহমান।

রহমানের অভিনীত এহতেশাম পরিচালিত রাজধানীর বুকে চলচ্চিত্রের একটি গান এখনো অনেকের মুখে মুখে ফেরে। গানটি হচ্ছে, ‘তোমারে লেগেছে এত যে ভালো, চাঁদ বুঝি তা জানে’। এই সিনেমাতেও রহমানের নায়িকা ছিলেন শবনম।

রাজধানীর বুকে চলচ্চিত্রটি অভাবনীয় সাড়া ফেলে সিনেমাপ্রেমীদের মাঝে। রহমান নায়ক হিসেবে এগিয়ে যান অনেক দূর। তার ব্যস্ততা বাড়তে থাকে।

রহমান অভিনীত আরেকটি সাড়া জাগানো ছবির নাম হারানো দিন। মুস্তাফিজ পরিচালিত এই সিনেমাতেও তার নায়িকা ছিলেন শবনম। গ্রামের গরিব ঘরের সন্তান কামাল চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন তিনি। শবনম অভিনয় করেছিলেন মালা চরিত্রে। মালা ছিলেন জমিদারের স্ত্রী। পরে প্রেম হয় কামালের সঙ্গে।

হারানো দিন সিনেমার একটি গান গেয়েছিলেন প্রখ্যাত সংগীতশিল্পী ফেরদৌসী রহমান। গানটি হলো, বুঝি না মন যে দোলে বাঁশির সুরে । গানের দৃশ্যে অভিনয় করেছিলেন রহমান ও শবনম। এই সিনেমার আরেকটি গানও খুব জনপ্রিয়তা পেয়েছিল। সেটা হচ্ছে- আমি রূপনগরের রাজকন্যা রূপের জাদু এনেছি।

হারানো দিন সিনেমাটি রহমানের ক্যারিয়ারকে উজ্জ্বল করেছিল।

বাংলা চলচ্চিত্রের এই রোমান্টিক নায়কের পুরো নাম ছিল আবদুর রহমান। ১৯৫৭ সালে বাড়ি থেকে পালিয়ে ঢাকা শহরে চলে এসেছিলেন তিনি। অভিনয়ের নেশা পেয়ে বসেছিল তাকে। অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে দেখা পেয়ে যান পরিচালক এহতেশামের। এরপর ভাগ্য তাকে বরণ করে নেয়।

এহতেশামের পরিচালনায় রহমানের জীবনে প্রথম অভিনয় করার সুযোগ আসে এ দেশ তোমার আমার ছবিতে। সিনেমাটি মুক্তি পায় ১৯৫৯ সালে। অবশ্য সেখানে তিনি খল চরিত্রে অভিনয় করেন।

পরে খলনায়ক থেকে নায়ক বনে যান তিনি। নায়ক হিসেবেই তার জনপ্রিয়তা গড়ে উঠে তৎকালীন পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানে। কারণ তিনি একইসঙ্গে বাংলা এবং উর্দু চলচ্চিত্রে অভিনয় করতেন।

রহমানের অভিনয় ক্যারিয়ারকে নায়ক হিসেবে সমৃদ্ধ করার মতো আরেকটি চলচ্চিত্র জোয়ার ভাটা। এটি পরিচালনা করেন খান আতাউর রহমান। এখানেও রহমানের নায়িকা ছিলেন শবনম। এই চলচ্চিত্রের একটি গান ভীষণভাবে নাড়া দিয়েছিল দর্শকদের। গানটি হচ্ছে- মন যদি ভেঙে যায় যাক যাক কিছু বলব না। গানটিতে কণ্ঠ দিয়েছিলেন সাবিনা ইয়াসমিন।

রহমান ও শবনম জুটির সবচেয়ে আলোচিত সিনেমার নাম তালাশ। এটি ছিল রোমান্টিক ঘরানার সিনেমা। পরিচালনা করেছিলেন মুস্তাফিজ।

জহির রায়হান পরিচালিত বাহানা নামের উর্দু চলচ্চিত্রটি মুক্তি পায় ১৯৬৫ সালে। এর নায়ক ছিলেন রহমান। নায়িকা ছিলেন কবরী।

ঢাকাই চলচ্চিত্রে রহমানই প্রথমবারের মতো নায়ক থেকে পরিচালক হিসেবে যাত্রা শুরু করেন। তার পরিচালিত প্রথম চলচ্চিত্র দরশন। এখানেও তার নায়িকা হিসেবে ছিলেন শবনম।

রহমান অভিনীত আরও কয়েকটি উল্লেখযোগ্য চলচ্চিত্র হচ্ছে- যে নদী মরু পথে, দেবদাস, অংশীদার,স্বর্গ নরক, নিকাহ, ইত্যাদি ।

অংশীদার চলচ্চিত্রটি পরিচালনা করেন দীলিপ বিশ্বাস। এই ছবিতে রহমানের বিপরীতে নায়িকা হিসেবে অভিনয় করেছিলেন আনোয়ারা। রেকর্ড পরিমাণ ব্যবসা করেছিল সিনেমাটি। অংশীদার সিনেমায় ব্যবহৃত ‘তোমারই পরশে জীবন আমার ওগো ধন্য হলো’ গানটি বহুদিন মানুষের মুখে মুখে ফিরেছে।

এ ছাড়া রহমান অভিনীত আলোচিত উর্দু সিনেমাগুলোর মধ্যে আছে- বাহানা, চান্দা, তালাশ, প্যায়াসা, ইত্যাদি।

প্রীত না জানে রীত নামের একটি সিনেমার শ্যুটিং করতে গিয়ে দুর্ঘটনার শিকার হন রহমান। এতে একটি পা হারিয়ে ফেলেন তিন। সেই থেকে থেমে যেতে শুরু করে তার নায়ক জীবনের পথচলা। ভেঙে পড়েন রহমান। দুঃসময় ভিড় করে তার জীবনে।

এ অবস্থা কাটিয়ে উঠতে বেশ সময় লেগেছিল রহমানের। পরে কৃত্রিম পা লাগিয়ে আবার অভিনয় শুরু করেন তিনি। তার অভিনীত শেষ চলচ্চিত্র আমার সংসার। ছবিটি পরিচালনা করেন রবিন ঘোষ।

রহমান কেবল বাংলা সিনেমার রোমান্টিক নায়ক হিসেবে সফল ছিলেন তা নয়। পাকিস্তানের উর্দু ও পশতু ভাষার চলচ্চিত্রে অভিনয় করেও জনপ্রিয়তা পেয়েছিলেন তিনি।

২০০৫ সালে আজকের দিনে তিনি পৃথিবী ছেড়ে চলে যান।

Comments

The Daily Star  | English
Preparing for Ramadan's Price Shocks

Power price to go up 4 times a year

The government has drawn up a plan to increase the price of electricity four times a year for the next three years to withdraw all subsidies in the power sector, which the IMF recommends.

48m ago