অবিক্রীত পশু নিয়ে বিপাকে খামারিরা
জুলাইয়ের শুরু থেকে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জেলা বাগেরহাটের গরু খামারি আবুল হোসেন তিনটি গরু বিক্রির অপেক্ষায় আছেন। তিনি গত তিন বছর ধরে এগুলো পেলেছেন।
তার অপেক্ষার প্রহর অবশেষে শেষ হয়, প্রায় ৪৫ মণ ওজনের একটি গরু তিনি বিক্রি করতে পেরেছেন।
তিনি আশা করছেন, আসন্ন ঈদুল আযহার আগেই বাকি দুটি কোরবানির পশু বিক্রি করতে পারবেন। প্রতি বছর সারাদেশে জবাই হওয়া পশুর প্রায় অর্ধেকই কোরবানির সময় জবাই করা হয়।
বাগেরহাটে প্রত্যাশিত ক্রেতা খুঁজে না পেয়ে ১৬ জুলাই বড় গরুসহ দুটি গরু নিয়ে ঢাকায় আসেন। উদ্দেশ্যে বেশি দামে বিক্রি করা।
হোসেন দ্য ডেইলি স্টারকে গতকাল জানান, ‘আমি অনলাইনেও বিক্রির চেষ্টা করেছি। কিন্তু, তেমন কোনো সাড়া পাইনি।’
হোসেনের মতো এমন হাজারো খামারি মুসলিমদের দ্বিতীয় বৃহত্তম ধর্মীয় অনুষ্ঠান ঈদুল আযহার সময় অতিরিক্ত চাহিদার বিষয়টি মাথায় রেখে গবাদি পশুগুলো মোটাতাজা করেছেন। তাদের প্রত্যাশা সেগুলো বিক্রি করে বাড়তি লাভের মুখ দেখবেন।
প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের (ডিএলএস) তথ্য অনুযায়ী, এ বছর কোরবানি ঘিরে প্রায় ৭০ হাজার খামারি ৩৮ লাখ ৫৮ হাজার গবাদি পশু মোটাতাজা করেছেন।
করোনা সংক্রমণকে নিয়ন্ত্রণে সারাদেশে সরকারের দেওয়া লকডাউনের কারণে তারা আশা-নিরাশার দোলাচলে ছিলেন।
কিন্তু, গত ১৫ জুলাই থেকে ঈদের শেষ পর্যন্ত লকডাউনের বিধিনিষেধকে শিথিল করেছে সরকার। তাই, সারাদেশে কোরবানির আগে পশুর হাট বসেছে এবং খামারিদের মনে আবারও আশা জেগেছে।
লকডাউন শিথিলের পর থেকে অস্থায়ী এসব হাটে ট্রাকভর্তি পশু পরিবহন শুরু করেছেন খামারিরা। তবে, এখনো যথেষ্ট পরিমাণ ক্রেতা আসেনি হাটগুলোতে।
টাঙ্গাইল সদর উপজেলার সবচেয়ে বড় ও নিয়মিত সাপ্তাহিক হাটগুলোর একটি করটিয়া পশুর হাট। এই হাটটি সরেজমিনে দেখা গেছে, সেখানে অনেক পশু এসেছে। কিন্তু সাধারণ ও পাইকারি ক্রেতা সংখ্যা খুবই কম।
কালিহাতি উপজেলার এলেঙ্গা পশুর হাট ও সখিপুর উপজেলার এয়ারফোর্স বাজার পশুর হাটেও একই চিত্র দেখা গেছে।
এসব হাটে আসা ব্যবসায়ীরা জানান, বেশিরভাগ ক্রেতা এখন শুধু মূল্য যাচাই করতে আসছেন।
তবে, হাটে আসা ক্রেতারা দাবি করেছেন, তারা ভেবেছিলেন এ বছর করোনার কারণে পশুর মূল্য কম হবে। কিন্তু, বিক্রেতারা বেশি দাম চাইছেন।
এ ছাড়াও, অনেক প্রান্তিক খামারি জানান, তারা প্রতারণার ভয়ে অনলাইনে পশু বিক্রিতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করছেন না। তাই অনলাইনে পশু বিক্রি করতে দালাল নিয়োগ করেছেন। যারা কৃষক সেজে সম্ভাব্য ক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলেন।
টাঙ্গাইল প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর অফিসের তথ্য অনুযায়ী, কোরবানি উদ্দেশ্য করে এবার ১২ উপজেলার প্রায় এক হাজার খামারে প্রায় ৫০ হাজার পশু মোটাতাজা করা হয়েছে।
এদিকে, ক্রেতা সংকটের জন্য লকডাউনকে দায়ী করেছেন খামারিরা।
টাঙ্গাইল পৌরসভার বালুছড়া এলাকার বীণা অ্যাগ্রো ফার্মের মালিক শাহ আজিজ তালুকদার জানান, তিনি অনলাইনের মাধ্যমে পশু বিক্রির চেষ্টা করেছেন। কিন্তু, এখনো প্রত্যাশা অনুযায়ী সাড়া পাননি।
ভুঞাপুর উপজেলার সবচেয়ে বড় খামার ‘চাকদার পশু ফার্ম’র মালিক দুলাল হোসেন চাকদার জানান, অনলাইনের মাধ্যমে ক্রেতা পাওয়ার ক্ষেত্রে তিনি সফল।
তিনি আরও জানান, গত ১৫ জুলাই পর্যন্ত খামারের ২৬টি পশু বিক্রি করেছেন। ঈদকে সামনে রেখে প্রায় ১০০টি ষাঁড় ও গরুকে মোটাতাজা করেছেন তিনি।
তিনি বলেন, ‘মানুষ প্রতিদিনই অনলাইনে যোগাযোগ করছে। পাইকারি ক্রেতারাও পশুগুলো দেখতে আসছেন।’
বাগেরহাট জেলার মোল্লাহাট উপজেলার গবাদীপশু বিক্রেতা নাজমুল মোল্লা জানান, তার এক হাজার ৩২৫ কেজি ওজনের গরুটি প্রত্যাশিত ১২ লাখ টাকা দামে বিক্রি করতে পারেননি।
তিনি বলেন, ‘মানুষ এসে গরুটিকে দেখে যায়, কিন্তু কেউ কোনো দাম বলে না।’
নাজমুল গরুটিকে খাওয়ানোর পেছনে প্রায় দৈনিক সাতশ টাকা খরচ করেছেন। তিনি বলেন, ‘করোনাভাইরাস আমাদের সব আশা ও ব্যবসাকে ধ্বংস করে দিয়েছে।’
বাগেরহাটের হোসেনের ক্ষেত্রেও বিষয়টি একইরকম। তিনি গত বছর করোনার কারণে সৃষ্ট অর্থনৈতিক মন্দা ও কম চাহিদার কারণে তার গরুগুলো বিক্রি করতে পারেননি।
তবে, হোসেন ও নাজমুল আশাবাদী যে, এ বছর তারা ক্রেতা খুঁজে পাবেন। কারণ এবার তারা ধনী ক্রেতাদের আবাস ঢাকা শহরে আসছেন।
গতকাল রাত ৮টার দিকে নাজমুল তার গরু নিয়ে ফেরিতে পদ্মা পার হচ্ছিলেন। তার গন্তব্য ঢাকার বারিধারা এলাকা। হোসেন দিনের বেলা ফেরি পার হয়েছেন। তিনি ঢাকার আফতাবনগরের দিকে গেছেন।
প্রতিবেদনটি ইংরেজি থেকে অনুবাদ করেছেন মোহাম্মদ ইশতিয়াক খান
Comments