মিলছে না ন্যায্য দাম, কম দামে চামড়া বেচাকেনা

ছবি: কংকন কর্মকর/স্টার

রংপুরে কোরবানির পশুর চামড়া বেচাকেনার বাজার মন্দা অবস্থা বিরাজ করছে। এখনো জমে ওঠেনি চামড়াপট্টি। নেই চামড়ার তেমন আমদানি, নেই তেমন দাম। ব্যবসায়ীরা বলছেন, সরকার ও ট্যানারি মালিকদের বেঁধে দেওয়া দামের চেয়েও কম দামে চামড়া বিকিকিনি হচ্ছে। আর বিক্রেতাদের অভিযোগ, গুদামে গুদামে ঘুরেও মিলছে না ন্যায্য দাম। বাধ্য হয়ে কম দামেই হাত বদল হচ্ছে কাঁচা চামড়া।

আজ বৃহস্পতিবার চামড়া কেনা-বেচার জন্য বিখ্যাত রংপুর নগরের হাজীপাড়া চামড়াপট্টি এলাকা ঘুরে এসব দৃশ্য চোখে পড়েছে। চামড়ার আমদানি কম হলেও আশানুরূপ দাম না পাওয়ায় হতাশ হয়ে পড়েছে মৌসুমি ব্যবসায়ীরা।

এবার গতবারের তুলনায় রংপুরে চামড়ার আমদানি কম হয়েছে। চামড়া কেনার ব্যাপারে ব্যবসায়ীদের তেমন আগ্রহ নেই। বেশিরভাগ ব্যবসায়ী গুদাম বন্ধ করে রেখেছেন। অনেকের অভিযোগ, ট্যানারি মালিকদের সিন্ডিকেট আর লবণের দাম বেড়ে যাওয়ায় এমনটি হয়েছে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, কোরবানির পশুর চামড়া কেনাবেচা নিয়ে চামড়াপট্টিতে তেমন কোনো কর্মচাঞ্চল্য নেই। প্রায় ১০-১২ জন ফড়িয়া এবং হাতেগোনা ৩-৪ জন ব্যবসায়ী চামড়া কিনছেন। সেখানকার বেশির ভাগ গুদাম বন্ধের সঙ্গে বেড়েছে চামড়া বিমুখ ব্যবসায়ীর সংখ্যা। যারা চামড়া কেনাবেচায় আছেন, তারাও লোকসানের আশঙ্কায় শঙ্কিত।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, ট্যানারি মালিকদের কাছ থেকে বকেয়া টাকা তুলতে ব্যর্থ হয়ে অনেকেই চামড়ার ব্যবসা ধরে রাখতে পারেননি। আবার অনেকে চামড়া ব্যবসায় ঋণ না পেয়ে পুঁজির অভাবে পেশা পরিবর্তন করতে বাধ্য হয়েছেন। এখন যারা বাপদাদার এই ব্যবসা ধরে আছেন তাদের সংখ্যা হাতে গোনা কয়েকজন।

চামড়াপট্টি ঘুরে দেখা হয় বেশ কয়েকজন মৌসুমি চামড়ার ক্রেতার সঙ্গে। প্রতিবারের মতো এবারও লাভের আশায় চামড়া কিনেছিলেন মুসা মিয়া ও হেলাল হোসেন। মৌসুমি এই ব্যবসায়ীরা জানান, ঈদের দিন দুপুর থেকে নগরীর বিভিন্ন পাড়া-মহল্লা থেকে চামড়া সংগ্রহ করেছেন। কিন্তু, বিক্রি করতে এসে তাদের লোকসানের হিসেব কষতে হচ্ছে। চামড়ার আমদানি কম হওয়ার পরও দাম বেশি না পাওয়ায় হতাশ তারা।

চামড়া ক্রেতারা বলছেন, গত বছরের চেয়ে এবার আমদানি অনেক কম। শহরে কোরবানির সংখ্যা কিছুটা বেশি হলেও এবছর গ্রামে কোরবানির সংখ্যা অনেক কম। কিন্তু, চামড়ার দাম বাড়ছে না। গরুর চামড়া কেনাবেচা নিয়ে কয়েকটি গুদাম ঘরে তোড়তোড় থাকলেও খাসি ও বকরির চামড়ার তেমন চাহিদা নেই। একেকটি খাসি-বকরির চামড়ার ১০ থেকে ৫০ টাকায় কিনতে দেখা গেছে।

মৌসুমি ব্যবসায়ীরা গরুর চামড়া ২০০ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ৬০০ টাকায়, ছাগলের চামড়া ১০ থেকে ৩০ টাকা এবং ভেড়ার চামড়া ৫-১০ টাকায় কিনছেন।

চামড়াপট্টিতে ভ্যানে গরুর চামড়া বিক্রি করতে আসা হুমায়ুন কবির দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘৯১ হাজার টাকায় কেনা গরুর চামড়া বিক্রি করেছি ৬০০ টাকায়। আর ছাগলের চামড়ার কেউ দামই বলে না।’

একই অভিযোগ নাহিদুল ইসলাম নামে আরেক বিক্রেতার। তিনি বলেন, ‘৭১ হাজার টাকায় কেনা গরুর চামড়া বিক্রি করেছি ৩০০-৪০০ টাকার বেশি কেউ দাম করছে না। অথচ বাসায় ওই চামড়া ৮০০ টাকা দাম করেছেন একজন ফড়িয়া।’ 

চামড়াপট্টি এলাকার বড় ব্যবসায়ী আফজাল হোসেন, মাহবুবার রহমান বেলাল, মুরাদ খাঁন, আব্দুল লতিফ খাঁন, আজগর আলী, ইকবাল হোসেন, সালেহ মোহাম্মদ মুসা মিলনসহ জেলার প্রসিদ্ধ চামড়া ব্যবসায়ীরা এবার চামড়া কিনছেন না। গতবছরও তারা চামড়া কেনা থেকে বিরত ছিলেন।

এ ব্যাপারে মাহবুবার রহমান বেলাল জানান, সময় মতো বকেয়া টাকা তুলতে ব্যর্থ হওয়া, চামড়ার ভালো বাজার না পাওয়াসহ নানা সমস্যার কারণে চামড়াপট্টিতে বর্তমানে হাতে গোনা কয়েকজন ব্যবসা করছে। পেশা বদল করে নেওয়া বেশিরভাগ চামড়া ব্যবসায়ী এখন শুধু ঈদুল আজহাতে মৌসুমি ব্যবসায়ী হিসেবে কোরবানির পশুর চামড়া কেনাবেচা করেন। আর এখন দিন যতই যাচ্ছে, ততই চামড়ার আমদানি কমে যাচ্ছে। গেল চার-পাঁচ বছর ধরে রংপুরে চামড়ার আমদানি নেই বললেই চলে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সরকার এ বছর গরুর চামড়া প্রতি বর্গফুটে পাঁচ টাকা দাম বাড়িয়েছে। এবার ঢাকাতে প্রতি বর্গফুট গরুর লবণযুক্ত কাঁচা চামড়ার দাম ৪০ থেকে ৪৫ টাকা এবং ঢাকার বাইরে ৩৩ থেকে ৩৭ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। আর খাসির লবণযুক্ত চামড়ার দাম ১৫ থেকে ১৭ টাকা এবং বকরির চামড়া ১২ থেকে ১৪ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। ছাগলের চামড়ার দাম এবার দুই টাকা বাড়ানো হয়েছে।  এই দামে চামড়া কেনা-বেচা সম্ভব নয় বলে দাবি ব্যবসায়ীদের।

রংপুর জেলা চামড়া ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি আব্দুল লতিফ খাঁন জানান, এবার ঈদে চামড়ার আমদানি কম হওয়ার অন্যতম কারণ ট্যানারি মালিকদের সিন্ডিকেট। তারা এমন দাম বেঁধে দিয়েছেন যাতে ব্যবসায়ীরা চামড়া বিমুখ হন। এ অবস্থা চলতে থাকলে পাচারের পথ প্রসারিত হয়ে আগামীতে চামড়া শিল্প আরও বড় সংকটে পড়বে।

Comments

The Daily Star  | English

Life insurers mired in irregularities

One-fourth of the life insurance firms in the country are plagued with financial irregularities and mismanagement that have put the entire industry in danger.

6h ago