চলতি মাসেই গত বছরের চেয়ে বেশি ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে

​​​​​​​বিদ্যমান কোভিড পরিস্থিতির ভেতরেই এডিস মশাবাহিত ডেঙ্গু রোগের প্রকোপ উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে। এর মধ্যে চলতি মাসেই গত বছরের মোট সংখ্যাকে ছাড়িয়ে অন্তত এক হাজার ৪৩০ জন ডেঙ্গু রোগী বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।
ছবি: রাশেদ সুমন

বিদ্যমান কোভিড পরিস্থিতির ভেতরেই এডিস মশাবাহিত ডেঙ্গু রোগের প্রকোপ উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে। এর মধ্যে চলতি মাসেই গত বছরের মোট সংখ্যাকে ছাড়িয়ে অন্তত এক হাজার ৪৩০ জন ডেঙ্গু রোগী বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।

গত দুই দিনে রাজধানীর দুটি হাসপাতালে ডেঙ্গু আক্রান্ত চার শিশুর মৃত্যু হয়েছে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নিয়ন্ত্রণ কক্ষ থেকে পাওয়া তথ্য অনুসারে, গতকাল সকাল আটটা পর্যন্ত আগের ২৪ ঘণ্টায় সারাদেশে ডেঙ্গু আক্রান্ত ১২৩ জন রোগী ভর্তি হয়েছেন। সব মিলিয়ে এ বছর আক্রান্ত মোট রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছেন এক হাজার ৮০২ জনে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, ২০২০ সালে সারাদেশে মোট এক হাজার ৪০৫ জন ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। যাদের মধ্যে সাত জন মারা যান।

যদিও স্বাস্থ্য অধিদপ্তর এ বছর ডেঙ্গুতে কোনো মৃত্যুর কথা নিশ্চিত করেনি। আর এ পর্যন্ত মাত্র তিনটি মৃত্যুর ঘটনা তাদের তদন্তাধীন আছে।

ঢাকা শিশু হাসপাতালের রোগতত্ত্ববিদ কিঙ্কর ঘোষ গতকাল দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, গত দুই দিনে হাসপাতালটিতে পাঁচ বছরের নিচে তিন শিশু ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে।

মৃতরা হলো গেন্ডারিয়ার বাসিন্দা ১৪ মাসের রওজা, সাভারের বাসিন্দা আড়াই বছরের তুবা ও বাসাবো এলাকার সাড়ে চার বছরের মোমিম।

এ ছাড়া ২৯তম বিসিএস অল ক্যাডার ফোরামের সাধারণ সম্পাদক অমিত কুমার চক্রবর্তী জানান, ২৫ জুলাই বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের আমদানি-রপ্তানি বিভাগের ডেপুটি কন্ট্রোলার জিয়াউর রহমানের ১০ বছরের ছেলে জিয়ন চিকিৎসাধীন অবস্থায় রাজধানীয় সিটি হাসপাতালে মারা যায়।

মশার কামড় থেকে নিরাপদ রাখার জন্য শিশুদের মশারির ভেতর রাখার পরামর্শ দেন শিশু হাসপাতালের কিঙ্কর ঘোষ। সেই সঙ্গে শিশুদের যথাসম্ভব ঢেকে রাখার পরামর্শও দেন তিনি।

এদিকে সরকার ছয়টি বিশেষায়িত হাসপাতাল ডেঙ্গু রোগীদের চিকিৎসা দেওয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

রোববার স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'ডেঙ্গু রোগীদের জন্য আমরা ছয়টা হাসপাতাল ডেডিকেট করার পরিকল্পনা করছি। এ জন্য জনবল বরাদ্দের কাজও শুরু হয়েছে।'

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের উপ-কর্মসূচি ব্যবস্থাপক (ম্যালেরিয়া ও এডিসবাহিত রোগ) ডা. আফসানা আলমগীর খান জানান, এর মধ্যে তারা এ বিষয়ে মন্ত্রণালয় থেকে একটা প্রস্তাব পেয়েছেন। যা এখন চূড়ান্ত করার কাজ চলছে।

ডা. আফসানা বলেন, 'ডেঙ্গু চিকিৎসার জন্য প্রস্তাবিত তালিকায় প্রাথমিকভাবে স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ, মিডফোর্ড হাসপাতাল ও মিরপুরের লালকুঠি হাসপাতাল, কমলাপুরের রেলওয়ে জেনারেল হাসপাতাল এবং টঙ্গীর শহীদ আহসান উল্লাহ মাস্টার জেনারেল হাসপাতালসহ কয়েকটি হাসপাতালের নাম রাখা হয়েছে।'

অন্যদিকে বিশেষজ্ঞরা ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনকে তাদের মশক নিধন কার্যক্রম বিশেষ করে এডিস মশা মারার বিষয়টি জোরদার করার তাগিদ দিয়েছেন।

কীটতত্ত্ববিদ ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যলয়ের অধ্যাপক কবিরুল বাশার বলেন, '২০১৯ সালের মতো (এ বছরেও) সবগুলো জেলায় ডেঙ্গু ছড়িয়ে পড়তে পারে। যেহেতু এর মধ্যে প্রচুর মানুষ ঈদ উদযাপন করতে ঢাকার বাইরে গেছেন।'

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিসংখ্যান অনুসারে চলতি বছরে আক্রান্ত এক হাজার ৮০২ জন ডেঙ্গু রোগীর মধ্যে মাত্র ৫০ শতাংশ ঢাকার বাইরের।

কবিরুল বাশারের পরামর্শ, 'এডিস মশা নিয়ন্ত্রণের ব্যাপারে সব জেলা প্রশাসককে উদ্যোগ নিতে হবে। এ ছাড়া জরুরি পদক্ষেপ নেওয়ার পাশাপাশি হাসপাতালগুলোতে জ্বর নিয়ে ভর্তি হওয়া সব রোগীর ডেঙ্গু পরীক্ষা নিশ্চিত করতে হবে সিভিল সার্জনদের।'

পতঙ্গবিজ্ঞানী ও বাংলাদেশ জ্যুয়োলজিকাল সোসাইটির সাবেক সভাপতি মানজুর চৌধুরীর ভাষ্য, সবাই যাতে নিজেরাই নিজ নিজ এলাকায় নিয়মিত মশকবিরোধী অভিযান চালাতে পারে তার জন্য প্রয়োজনীয় কীটনাশক ও স্প্রে মেশিন সহজলভ্য করার জন্য সরকারকে উদ্যোগ নিতে হবে।

মানজুর চৌধুরী বলেন, 'ভাইরাসটি পর্যবেক্ষণে রাখার বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু আমাদের দেশে এমন কোনো উদ্যোগ দেখা যায় না।' তিনি জানান, যুক্তরাষ্ট্র, সিঙ্গাপুর, মালেয়েশিয়া ও থাইল্যান্ডের মতো উন্নত দেশগুলোতে প্রথমেই ডেঙ্গু ভাইরাস ও এর অবস্থান চিহ্নিত করা হয়। পরে পরিণত এডিস মশা মারার জন্য ওই চিহ্নিত এলাকাগুলোতে সর্বাত্মক অভিযান চালানো হয়।

মানজুর বলেন, 'আমরা এখন যে পর্যায়ে আছি তাতে ডেঙ্গুর বিস্তার রোধে প্রচুর অ্যাডাল্টিসাইড (পরিণত মশা মারার জন্য এক ধরনের কীটনাশক) ছিটাতে হবে। একই সঙ্গে ডেঙ্গু রোগীর অবস্থান চিহ্নিত করার জন্য বিশেষ কার্যক্রম চালিয়ে যেতে হবে।' তার বক্তব্য, 'কোভিড-১৯ মহামারির কারণে ডেঙ্গুর ঝুঁকি কয়েক গুণ বেড়ে গেছে। যেহেতু হাসপাতালগুলোর সাধারণ শয্যা ও আইসিইউগুলো করোনা রোগীতে প্রায় ভরে উঠেছে।'

মানজুর আরও বলেন, 'অন্য দেশগুলোর তুলনায় আমাদের দেশে ডেঙ্গুর সুস্থতার হার বেশি। এখানে মৃত্যুর হার শূণ্য দশমিক ২ শতাংশ। যা বিশ্বের অনেক জায়গার তুলনায় কম। কিন্তু হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসা দিতে ব্যর্থ হলে এটা বাড়বে।'

স্থানীয় সরকারমন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম ডেইলি স্টারকে বলেন, মশক নিধন অভিযান জোরদারের জন্য মন্ত্রণালয় এর মধ্যে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনসহ সবগুলো সিটি করপোরশনকে নির্দেশ দিয়েছে।

এ ছাড়া গত রোববার ঢাকা ও গাজীপুর সিটি করপোরেশনের মেয়রদের সঙ্গে একটি জরুরি বৈঠকে তাদের ডেঙ্গু সেল গঠনের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলেও জানান মন্ত্রী।

পাশাপাশি মশা নিধনে ডেঙ্গু রোগীর বাসস্থান ও এর আশপাশে বিশেষ অভিযান পরিচালনার জন্য আক্রান্ত রোগীদের ঠিকানা সংগ্রহের ব্যাপারে মেয়রদের তাগিদ দেওয়া হয়েছে বলে জানান তাজুল ইসলাম।

প্রতিবেদনটি ইংরেজি থেকে অনুবাদ করেছেন মামুনুর রশীদ

Comments

The Daily Star  | English
Strong dollar spillover: How Bangladesh manages it

Strong dollar spillover: How Bangladesh manages it

The crawling peg system for the taka is a delayed response to reserve erosion

1h ago