‘মিথ্যা আত্মবিশ্বাসে’ ডুব নাকি কিউইদের বিপক্ষে স্পোর্টিং উইকেট? 

দ্য ডেইলি স্টারের সঙ্গে আলাপে বিকেএসপির ক্রিকেট উপদেষ্টা ও কোচ নাজমুল আবেদিন ফাহিম বলেন, এবার অন্তত সাহস দেখানো উচিত বাংলাদেশের, খেলা উচিত স্পোর্টিং উইকেটে।
Mirpur Slow Pitch
মিরপুরে টার্নের সঙ্গে আচমকা নিচু হয়ে যাওয়া বলে ভুগেছেন ব্যাটসম্যানরা। ছবি: ফিরোজ আহমেদ

উইকেটে পড়ে বল থেমে যাচ্ছে, টার্ন করছে, উঁচু-নিচু হচ্ছে। অস্ট্রেলিয়া-বাংলাদেশ সিরিজে ব্যাটসম্যানদের বিস্তর ভোগান্তির দৃশ্য ছিল নিয়মিত। আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টির ইতিহাসে এখনো পর্যন্ত ওভারপ্রতি সবচেয়ে কম রানের সিরিজে বাংলাদেশের কাছে নাস্তানাবুদ হয়েছে অস্ট্রেলিয়া। এমন পরিণতি দেখেও বাংলাদেশে বিশ্বকাপ স্কোয়াডের একজন সদস্যকেও পাঠাচ্ছে না নিউজিল্যান্ড। অজিদের মন্থর ও টার্নিং উইকেটে কাবু করা মাহমুদউল্লাহর দল দ্বিতীয় সারির কিউইদের বিপক্ষে কোন পথে হাঁটবে? বিশ্বকাপ প্রস্তুতির চিন্তা নাকি অতি সহায়ক  উইকেটে কেবলই জেতার চিন্তা?

দ্য ডেইলি স্টারের সঙ্গে আলাপে বিকেএসপির ক্রিকেট উপদেষ্টা ও কোচ নাজমুল আবেদিন ফাহিম বলেন, এবার অন্তত সাহস দেখানো উচিত বাংলাদেশের, খেলা উচিত স্পোর্টিং উইকেটে। মিরপুর শেরে বাংলা ক্রিকেট স্টেডিয়ামে বছরের বিভিন্ন সময়ে খেলার অভিজ্ঞতা থাকা সাবেক অধিনায়ক মোহাম্মদ আশরাফুল মনে করেন মিরপুরে এরচেয়ে অনেক ভাল উইকেট বানানো সম্ভব। বিশ্বকাপ মাথায় নিয়ে কিউইদের বিপক্ষে করা উচিত সেটাই।

বাংলাদেশ-অস্ট্রেলিয়া সিরিজে রান হয়েছে ওভারপ্রতি ৫.৮৫ করে। টি-টোয়েন্টিতে এরচেয়ে কম রানের সিরিজ দেখা গিয়েছিল ২০১২ সালে। কেনিয়া-আয়ারল্যান্ড সিরিজে রান হয়েছিল ওভারপ্রতি ৬.১১ করে।

এই সিরিজে দুই দল মিলিয়ে পুরো সিরিজে সর্বোচ্চ দলীয় স্কোর ১৩১। এসেছে মাত্র দুই ফিফটি। ১২০ রানের পুঁজিকেই এখানে দেখিয়েছে বেশ বড়।  উইকেটের এমন অবস্থা আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে আগে কখনোই দেখা যায়নি। মিরপুর শেরে বাংলা ক্রিকেট স্টেডিয়ামে খেলা হয়েছে এমন এক উইকেটে যেখানে ব্যাটসম্যান-বোলার কারো স্কিলই ঠিকভাবে যাচাই করা যায়নি।

Mirpur Slow Pitch
নিজেদের চেনা কন্ডিশন। তবু বল অতি ধীরে আসায় ব্যাটে নিতে পারছিলেন না বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরাও। ছবি: ফিরোজ আহমেদ

চিন্তা যখন বিশ্বকাপের প্রস্তুতি

অক্টোবর-নভেম্বরে টি-টোয়েন্টি ওমান ও সংযুক্ত আরব আমিরাতে টি-টোয়ন্টি বিশ্বকাপ। নিশ্চতভাবেই বিশ্ব আসরে থাকবে না এমন উইকেট। টি-টোয়েন্টিতে যেকোনো সিরিজেই যেখানে স্পোর্টিং উইকেটই প্রাধান্য পায় আইসিসি ইভেন্টে সেটা পাবে আরও বেশি করে।

নাজমুল মনে করেন, অজিদের বিপক্ষে সাফল্যের তৃপ্তি সরিয়ে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে খেলা উচিত স্পোর্টিং উইকেটে, 'হয়ত আমাদের কিছু আত্মবিশ্বাস দরকার ছিল বড় দলের বিপক্ষে জেতার। সেখানে ঠিকাছে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে একটা মন্থর উইকেটে খেলেছি।  ভাল ফল এসেছে আমাদের, আমরা ভালো খেলেছি অবশ্যই। কিন্তু এখন আর বোধহয় না। এখন বিশ্বকাপের কথা চিন্তা করা দরকার। একটা রিভার্স প্ল্যান করা দরকার। বিশ্বকাপে যে জিনিস আমাদের মোকাবেলা করতে হবে সেটা নিয়ে আসা দরকার।'

আশরাফুলের মতে, নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে শুরুতে খেলা উচিত স্পোর্টিং উইকেটেই, পরে অবস্থা বুঝে নেওয়া যাবে ব্যবস্থা,  'প্রথম দুইটা ম্যাচে একদম স্পোর্টিং উইকেট বানানো উচিত। ব্যাটসম্যানরা রান করতে পারবে, বোলারদেরও পরীক্ষা হবে। ওইখানে যদি দুইটা ম্যাচই জিতি তাহলে এই উইকেটেই পুরো সিরিজ খেলা দরকার। আর ফল না আসে তখন আমরা স্পিনিং উইকেটে ফিরতে পারি। শুরুতে ইভেন উইকেট হওয়া উচিত যেটা বিশ্বকাপে পেতে পারি।'

এই কন্ডিশনে ঠিক সমন্বয় মিলছে তো?

উইকেট মন্থর হলে এক ঝাঁক স্পিনার লাগিয়ে ম্যাচ জেতার কৌশলই সোজা পথ। কিন্তু বিশ্বকাপে এমন সমন্বয়ে রাখা হবে কঠিন। ভালো উইকেটে না খেললে আদর্শ সমন্বয় খুঁজে বের করাও কঠিন দেখছেন ফাহিম, 'আমরা যদি স্পিনিং উইকেট করি আমরা কি ধরনের দল নামাই, স্পিনার থাকে তিনজন, দুজন পেসার। কিন্তু আমরা যখন পেস বান্ধব না ব্যাটিং বান্ধব উইকেট পাব তখন তিনজন পেস বোলার থাকবে। ফরমেশনটাও কিন্তু তখন বদলে যাবে। এখন নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষেও যদি স্পিনিং উইকেটে খেলি বিশ্বকাপে গিয়ে কিন্তু আমাদের কৌশল বদলাতে হবে। আদর্শ হচ্ছে যে কৌশলে বিশ্বকাপ খেলব, যে কন্ডিশনে খেলব সেটা যদি এখন করতে পারি নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে খুব ভাল হবে। আমার মনে হয় এই বোল্ডনেসটুকু, এই সাহসটুকু আমাদের এখন হওয়া উচিত।'

বিচারই করা যায়নি ব্যাটসম্যানদের পারফরম্যান্স

'কথা বলতে তো কোন সমস্যা নেই, কিন্তু মিরপুরের এই উইকেটে একজন ব্যাটসম্যানের ফর্ম বা সামর্থ্য নিয়ে প্রশ্ন তুলে কি অর্জন করা সম্ভব মাথায় আসছে না।'

উপরের কথাগুলো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোস্ট করেন মাশরাফি বিন মুর্তজা। অস্ট্রেলিয়া সিরিজে কয়েকজন ব্যাটসম্যানের রান খরা নিয়ে চারপাশের তীব্র সমালোচনার ভিড়ে এই হলো তার মত। 

উইকেটেরই কারণেই ব্যাটসম্যানদের বিচার করা যায়নি বলে একই মত কোচ নাজমুলেরও, 'বিশেষ করে টি-টোয়েন্টিতে বিচার করা খুবই মুশকিল। বলে বলে রান করতে হবে, সেখানে এই ধরণের উইকেটে খেললে ব্যাটসম্যানদের বিচার করা যায় না। যেটা হলো আমরা যদি আদর্শ কন্ডিশনে খেলি। তাহলে যদি একটু ঘাটতি থাকে, গ্যাপ থাকে সেটা নিয়ে ভাবার সময় পাব। ওইটা ওভারকাম করার সুযোগ পাব। কিন্তু আমরা যদি স্পিনিং উইকেটে খেলি আর জিতি তাহলে যেটা হবে একটা মিথ্যা আত্মবিশ্বাস তৈরি হবে। মনে হবে আমরা কত ভাল। কিন্তু ওখানে গিয়ে যেটা সামলাতে হবে সেটার জন্য হয়ত তখন আমরা প্রস্তুত থাকব না।'

আশরাফুল অবশ্য মনে করেন এই উইকেটেও আরও কিছু রান করার সুযোগ ছিল, 'প্রতি ম্যাচেই আমাদের সুযোগ ছিল ১৫-২০ রান বেশি করার। যেহেতু আমাদের পরিচিত উইকেট। মানিয়ে নেওয়া উচিত ছিল, পারিনি। তবে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ভালো উইকেট বানানো উচিত যাতে ব্যাটসম্যানরা রান পায়।'

ব্যাটসম্যানদের ঠিক উল্টো অবস্থা বোলারদের। স্লো বোলাররা হাত ঘোরালেই এখানে পেয়েছেন সাফল্য। এতে করে তাদের ভেতরে জমা হতে পারে অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাস।   উইকেট থেকে অনেক বেশি সাহায্য থাকায় তাদের মূল্যায়ন করার অবস্থাও তাই থাকছে না।

মিরপুরে কি ভালো উইকেট সম্ভব?

মিরপুরের বাইশগজ বরাবরই মন্থর বলে একটা কথা চালু আছে। উঁচু-নিচু বাউন্স, বল থেমে আসার জন্য দ্বিধা নিয়ে খেলতে হয় ব্যাটসম্যানদের। তবে চলতি বছর বঙ্গবন্ধু টি-টোয়েন্টি কাপ, ঢাকা প্রিমিয়ার লিগ টি-টোয়েন্টির প্রচুর খেলা হয়েছে মিরপুরে।

প্রিমিয়ার লিগে দিনে দেখা গেছে তিন ম্যাচ। এত খেলার পরও বড় রানের ম্যাচেরও দেখা পাওয়া গেছে। এই মাঠেই ১৫০ এর বেশি স্ট্রাইকরেট রেখে খেলতে দেখা গেছে ব্যাটসম্যানদের। সেসব কথা মনে করিয়ে নাজমুল বলেন, চাইলেই ভালো উইকেট করা সম্ভব,  'টি-টোয়েন্টি টুর্নামেন্টে কি রান হয়নি? বঙ্গবন্ধু টি-টোয়েন্টি টুর্নামেন্টে যখন হয়েছে তখন বাউন্স দেখেছি, পেস দেখেছি। বড় বড় শট দেখেছি। আমাদের ছেলেদেরই বড় বড় শট। চেষ্টা করলে এই ধরণের উইকেট বানানো যায়।'

গত জুন মাসে মিরপুরেই ৪৮ বলে ৭২ রানের ইনিংস খেলেন আশরাফুল। তিনিও মনে করেন, অস্ট্রেলিয়া সিরিজ থেকে অনেক ভালো উইকেট চাইলেই বানানো যায় এখানে, 'এরচেয়ে অনেক ভালো উইকেট বানানো যায়। নিউজিল্যান্ড সিরিজে প্রতি ম্যাচের মাঝে একদিন করে গ্যাপও আছে। সেটা করা সম্ভব।'

Comments

The Daily Star  | English

Informal Sector Workers: Their rights glossed over, always

Of the over 7 crore people employed in Bangladesh, 85 percent (nearly 6 crore) are vulnerable as they work in the informal sector, which lacks basic social and legal protection, and employment benefits.

2h ago