আন্তর্জাতিক শকুন সচেতনতা দিবস

শকুন আজ বিপন্নপ্রায়

লাখ লাখ বছর ধরে শকুন প্রকৃতি থেকে মরদেহ সরানোর কাজ করে রোগব্যাধি-মুক্ত পরিবেশ সুরক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। আজ শনিবার আন্তর্জাতিক শকুন সচেতনতা দিবস। আমাদের প্রকৃতি-পরিবেশ সংরক্ষণে ভূমিকা পালনকারী শকুনের অস্তিত্ব আজ বিপন্নপ্রায়।
শকুন। ছবি: সংগৃহীত

লাখ লাখ বছর ধরে শকুন প্রকৃতি থেকে মরদেহ সরানোর কাজ করে রোগব্যাধি-মুক্ত পরিবেশ সুরক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। আজ শনিবার আন্তর্জাতিক শকুন সচেতনতা দিবস। আমাদের প্রকৃতি-পরিবেশ সংরক্ষণে ভূমিকা পালনকারী শকুনের অস্তিত্ব আজ বিপন্নপ্রায়।

বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের হিসাব মতে, ২০০৮ সালে শকুনের সংখ্যা ছিল এক হাজার ৯৭২টি, যা সর্বশেষ ২০১৬ সালে নেমে এসেছে ২৬০টিতে। শকুন সংরক্ষণের জন্য সরকার দুটি জায়গা নির্দিষ্ট করেছে, একটি রেমা-কালেঙ্গা বন, আরেকটি সুন্দরবন।

বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন হবিগঞ্জ ইউনিটের সাধারণ সম্পাদক তোফাজ্জল সোহেল বলেন, 'বাংলাদেশ থেকে বেশিরভাগ শকুন কার্যত অদৃশ্য হয়ে যাচ্ছে। শকুনের আরও কয়েকটি প্রজাতি দক্ষিণ এশিয়ার অন্য দেশগুলোতেও একই ভাগ্যের মুখোমুখি হয়েছে।'

তিনি বলেন, '৯৯ শতাংশ শকুন বাংলাদেশ ও দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য দেশ থেকে বিলুপ্ত হয়েছে।'

বিষাক্ত ওষুধ দিয়ে চিকিৎসা করা গবাদিপশুর মরদেহ খাওয়ার কারণে শকুন বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে বলে দাবি করেন তিনি।

শকুন নিয়ে দুটি জরিপের বিশ্লেষণে দেখা যায় যে, এক হাজার ৭১২টি শকুন বাংলাদেশ থেকে বিলুপ্ত হয়েছে।

তোফাজ্জল সোহেল আরও বলেন, 'শকুন বাঁচাতে যদি তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা না নেওয়া হয়, তাহলে প্রাণীটি শিগগির শূন্যে পৌঁছে যাবে।'

আকাশে উড়ে খাবার সন্ধানরত শকুন। ছবি: সংগৃহীত

তিনি আরও বলেন, 'বাসস্থানের অভাব এবং বিরূপ খাদ্য পরিবেশবান্ধব শকুনের দ্রুত অদৃশ্য হওয়ার অন্যতম প্রধান কারণ।'

বাংলাদেশ বার্ড ক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রখ্যাত পাখি বিশেষজ্ঞ ইনাম আল হক দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'শকুন বাঁচাতে স্কুল-কলেজের ছাত্র-ছাত্রীসহ সাধারণ মানুষের মধ্যে সচেতনতা বাড়াতে হবে।'

তিনি বলেন, '২০১০ সাল থেকে ডিক্লোফেনাক ওষুধ নিষিদ্ধ। কারণ এটি শকুনের জন্য খুবই ক্ষতিকর ছিল।' 

'এমনকি শকুন সংরক্ষণের জন্য আনুষ্ঠানিকভাবে দুটি জায়গার ব্যবস্থা করা হয়েছে, একটি রেমা-কালেঙ্গা বন, অন্যটি সুন্দরবন। এটি খুবই আনন্দের বিষয়। যদিও শকুনের সংখ্যা বাড়ছে না। তবে, শকুনের সংখ্যা গত দশ বছরে শূন্যে নেমে যায়নি', যোগ করেন তিনি।

ইনাম আল হক আরও বলেন, 'শকুন এখনো জীবিত পাওয়া যায়, এটি আমাদের আশা জাগিয়ে তোলে।'

মরা গরুর মাংস খাচ্ছে শকুন। ছবি: সংগৃহীত

বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের সিলেট বিভাগীয় বন সংরক্ষক রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, 'শকুন সচেতনতা দিবস হিসেবে এ বছর করোনার কারণে কেন্দ্রীয়ভাবে দিবসটি পালিত হবে। আমরা ওই কর্মসূচির সঙ্গে ভার্চুয়ালি রেমা-কালেঙ্গা থেকে যুক্ত হব এবং সেখানে শকুনের জন্য খাবার হিসেবে মৃত গরু দেওয়া হবে।'

তিনি আরও বলেন, 'বর্তমানে দেশে শকুনের সার্বিক অবস্থা বলা মুশকিল।'

তবে, গত ২০ ও ২১ আগস্ট মৌলভীবাজারের দীঘিরপাড় এলাকায় গরু মারা যাওয়ার পর সেখানে ১৪টি শকুন আসতে দেখা গেছে। শকুন বছরে একবার একটা ডিম দেয়। অনেক সময় সেটিও ফোটে না। বিষয়টি শকুনের জন্যও হুমকি।

সিলেট এলাকা শকুনের সেভ জোন উল্লেখ করে তিনি বলেন, 'রেমা-কালেঙ্গায় বাচ্চা ফোটানোর সময় শকুনের খাওয়ার জন্য গরুর মাংস দেওয়া হয়।'

Comments

The Daily Star  | English

All educational institutions reopen after heatwave-induced closures

After several closures due to the heatwave sweeping the country, all primary and secondary schools, colleges, madrasas, and technical institutions across the country resumed classes today

28m ago