দক্ষিণ এশিয়া

আফগানিস্তানে মজুদ খনিজ সম্পদের মূল্য ১ ট্রিলিয়ন ডলার

আফগানিস্তানে কমপক্ষে এক ট্রিলিয়ন ডলার সমপরিমাণের খনিজ সম্পদ মজুদ আছে।
ছবি: রয়টার্স

আফগানিস্তানে কমপক্ষে এক ট্রিলিয়ন ডলার সমপরিমাণের খনিজ সম্পদ মজুদ আছে।

আফগানিস্তানের খনি ও পেট্রোলিয়াম মন্ত্রণালয় প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনের বরাত দিয়ে কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আলজাজিরা আজ শুক্রবার এই তথ্য জানিয়েছে।

অনুমান করা হচ্ছে, ৩ কোটি ৮০ লাখ জনসংখ্যার দেশটিতে ২ দশমিক ২ বিলিয়ন টনের বেশি লোহা, ১ দশমিক ৩ বিলিয়ন টন মার্বেল ও ১ দশমিক ৪ মিলিয়ন টন বিরল খনিজ সম্পদ মজুদ আছে।

আফগানিস্তানের সম্পদের পরিমাণ নিয়ে অধ্যয়ন করা ভূতত্ত্ববিদ স্কট মন্টগোমেরি জানিয়েছেন, এই খনিজ সম্পদ থেকে আয় করতে আফগানিস্তানের আরও ৭ থেকে ১০ বছর সময় লাগবে।

ধারণা করা হচ্ছে, দুর্বল নিরাপত্তা ও আইন এবং দুর্নীতি এই খনিজ সম্পদ উন্নয়নে বাধাগ্রস্ত করছে।

মাটির নিচে কী আছে?

ইউএসএসআর ও এর পূর্ব ইউরোপীয় মিত্ররা ১৯৬০-৭০ এর দশকে আফগানিস্তানের ভূতাত্ত্বিক সম্পদের ওপর সমীক্ষা চালায়। কয়েক দশক ধরে যুদ্ধের কারণে দেশটির বেশিরভাগ সম্পদ অপ্রকাশিত অবস্থায় ছিল।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভূতাত্ত্বিক জরিপ (ইউএসজিএস) ২০১০ সালে আফগানিস্তান ভূতাত্ত্বিক জরিপ (এজিএস) এর সঙ্গে দেশটির ৩৪টি প্রদেশের ২৪টি নির্দিষ্ট অঞ্চলে ভূতাত্ত্বিক জরিপ পরিচালনা করে।

মূল্যবান ধাতু

আফগানিস্তানের মূল্যবান ধাতুর মধ্যে সবচেয়ে বেশি আছে লোহা। দেশটিতে মোট ২ দশমিক ২ বিলিয়ন মেট্রিকটন লোহা মজুদ আছে বলে অনুমান করা হচ্ছে। যা সবচেয়ে বেশি উত্তোলনযোগ্য লোহার মজুদ থাকা ১০টি দেশের মধ্যে একটি।

কাবুলের ১৩০ কিলোমিটার পশ্চিমে অবস্থিত পার্বত্য বামিয়ান প্রদেশে অবস্থিত হাজীগাক খনিতে এই অঞ্চলের সবচেয়ে বেশি ১ দশমিক ৭ বিলিয়ন টন লোহা মজুদ আছে।

দেশটির বাদাখশান ও কান্দাহার প্রদেশে ১৮৩ মিলিয়ন টন অ্যালুমিনিয়াম মজুদ আছে বলে অনুমান করা হয়। এই ধাতুটি লোহার পর বিশ্বব্যাপী সর্বাধিক ব্যবহৃত হয়।

আফগানিস্তানের বাদাখশানের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল তাখার ও গজনির দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল জাবুলের ২টি খনিতে আনুমানিক ২ হাজার ৬৯৮ কেজি সোনা মজুদ আছে।

নির্মাণ সামগ্রী

আফগানিস্তানের হিন্দু কুশ হিমালয়ের উত্তর-পূর্বে মার্বেল, চুনাপাথর বেলেপাথরসহ নির্মাণ কাজে ব্যবহৃত বিভিন্ন খনিজ ও পাথর আছে।

দেশটিতে ১ দশমিক ৩ বিলিয়ন টন মার্বেল আছে। যা দিয়ে ১৬৯ মিটার উচ্চতা ও ১৭ মিটার প্রস্থের ১৩ হাজার ওয়াশিংটন মনুমেন্টস সমমানের স্থাপনা তৈরি করা যাবে। পাকিস্তানের সীমান্তবর্তী নানগারহার প্রদেশে এই অঞ্চলের সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয় গোলাপি মার্বেল আছে।

চুনাপাথর ও বেলেপাথর হলো সাধারণ ধরনের পাললিক শিলা যা নির্মাণ কাজে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়। চুনাপাথর সিমেন্টের জন্য একটি অপরিহার্য উপাদান এবং এটি টুথপেস্ট ও পেইন্টের মতো গৃহস্থালি পণ্যের একটি প্রধান উপাদান হিসেবে ব্যবহৃত হয়।

অনুমান করা হচ্ছে, আফগানিস্তানে বাদাখশান, হেরাত ও বাগলান প্রদেশে কমপক্ষে ৫০০ মিলিয়ন টন চুনাপাথর আছে।

খনিজ শিল্প

আফগানিস্তান ঐতিহাসিকভাবে ল্যাপিস লাজুলি, পান্না ও রুবির অন্যতম প্রধান উৎস। দেশটির উত্তর-পূর্বে বেশিরভাগ রত্ন পাথর পাওয়া যায়।

লিথিয়াম (ব্যাটারিতে ব্যবহৃত), ইউরেনিয়াম (পারমাণবিক জ্বালানির জন্য ব্যবহৃত) সহ আফগানিস্তানে আনুমানিক ১ দশমিক ৪ মিলিয়ন টন পৃথিবীর বিরল খনিজ সম্পদ আছে। হেলমান্দ প্রদেশের খাননেশিনে সবচেয়ে বেশি দুর্লভ খনিজ সম্পদগুলো পাওয়া যেতে পারে।

দেশটিতে আনুমানিক ১৫২ মিলিয়ন টন ব্যারাইট আছে, যা সাধারণত তেল ও গ্যাস শিল্পে ব্যবহৃত হয়।

রপ্তানি ও বাণিজ্য অংশীদার

দ্য অবজারভেটরি অব ইকোনমিক কমপ্লেক্সিটি (ওইসি) এর মতে, ২০১৯ সালে আফগানিস্তানের মোট রপ্তানি ২ দশমিক ২৪ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে।

মোট রপ্তানির ৪৫ শতাংশ মূল্যবান ধাতু, রত্ন ও গহনা আছে। যার মূল্য এক বিলিয়ন ডলার। ২৪ শতাংশ ফল ও বাদাম, সাইট্রাস ফলের খোসা রপ্তানি হয়েছে। যার মূল্য ৫৩৮ মিলিয়ন ডলার এবং ৮ শতাংশ সবজি, শিকড় ও কন্দ রপ্তানি হয়েছে যার মূল্য ১৭৭ মিলিয়ন ডলার।

আফগানিস্তান ২০১৯ সালে ৯০ শতাংশ পণ্য মাত্র ৩টি দেশে রপ্তানি করেছে। যার মধ্যে ৪৫ শতাংশ সংযুক্ত আরব আমিরাত, ২৪ শতাংশ পাকিস্তান ও ২২ শতাংশ ভারতে।

গত মাসের ১৫ আগস্ট তালেবানরা দেশটির নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার পর থেকে পশ্চিমা দেশগুলো সহায়তা পাঠানোর ওপর বিধিনিষেধ আরোপ করেছে।

তালেবান গত ২ সেপ্টেম্বর জানায়, তারা প্রাথমিকভাবে চীনের অর্থায়নের ওপর নির্ভর করবে। চীন ইতোমধ্যে আফগানিস্তানের বেশ কয়েকটি খনির দীর্ঘমেয়াদী ইজারা নিয়েছে।

Comments

The Daily Star  | English
PM declares 12 districts, 123 upazilas free of homeless people

PM opens Hajj programme-2024

Prime Minister Sheikh Hasina today inaugurated the Hajj programme-2024 (Hijri 1445) at Ashkona Hajj Camp in the capital

1h ago