শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি কমছে

গত ১২ সেপ্টেম্বর স্কুল খোলার পর দেশের মাধ্যমিক স্কুলগুলোর ক্লাসরুমে শিক্ষার্থীদের যে উপস্থিতি ছিল, ধীরে ধীরে তা কমতে শুরু করেছে।

মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) তথ্য অনুযায়ী, গত দুই সপ্তাহ ধরে মাধ্যমিক স্কুলে অনুপস্থিতি বাড়ছে।

১২ সেপ্টেম্বর ১৪ হাজার ৮১৭টি স্কুলের ৪৩ দশমিক ৩১ লাখ শিক্ষার্থীর ৬৭ শতাংশ ক্লাসে অংশ নেয়। গত ১৮ সেপ্টেম্বর ক্লাসে উপস্থিত ছিল ১৬ হাজার ৬৯০টি স্কুলের ৪৮ দশমিক ১ লাখ শিক্ষার্থীর ৫৮ শতাংশ। এরপর গত শনিবার ১৫ হাজার ৮৬০টি স্কুলের ৪২ দশমিক ৩৩ শতাংশ শিক্ষার্থীর ৫৬ শতাংশ ক্লাসে উপস্থিত হয়।

এখানে স্কুলের সংখ্যা কম-বেশি হওয়ার কারণ হচ্ছে, সব স্কুল প্রতি দিন মাউশির কাছে উপস্থিতির হিসাব জমা দেয় না।

ক্রমবর্ধমান অনুপস্থিতির পেছনে শিক্ষাবিদরা কিছু কারণ চিহ্নিত করেছেন। তাদের মতে, অনেক পরিবার শিশুদের কাজে পাঠাচ্ছে এবং অনেকে মহামারির মধ্যে শিশুদের স্কুলে পাঠাতে অনিচ্ছুক। এ ছাড়া, প্রতিদিন স্কুলে মাত্র দুটি ক্লাস না করে বাড়িতেই পরীক্ষার প্রস্তুতি নিলেই ভালো হবে বলে মনে করছে অনেক শিক্ষার্থী।  

উপাত্ত বলছে, দশম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি ১৫ শতাংশ, দ্বাদশ শ্রেণির  শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি ১১ শতাংশ এবং পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি ২ শতাংশ কমে গেছে।

মাউশির পরিচালক (মনিটরিং অ্যান্ড ইভ্যালুয়েশন) অধ্যাপক আমির হোসেন জানান, করোনা মহামারি শুরুর আগে মাধ্যমিক স্কুলগুলোতে ৭৫ থেকে ৮০ শতাংশ উপস্থিতি ছিল। বর্তমানে গ্রাম ও শহরের দরিদ্র পরিবারের শিক্ষার্থী এবং সুবিধাবঞ্চিত গোষ্ঠীর শিক্ষার্থীদের মধ্যে অনুপস্থিতি বেশি চোখে পড়ছে।

তিনি মনে করছেন, করোনা সংক্রমণ রোধে দেওয়া বিধিনিষেধের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত অনেক পরিবারই অর্থ উপার্জনের জন্য শিক্ষার্থীদের কাজে পাঠাচ্ছেন।

তবে, ক্লাসে কম গেলেও এই শিক্ষার্থীরা ঝরে পড়ছে না উল্লেখ করে তিনি বলেন, '৯৩ শতাংশ এসএসসি পরীক্ষার্থী স্কুলে অ্যাসাইনমেন্ট জমা দিচ্ছে।'

মাউশি পঞ্চম, একাদশ, দ্বাদশ ও দশম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের দৈনিক উপস্থিতির হার সংগ্রহ করে। এসব শ্রেণির শিক্ষার্থীদের প্রতিদিন সরাসরি ক্লাসরুমে উপস্থিত থাকার কথা।

মাউশির হিসাব অনুযায়ী, ১২ সেপ্টেম্বর পঞ্চম শ্রেণিতে উপস্থিতির হার ৭১ শতাংশ থাকলেও, শনিবার এটি ৬৯ শতাংশে নেমে এসেছে।

দশম শ্রেণি ও এসএসসি পরীক্ষার্থীদের ক্লাসে ১২ সেপ্টেম্বর যথাক্রমে ৭৬ শতাংশ ও ৬৯ শতাংশ শিক্ষার্থী উপস্থিত ছিল। কিন্তু, দুই সপ্তাহ পর এই উপস্থিতি যথাক্রমে ৬১ শতাংশ ও ৬২ শতাংশে নেমে আসে।  

এ ছাড়া, একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণিতে ১২ সেপ্টেম্বর যথাক্রমে ৫৯ শতাংশ ও ৫৩ শতাংশ উপস্থিতি থাকলেও, শনিবার তা যথাক্রমে ৫০ শতাংশ ও ৪২ শতাংশে নেমে আসে।

মাহবুবুর রহমান নামে রাজধানীর যাত্রাবাড়ীর এক অভিভাবক বলেন, 'আমি আমার ছেলেকে তখনই স্কুলে পাঠাবো, যখন দেখবো স্কুল খোলার পর করোনাভাইরাস সংক্রমণ বাড়ছে না।'

ঢাকা কমার্স কলেজের এক এইচএসসি পরীক্ষার্থী বলে, 'আমি বাসাযতেই ভালোভাবে পরীক্ষার প্রস্তুতি নিতে পারি। স্কুলে যাতায়াতে অনেক সময় লাগে।'

গণসাক্ষরতা অভিযানের উপ-পরিচালক কে এম এনামুল হক বলেন, 'অনেক শিক্ষার্থী কাজ করছে বলে তারা ক্লাসে যাচ্ছে না। আবার দীর্ঘ বন্ধের কারণে অনেকের পক্ষে পড়া বোঝা কঠিন হয়ে পড়ছে। তারা ক্লাসে যাওয়ার আগ্রহ হারাচ্ছে।'  

তিনি আরও বলেন, 'শিক্ষার্থীদের স্কুলে ফিরিয়ে আনার জন্য শিক্ষক, স্কুল পরিচালনা কমিটির সদস্য ও অভিভাবকদের একযোগে কাজ করতে হবে।'

অধ্যাপক আমির জানিয়েছেন, স্কুলের শিক্ষকরা অনুপস্থিত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন এবং তাদের ক্লাসরুমে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করছেন।

সরকারের আগামী মাসে ক্লাসের সংখ্যা বাড়ানোর পরিকল্পনা আছে বলে জানান তিনি।  

অনুবাদ করেছেন জারীন তাসনিম

Comments

The Daily Star  | English

Drafting new constitution can take a long time: Asif Nazrul

He proposed that the next parliament can act as constitutional authority and amend the 1972 constitution until a new one is enacted

38m ago