অপরাধ ও বিচার

খুলনায় ভুয়া চিকিৎসকদের দৌরাত্ম্য: এক মাসে ৭ জনকে দণ্ড

ভুয়া চিকিৎসকদের দৌরাত্ম্য থামছে না খুলনায়। বিভিন্ন বাহারি ডিগ্রি ব্যবহার করে চকচকে ভিজিটিং কার্ড ও সাইন বোর্ড সাঁটিয়ে রোগীদের প্রতারিত করা তাদের মূল লক্ষ্য। এসব চিকিৎসকদের সহযোগিতার জন্য সক্রিয় রয়েছে কিছু দালাল চক্র। গত এক মাসে এরকম সাত জনের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিয়েছে প্রশাসন। 
ছবি: সংগৃহীত

ভুয়া চিকিৎসকদের দৌরাত্ম্য থামছে না খুলনায়। বিভিন্ন বাহারি ডিগ্রি ব্যবহার করে চকচকে ভিজিটিং কার্ড ও সাইন বোর্ড সাঁটিয়ে রোগীদের প্রতারিত করা তাদের মূল লক্ষ্য। এসব চিকিৎসকদের সহযোগিতার জন্য সক্রিয় রয়েছে কিছু দালাল চক্র। গত এক মাসে এরকম সাত জনের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিয়েছে প্রশাসন। 

আজ সোমবার দুপুরে খুলনার ডুমুরিয়ায় তন্ময় অধিকারী (২৭) নামে এক চিকিৎকে কারাদণ্ড দেয় ভ্রাম্যমাণ আদালত। 

মেডিকেল অ্যাসিট্যান্ট হওয়া সত্ত্বেও চিকিৎসক পরিচয়ে অনুমোদনহীন অ্যালোপ্যাথিক চিকিৎসা দিয়ে আসছিলেন। এই অপরাধে ডুমুরিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট ওবায়দুর রহমান তাকে এক মাসের সশ্রম কারাদণ্ড প্রদান করেন।

এ ছাড়া, গত ২২ সেপ্টেম্বর সকাল সাড়ে ১০টায় খুলনার রূপসা এলাকায় মেডিকেল সার্টিফিকেট ছাড়াই চিকিৎসা দেওয়ার অপরাধে দুজন ভুয়া চিকিৎসককে এক বছর করে বিনাশ্রম কারদণ্ড দিয়েছেন র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব-৬)-এর ভ্রাম্যমাণ আদালত। 
একইসঙ্গে তাদের ৫০ হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরও ১০ দিনের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। দণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন, পূর্ব রূপসা বাজারের অ্যালোপ্যাথিক চিকিৎসক ডা. এ বি এম আতাউর রহমান ও দন্ত চিকিৎসক মো. আলমগীর হোসেন শেখ।

র‌্যাব জানায়, দীর্ঘদিন ধরে পূর্ব রূপসা বাজারে মাদারীপুর ক্লিনিকের ব্যানারে এ বি এম আতাউর রহমান কোনো ধরনের মেডিকেল সার্টিফিকেট ছাড়াই বিভিন্ন রোগের চিকিৎসার নামে অপচিকিৎসা দিয়ে আর্থিক ফায়দা লুটছিলেন। র‌্যাব জানতে পেরে ওই ক্লিনিকে অভিযান চালায়। অভিযানে অভিযোগের সত্যতা প্রমাণিত হওয়ায় ভুয়া চিকিৎসক আতাউর রহমানকে দণ্ড দেন ভ্রাম্যমাণ আদালত।

র‌্যাব একই অভিযোগে উপজেলার ইলাইপুর মোড়ে আঁখি ডেন্টাল কেয়ারে অভিযান চালায়। অভিযানে ভুয়া চিকিৎসক জাবুসা এলাকার আলমগীর হোসেন শেখকে এক বছরের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেন ভ্রাম্যমাণ আদালত।

এ ছাড়া, গত ২ সেপ্টেম্বর খুলনার বটিয়াঘাটার বাইনতলা এলাকায় ভুয়া চিকিৎসক আজিম উদ্দিন খানকে দুই বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। তিনি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান থেকে 'মেডিকেল সহকারী' পদে উত্তীর্ণ হলেও নিজেকে ডাক্তার পরিচয় দিয়ে প্রতারণা করছিলেন। ওই এলাকায় একই দিনে হোমিওপ্যাথি চিকিৎসায় জড়িত গাজী হোমিও কেয়ার সেন্টারের মালিক শফিউল্লাহ গাজীকে (৩২) 'ডাক্তার' পদবি ব্যবহার করায় ২০ হাজার টাকা ও আরিফ মেডিকেল হল ফার্মেসির মালিক আরিফ হোসেনকে ২০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।

এ ছাড়া, গত ২৫ আগস্ট দুপুরে খুলনা জেলার রূপসা উপজেলাধীন নৈহাটি এলাকায় রেজিস্ট্রেশন বিহীন অ্যালোপ্যাথিক চিকিৎসা পরিচালনার অভিযোগে খুলনার আরাফাত হাসপাতাল অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারকে সিলগালা করা হয়েছে। একইসঙ্গে প্রতিষ্ঠানের পরিচালক কামরুজ্জামানকে দণ্ড দেয় ভ্রাম্যমাণ আদালত।

স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা জানান, চিকিৎসা সেক্টরে ভুয়া ডাক্তার ও অপচিকিৎসা বছরের পর বছর ধরে দূরারোগ্য ক্যান্সারের মতোই চেপে আছে। এর বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করার লক্ষ্যে বিএমডিসিকে ঢেলে সাজানোসহ শক্তিশালীকরণের বিকল্প নেই। ভুয়া ডাক্তাররা প্রায়ই স্থান পরিবর্তন করে এবং কৌশলে সহজ-সরল মানুষকে ফাঁকি দিয়ে ব্যবসা চালিয়ে থাকে।

এ ব্যাপারে খুলনা বিভাগীয় পরিচালক (স্বাস্থ্য)-এর দপ্তরের পরিচালক ডা. জসিম উদ্দিন হাওলাদার দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'কোভিড-১৯ কিছুটা নিয়ন্ত্রণে আসলেই আমি নিজেই টিম নিয়ে নগরীতে অবৈধ ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোর বিরুদ্ধে অভিযান চালাব।'

তিনি আরও বলেন, 'ক্লিনিক বা ডায়াগনস্টিক সেন্টার শুধু অনুমোদনের জন্য অনলাইনে আবদেন করেই কেউ কোনো স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠান চালাতে পারবেন না। এটা আইনগতভাবে অপরাধ।'

 

Comments

The Daily Star  | English

Three difficult choices to heal economy

Bangladesh yesterday made three major decisions to cushion the economy against critical risks such as stubborn inflation and depletion of foreign currency reserves.

6h ago