শোলার ফুলে ভাগ্য বদল

শোলার ফুল বিক্রি করে ভালো উপার্জন করেন মালাকার সম্প্রদায়ের মানুষ। ছবি: স্টার

সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় উৎসব দুর্গাপূজা। ইতোমধ্যে সব প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। এরপরই লক্ষ্মীপূজা। আর এই দুই পূজাকে সামনে রেখে শোলা দিয়ে ফুল তৈরির কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার ভাটপাড়া গ্রামের ২৫টি মালাকার পরিবার।

এই দুই পূজায় শোলার তৈরি ফুলের খুব বেশি প্রয়োজন পড়ে। এসময় শোলার ফুল বিক্রি করে ভালো উপার্জন করেন মালাকার সম্প্রদায়ের মানুষ।

সম্প্রতি ভাটপাড়া গ্রাম ঘুরে দেখা যায়, দুর্গাপূজা ও লক্ষ্মীপূজাকে সামনে রেখে এই গ্রামের প্রায় ২৫টি পরিবারের সদস্যরা শোলা দিয়ে ফুল তৈরিতে ব্যস্ত। মালাকার সম্প্রদায়ের মানুষরা জানান, ধর্মীয় উৎসবগুলোতে শোলার ফুলের বিক্রি বেশ ভালো হয়।

তারা জানান, আগস্ট থেকে শুরু হয় এই ফুল বিক্রি এবং অক্টোবরের শেষ সপ্তাহে গিয়ে শেষ হয়। এই ফুল বিক্রি করে তারা বেশ ভালো টাকা উপার্জন করেন এবং পূজায় পরিবারের সদস্যদের জন্য কেনাকাটা করেন। এই ফুল তৈরিতে খরচ অল্প, তবে বেশ ভালো লাভ হয়। এই শোলা তারা বিভিন্ন জলাভূমি ও জলাশয় থেকে সংগ্রহ করেন। এরপর রোদে শুকিয়ে বিভিন্ন সাইজে কেটে ফেলেন। পরে সেগুলো ব্যবহৃত হয় ফুল তৈরিতে। বাজারে এই ফুলের চাহিদা অনেক, কারণ হিন্দু সম্প্রদায়ের পূজার জন্য এই ফুল কিনতে হয়। বিশেষ করে এই ফুল লক্ষ্মীপূজায় বেশি ব্যবহৃত হয়।

শোলার ফুল তৈরি করছেন ভাটপাড়া গ্রামের বাসিন্দারা। ছবি: স্টার

ভাটপাড়া গ্রামের ৪০ বছর বয়সী সন্তোষ কুমার মালাকার জানান, তিনি গত ৪০ বছর ধরে শোলার ফুল বানাচ্ছেন। শোলা না কিনে বিভিন্ন জলাভূমি ও জলাশয় থেকে সংগ্রহ করেন। তিনি লক্ষ্মীপূজার জন্য ফুল ও দুর্গাপূজার জন্য মালা তৈরি করেন। ফুল ও মালার পাশাপাশি তারা এই শোলা দিয়ে টুপি, হাতপাখা, পাখি, বিয়ের জন্য মুকুট ও ময়ূর তৈরি করেন। পরে সেগুলো মেলায় বিক্রি করেন। এসব তৈরিতে শোলার পাশাপাশি রং, আঠা, কাগজ ও সুতার প্রয়োজন হয়। প্রতিটি জিনিস তৈরিতে খরচ হয় ৩ টাকা এবং বিক্রি হয় ২০-২৫ টাকায়। এ বছর তিনি ১৫ হাজার টাকার পণ্য বিক্রি করবেন বলে আশা করেছেন। 

গৃহবধূ দিপালী মালাকার জানান, তার পরিবারের সদস্যরা শোলা দিয়ে ফুল তৈরি করে পরিবারের খরচ মেটান। গত বছর তারা ২০ হাজার টাকার ফুল বিক্রি করেছিলেন। দুর্গাপূজা ও লক্ষ্মীপূজায় তারা প্রায় ৩০ হাজার টাকার ফুল বিক্রি করবেন বলে প্রত্যাশা করছেন।

কালীগঞ্জ মহিলা কলেজের শিক্ষার্থী বৃষ্টি মালাকার জানায়, সে পড়াশোনার ফাঁকে ও ছুটির দিনে ফুল তৈরি করে বেশ ভালো টাকা উপার্জন করে। এই টাকা দিয়ে সে পড়াশোনার খরচসহ জামা-কাপড় কিনতে পারে।

শোলা দিয়ে টুপি, হাতপাখা, পাখি, বিয়ের জন্য মুকুট ও ময়ূর তৈরি করা হয়। ছবি: স্টার

শৈলকূপা থেকে আসা শোলার ফুলের পাইকারি ব্যবসায়ী সুশান্ত কুমার বিশ্বাস জানান, তিনি ভাটপাড়া গ্রাম থেকে শোলার তৈরি ফুল সংগ্রহ করে দেশের বিভিন্ন জেলায় বিক্রি করেন। এগুলো অন্য জেলায় পাওয়া যায় না। কিছু মালাকার সম্প্রদায়ের মানুষ শোলা থেকে এই ফুল তৈরি করেন।

কালীগঞ্জের সুন্দরপুর-দুর্গাপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ইলিয়াস রহমান মিঠু দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'ভাটপাড়া গ্রামের মালাকার সম্প্রদায়ের মানুষেরা শোলার ফুল তৈরি করে জীবিকা নির্বাহ করেন এবং পরিবারের সব খরচ মিটিয়ে থাকেন। এ কাজে তাদের আরও পৃষ্ঠপোষকতা দরকার।'

Comments

The Daily Star  | English

Pakistan minister denies nuclear body meeting after offensive launched on India

Pakistan's military said earlier that the prime minister had called on the authority to meet. The information minister did not respond immediately to a request for comment.

1h ago