বাংলাদেশ

প্ররোচনা ছাড়া কুমিল্লার ঘটনা ঘটেছে আমরা মনে করি না: স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী

কুমিল্লার পূজামণ্ডপের ঘটনাটি ‘কারো’ প্ররোচনায় হয়েছে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে সংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ কথা বলেন।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। ছবি: স্টার ফাইল ছবি

কুমিল্লার পূজামণ্ডপের ঘটনাটি 'কারো' প্ররোচনায় হয়েছে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে সংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ কথা বলেন।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, যে লোকটি করেছেন ভিডিও ক্যামেরার মাধ্যমে তাকে আমরা চিহ্নিত করেছি। দেখা গেছে একটা মাজারের সঙ্গে মসজিদে তিনি রাত ৩টার দিকে ৩ বার গিয়েছেন। সেখানে অবস্থান করেছেন। আরও ২ জনের সঙ্গে কথা বলেছেন। আমাদের অভিজ্ঞ টিম দীর্ঘক্ষণ বিশ্লেষণ করে সুনিশ্চিত হয়েছেন, ওই ব্যক্তি মসজিদ থেকে কোরআন শরিফ এনে রেখেছেন। এটা তারই কাজ। আমরা যতটুকু দেখেছি, তিনি কোরআন শরিফ রেখে গদা কাঁধে করে নিয়ে এসেছেন। এই লোকটি কার প্ররোচনায়, কার নির্দেশে, কীভাবে কাজটি করল— পরিকল্পনা অনুযায়ী করেছে; একবার গেছে আবার এসেছে আবার গেছে। ২-৩ বার আসা-যাওয়ার মধ্যে সে এই কাজটি শেষ করেছে। এটা নির্দেশিত হয়ে বা কারো প্ররোচনা ছাড়া কাজটি করেছে বলে এখনো আমরা মনে করি না। তাকে ধরতে পারলে বাকি সব কিছু আমরা উদ্ধার করতে পারবো বলে আমরা বিশ্বাস করি।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আরও বলেন, তিনি কোনো মোবাইল ফোন ব্যবহার করছেন না। যারা তাকে পাঠিয়েছিল তারাও হয়তো আমি এখনো বলতে পারছি না— লুকিয়ে রাখতে পারে। আমরা তাকে বের করার জন্য সর্বাত্মক প্রচেষ্টা নিয়েছি।

সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সকালে ৯৯৯ এ ফোন পেয়ে ওসি তাৎক্ষণিকভাবে ঘটনাস্থলে গেছেন। সরকারি গাড়ি ছিল না, একটি স্কুটারে করে তিনি তাৎক্ষণিকভাবে চলে গেছেন। যেহেতু কোরআন শরিফ, যথেষ্ট শ্রদ্ধার সঙ্গে তিনি কোরআন শরিফ বুকে নিয়ে বের হয়েছেন। কে বা কারা তার ভিডিও করেছেন তিনি খেয়াল করেছেন কি না আমি জানি না। খেয়াল করলে নিশ্চয়ই তিনি বলতেন ভিডিও করা থেকে বিরত থাকুন। যে করেছে তাকেও আমরা দেখেছি, জিজ্ঞাসাবাদ চলছে।

আমি সব সময় বলে আসছি, এই ঘটনাটা সাজানো ঘটনা হতে পারে, উদ্দেশ্যমূলক হতে পারে। আমরা সব সময় বলে আসছি, যেটুকু আমাদের সন্দেহ ছিল সেটা পরিষ্কার করতে হলে জিজ্ঞাসাবাদ করতে হবে— বলেন তিনি।

তিনি বলেন, আমাদের নিরাপত্তা বাহিনী তৎপর থাকায় কুমিল্লায় আর কিছু ঘটেনি। তারপরে হয়েছে হাজীগঞ্জে। সেখানে ফেসবুকের বদৌতলে লোকজন উত্তেজিত হয়ে মন্দিরে হামলা চালিয়েছে। সেই মন্দির রক্ষার জন্য পুলিশ প্রথমে রাবার বুলেট ছুড়েছে, টিয়ারগ্যাস ছেড়েছে, এমন একটা পর্যায় আসে তাদের সাপ্লাই সর্ট হয়ে আসে, তারা একদম নিরুপায় হয়ে বুলেট ইউজ করে। এসব জায়গায় পুলিশ সাধারণত রাবার বুলেট ছাড়া গুলি ছোড়েন না কিন্তু তারা মন্দির রক্ষা ও তাদের বাঁচানোর জন্য ছুড়তে বাধ্য হয়েছেন। নোয়াখালীতে বিজর্সন ১২টার মধ্যে তারা শেষ করেছে। জুমার নামাজও শেষ হয়েছে। ২টার মধ্যে সব মুসলমান বাসায় ফিরে গেছেন। আড়াইটার দিকে আমাদের পুলিশ লাঞ্চে গিয়েছিল, সে সময় পাশের মাদ্রাসা থেকে কয়েজন এসে বুঝে হোক আর না বুঝে মন্দিরে হামলা করে। আমরা কাউকে প্রাপ্ত বয়স্ক বলবো না, তারা সবাই টিনএজার। যতন সাহা নামে একজনকে হাসপাতালে নেওয়ার পরে মৃত্যুবরণ করেন। গুলি বর্ষণ বা ধারালো অস্ত্র দিয়ে মারধর হয়নি। আরেকটা ছেলে ভয়ে পুকুরে পড়ে মারা গেছে। রাতে কেউ বলেনি, ছেলেটি মিসিং। বললে খুঁজে বের করা যেত। সকালে তার মরদেহ পুকুরে ভেসে উঠে। এই নিয়ে ৭ জনের মৃত্যু হয়েছে।

রংপুরে পরিতোষ সরকার ফেসবুকে ধর্মীয় উসকানি দিয়ে ঘটনাটি ঘটিয়েছে। তিনি ফেসবুকে কাবা শরিফ নিয়ে কুরুচিপূর্ণ স্ট্যাটাস দেন। এটা দেখে তার বন্ধুরা উত্তেজিত হয়ে যায়। তার মুসলমান বন্ধুরাও পোস্ট দেয় এবং সবাইকে বিচার করার জন্য আহ্বান করে। এতেই ঘটনাটি ঘটে। পুলিশ মনে করেছে ছেলেটা যে গ্রামের বাসিন্দা সেই গ্রামের হামলা হবে। তারা নিরাপত্তা দিয়েছিল। চিহ্নিত কতগুলো গ্রামের লোক ওই গ্রাম থেকে কয়েক কিলোমিটার দূরে একটি গ্রামে হামলা করে। বাড়ি-ঘরে অগ্নিসংযোগ করে এবং লুট করে। রামুর তদন্ত শেষ হয়েছে। সেখানে সাক্ষী যাচ্ছে না। নাসির নগরের একটি মামলা বাকি রয়েছে, অন্য সবগুলো অভিযোপত্র দেওয়া হয়েছে। সেখানেও সাক্ষীরা যাচ্ছে না। ভোলার ঘটনায় দুপক্ষের মধ্যে মীমাংসা হয়েছে, সেখানে আর অসুবিধা হয়নি। পুলিশ জানিয়েছে, সাক্ষীরা এখন সাক্ষী দিতে চায় না। তারা অনীহা প্রকাশ করছে। সেই কারণে বিচার দেরি হতে পারে। বিচার বিভাগ সম্পূর্ণ স্বাধীন। তারা তাদের জুরিসডিকশানে চলে, বলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।

আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, কোথাও আতঙ্ক নেই। এগুলো বিচ্ছিন্ন ঘটনা ঘটিয়েছে। উদ্দেশ্যমূলকভাবে ঘটিয়েছে। আকস্মিকভাবে যেগুলো হয়েছে। এখন পরিবেশ সম্পূর্ণ শান্ত আছে। সবাই যার যার কাজে চলে গেছে।

Comments

The Daily Star  | English

Beyond Dollar: Bangladesh to seek over 36b yuan in Chinese loans

Bangladesh is going to seek more than 36 billion yuan, equivalent to $5 billion, as soft loans from China to reduce pressure on its dollar reserves.

6h ago