কপ২৬ সম্মেলনের খুঁটিনাটি

ছবি: রয়টার্স

স্কটল্যান্ডের গ্লাসগোতে জাতিসংঘ জলবায়ু পরিবর্তন শীর্ষ সম্মেলনে (কপ২৬) ২০০টি দেশের প্রতিনিধিরা অংশগ্রহণ করছেন এবং বৈশ্বিক উষ্ণায়ন ঠেকাতে সবচেয়ে কার্যকর উদ্যোগগুলো কী হতে পারে, তা নিয়ে আলোচনা চলছে।

সংবাদ সংস্থা এপি জানিয়েছে, গতকাল রোববার শুরু হওয়া এই সম্মেলন চলবে ১৩ নভেম্বর পর্যন্ত। এই সম্মেলনে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে আলোচনা হবে এবং সে আলোচনায় কিছু বিশেষায়িত শব্দ ঘুরেফিরে বারবার ব্যবহৃত হবে। এখানে এসব শব্দ ও বিষয়বস্তুর সংক্ষিপ্ত বর্ণনা দেওয়া হলো।

কপ

'কনফারেন্স অফ দ্য পার্টিস টু দ্য ইউএন ফ্রেমওয়ার্ক কনভেনশন অন ক্লাইমেট চেঞ্জ' এর সংক্ষিপ্ত রূপ হচ্ছে কপ।

এই সম্মেলন প্রথম অনুষ্ঠিত হয় ১৯৯৫ সালে, যেখানে মূলত ১৯৯২ সালে কিয়োটো প্রোটোকলে সই করা দেশগুলো অংশ নিয়েছিল। সেবারই প্রথমবারের মতো কিছু দেশ গ্রিনহাউজ গ্যাস নিঃসরণকে নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য অঙ্গীকারবদ্ধ হয়েছিল এবং এ দেশগুলোই পরে ২০১৫ সালে প্যারিস চুক্তিতে সই করে। ৬ বছর আগে ফ্রান্সের রাজধানীতে সরকার প্রধানরা দুটি লক্ষ্যমাত্রার ব্যাপারে একমত হন।

শিল্প বিপ্লব শুরু হওয়ার আগের সময়ের সঙ্গে তুলনায় প্রাথমিক লক্ষ্যমাত্রা হিসেবে বৈশ্বিক উষ্ণতাকে দুই ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে (৩ দশমিক ৬ ডিগ্রি ফারেনহাইট) রাখার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। তবে এ শতকের শেষ নাগাদ একে ১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস বা তার নিচে নামানোর বিষয়েও সিদ্ধান্ত হয়।

২৬তম কপ সম্মেলন করোনাভাইরাস মহামারির কারণে ইতোমধ্যে এক বছর পিছিয়েছে। গ্লাসগোর সম্মেলনের জন্য ২৫ হাজারের বেশি প্রতিনিধি নিবন্ধন করেছেন এবং এই সম্মেলনের সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন ব্রিটিশ কর্মকর্তা আলোক শর্মা।

হাই লেভেল সেগমেন্ট

১০০ জনেরও বেশি বিশ্ব নেতা সোম ও মঙ্গলবারে সম্মেলনের উদ্বোধনী আলোচনায় অংশগ্রহণ করবেন, যেটি হাই লেভেল সেগমেন্ট (উচ্চ-পর্যায়ের বৈঠক) হিসেবে পরিচিত। অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে আছেন মার্কিন রাষ্ট্রপতি জো বাইডেন ও যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন।

প্রথম কপ সম্মেলনের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছিলেন বিদায়ী জার্মান চ্যান্সেলর অ্যাঙ্গেলা মেরকেল। এ সম্মেলন হবে তার সর্বশেষ কিছু আন্তর্জাতিক বৈঠকের মধ্যে একটি। এই বৈঠকে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিরও অংশ নেওয়ার কথা রয়েছে।

রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথ এবং পোপ ফ্রান্সিস তাদের গ্লাসগো যাত্রা বাতিল করেছেন। চীনের শি জিনপিং, রাশিয়ার ভ্লাদিমির পুতিন ও ব্রাজিলের জেইর বলসোনারো সশরীরে অংশ না নিলেও ভিডিও বার্তা পাঠাবেন।

এনডিসি

প্যারিস চুক্তিতে স্বাক্ষরকারী দেশগুলো কীভাবে প্যারিস চুক্তির লক্ষ্যমাত্রায় পৌঁছুবে, সে বিষয়টি প্রতিটি দেশের হাতে ছেড়ে দেওয়া হয় এবং আশা করা হয় তারা নিঃসরণ কমানোর জন্য সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা জমা দেবে, যেটি ন্যাশনালি ডিটারমাইন্ড কন্ট্রিবিউশান বা এনডিসি নামে পরিচিত।

প্যারিস রুলবুক

চুক্তি স্বাক্ষরের কয়েক বছরের মধ্যে তথাকথিত 'প্যারিস রুলবুক' (প্যারিস নীতিমালা) তৈরি করার কথা ছিল, কিন্তু চুক্তির কিছু বিষয়বস্তু এখনো অমীমাংসিত আছে।

অমীমাংসিত বিষয়গুলোর মধ্যে আছে কীভাবে দেশগুলো স্বচ্ছতার সঙ্গে গ্রিনহাউজ গ্যাস নিঃসরণের তথ্য সংগ্রহ করবে এবং তা প্রকাশ করবে এবং কীভাবে বৈশ্বিক কার্বনের বাজারকে নিয়ন্ত্রণ করা হবে।

ক্লাইমেট ফাইন্যান্স (জলবায়ু অর্থায়ন)

কপ২৬ সম্মেলনের সবচেয়ে বড় প্রশ্নবোধক চিহ্ন হচ্ছে কীভাবে গরিব দেশগুলো সাশ্রয়ী, জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার থেকে সরে এসে অপেক্ষাকৃত দামি নবায়নযোগ্য জ্বালানি ব্যবহার শুরু করবে। একইসঙ্গে, ইতোমধ্যে জলবায়ুর ওপর বৈশ্বিক উষ্ণতার যে প্রভাব পড়েছে, তার সঙ্গে দেশগুলো কীভাবে মানিয়ে নেবে, সে বিষয়টিও নিশ্চিত নয়। এক্ষেত্রে বড় আকারের অর্থায়নের প্রয়োজন।

সংশ্লিষ্ট সবাই মোটামুটি একমত, ধনী রাষ্ট্রগুলো, যারা মূলত গ্রিনহাউজ গ্যাস নিঃসরণের জন্য সবচেয়ে বেশি দায়ী, তাদেরকেই এ ব্যাপারে এগিয়ে আসতে হবে।

জাস্ট ট্রানজিশন (ন্যায়সঙ্গত রূপান্তর)

বিভিন্ন দেশের সরকার একটি বিষয়ের ওপর জোর দিয়েছে। এটি হচ্ছে জীবাশ্ম জ্বালানি খাতে কর্মরত লাখো মানুষের জন্য 'সবুজ' কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা।

এটি উন্নয়নশীল দেশ ও ধনী দেশ, উভয়ের জন্যই একটি বড় চিন্তার বিষয়। এমনকি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অনেক অঞ্চলেও কয়লা ও তেলের খনি ভিত্তিক অর্থনীতি গড়ে উঠেছে।

অর্থাৎ জীবাশ্ম জ্বালানি খাত থেকে নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতে রূপান্তরের বিষয়টি ন্যায়সঙ্গত হতে হবে।

কার্বন সিংক

গাছ, জলাভূমি ও সমুদ্র অবিরাম বায়ুমণ্ডল থেকে কার্বন ডাই-অক্সাইড শুষে নিচ্ছে।

জলবায়ু পরিবর্তনের সমীকরণের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হচ্ছে কতটুকু কার্বন ডাই-অক্সাইড এসব কার্বন সিংক শুষে নিচ্ছে এবং সংরক্ষণ করছে তার সঠিক হিসাব করা।

অনেক দেশ মনে করছে তারা তাদের নিঃসরণের বেশিরভাগ অংশ নিজেদের প্রাকৃতিক সম্পদ ব্যবহার করেই সমন্বয় করতে পারবে। তবে বিজ্ঞানী ও জলবায়ু আন্দোলনকারীরা এ বিষয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন।

গ্রেটা ফ্যাক্টর

সুইডেনের জলবায়ু আন্দোলনকারী গ্রেটা থানবার্গ জানান, তিনি সকল আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু হতে চান না। তিনি চান উন্নয়নশীল দেশের কর্মীদের কথাও সবাই শুনুক। গ্রেটা থানবার্গ সংক্রান্ত আলোচনাগুলোকে 'গ্রেটা ফ্যাক্টর' বলা হচ্ছে।

তবে থানবার্গ সারা বিশ্বের অন্যতম জনপ্রিয় একজন পরিবেশ কর্মী এবং শনিবারে তিনি ট্রেনে করা গ্লাসগো আসার পর তার ভক্ত ও সাংবাদিকরা তাকে একজন রক সংগীত তারকার মতো বরণ করে নেন।

জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস স্বীকার করেছেন, জলবায়ু আন্দোলনের সমাবেশ এই বিষয়টিকে গুরুত্বসহকারে বিবেচনা করার জন্য বৈশ্বিক নেতাদের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে সমর্থ হয়েছে।

'অ্যাকশনের জন্য চাপ অব্যাহত রাখুন', শনিবার তরুণদের একটি সম্মেলনে বলেন গুতেরেস।

Comments

The Daily Star  | English

Not going anywhere till the job is done: Adviser Wahiduddin Mahmud

When asked about the chief adviser's resignation the adviser said, 'But he did not say he was leaving'

55m ago