অর্থনীতির প্রধান সব খাতেই বেড়েছে রপ্তানি
রপ্তানিকারকরা একের পর এক নতুন রেকর্ড সৃষ্টি করছেন। অক্টোবরে বাংলাদেশ থেকে ৪ দশমিক ৭২ বিলিয়ন ডলার রপ্তানি হয়েছে, যেটি এক মাসে এ যাবৎ সর্বোচ্চ।
রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) গতকাল মঙ্গলবার যে তথ্য প্রকাশ করেছে তাতে গত বছরের অক্টোবরের তুলনায় এই আয় ৬০ দশমিক ৩৭ শতাংশ বেশি। অক্টোবরের আয় সেপ্টেম্বরের ৪ দশমিক ১৭ বিলিয়ন ডলারের রপ্তানি আয়ের রেকর্ডও ভেঙেছে।
এর পেছনে সবচেয়ে বড় অবদান রেখেছে তৈরি পোশাক খাত। সাধারণত দেশের মোট রপ্তানির ৮৫ শতাংশই আসে এই খাত থেকে। বেশ কিছু কারণে গত মাসে পোশাক রপ্তানি বেড়েছে।
চীন, ভিয়েতনাম, ভারত ও মিয়ানমারে পোশাক উৎপাদনের খরচ বেড়ে যাওয়ায় সেসব দেশের বেশ কিছু অর্ডার আমাদের দেশে এসেছে।
গত বছর আন্তর্জাতিক ক্রেতারা করোনা মহামারির কারণে সৃষ্ট মন্দার কারণে প্রায় ৩ দশমিক ১৮ বিলিয়ন ডলারের অর্ডার সাময়িক ভাবে বাতিল অথবা স্থগিত রেখেছিল। এসব অর্ডারের বিপরীতে মূল্য পরিশোধের সমন্বয় থেকে অক্টোবরের আয়ের একটি বড় অংশ এসেছে।
উন্নত দেশের বেশিরভাগ মানুষ ইতোমধ্যে ভ্যাকসিনের ডোজ সম্পন্ন করায় তাদের অর্থনীতি স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরছে। এ কারণে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের ক্রেতারা বড়দিনের সময় বিক্রি করার জন্য বাংলাদেশ থেকে বড় চালানে পণ্য কিনছেন।
এছাড়াও, রপ্তানিকারকরা জানান, ক্রেতারা জাহাজে করে পণ্যের চালান পাঠানোর এবং কাঁচামালের বাড়তি খরচ বিবেচনায় বাংলাদেশে তৈরি পোশাকের জন্য অপেক্ষাকৃত ভালো দাম দিয়েছেন।
বর্তমান অর্থবছরের প্রথম চার মাসে (জুলাই থেকে অক্টোবরে) তৈরি পোশাক রপ্তানি থেকে আয়ে এসেছে ১২ দশমিক ৬২ বিলিয়ন ডলার, যেটি আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ২০ দশমিক ৭৮ শতাংশ বেশি।
ইপিবির দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, উল্লিখিত আয়ের ৭ দশমিক ২১ বিলিয়ন এসেছে নিটওয়্যার রপ্তানি থেকে। এই পণ্যের রপ্তানির প্রবৃদ্ধি ২৪ দশমিক ২৭ শতাংশ। ওভেন পোশাকের রপ্তানি ১৬ দশমিক ৪১ শতাংশ বেড়ে ৫ দশমিক ৪১ বিলিয়ন হয়েছে।
পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ সহসভাপতি শহিদুল্লাহ আজিম দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, মহামারি পরিস্থিতির উন্নতি হওয়াতে মানুষ এখন তাদের বাসা থেকে বের হচ্ছে এবং এ কারণে পোশাকের চাহিদা বাড়ছে।
তিনি জানান, দেশের রপ্তানিকারকরা এখন চীন, ভারত ও ভিয়েতনামের অর্ডারগুলো পাচ্ছেন, যার পরিমাণ বেশ ভালো। এ প্রেক্ষাপটে যদি তারা তাদের উৎপাদন সক্ষমতার সম্প্রসারণ ঘটান, তাহলে রপ্তানির পরিমাণ বাড়তে থাকবে।
তিনি জানান, 'এশিয়ার বাজারে আমাদের রপ্তানি বাড়ছে।' তিনি যোগ করেন, বিলম্বিত পেমেন্টগুলো এখন ক্রেতারা পরিশোধ করছেন।
তবে এই উদ্যোক্তা চীনে বিদ্যুৎ বিভ্রাটের কারণে সাপ্লাই চেইন বিঘ্নিত হওয়ার বিষয়ে সতর্ক করেন, কারণ বাংলাদেশ ওভেন পোশাক তৈরিতে ব্যবহৃত কাপড়ের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ চীন থেকে আমদানি করে।
তিনি জানান, রপ্তানির গতিশীলতা ধরে রাখার জন্য বাংলাদেশকে সড়ক, নৌবন্দর, বিমানবন্দর ও যোগাযোগ অবকাঠামোর ক্ষেত্রে উন্নতি করতে হবে।
লেদার ফুটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (এলএফএমইএবি) সভাপতি সাইফুল ইসলাম শহিদুল্লাহ আজিমের সঙ্গে একমত হন এবং জানান, রপ্তানির উচ্চ ধারা অব্যাহত থাকবে।
তিনি আরও বলেন, 'সারা বিশ্বের দেশগুলো একক ভাবে একটি দেশের ওপর নির্ভরতা কমাচ্ছে এবং সে দেশটি হচ্ছে চীন।'
তিনি জানান, স্থানীয় ভাবে তৈরি পণ্যের মূল্য ধীরে ধীরে বেড়ে যাচ্ছে, কারণ উৎপাদনকারীরা এখন উচ্চ-মানের পণ্যগুলো দেশের দুই বৃহত্তম রপ্তানি গন্তব্য, ইউরোপ এবং যুক্তরাষ্ট্রে পাঠাচ্ছেন।
'তবে লম্বা লিড টাইম এখনও একটি বড় চ্যালেঞ্জ', বলেন তিনি। কোনো পণ্যের ক্রয়াদেশ দেওয়ার তারিখ থেকে গুদামে পণ্য পৌঁছাতে যে সময় লাগে তাকে লিড টাইম বলা হয়।
সার্বিকভাবে, জুলাই থেকে অক্টোবরে রপ্তানি থেকে আয়ের পরিমাণ ২২ দশমিক ৬২ শতাংশ বেড়ে ১৫ দশমিক ৭৪ বিলিয়ন হয়েছে।
হিমায়িত ও জ্যান্ত মাছ রপ্তানি ১৭ দশমিক ৪৬ শতাংশ বেড়ে ২২৫ দশমিক ২৩ মিলিয়ন, কৃষিপণ্য ২৯ দশমিক ৩৪ শতাংশ বেড়ে ৪৬১ দশমিক ১১ মিলিয়ন এবং চামড়া ও চামড়াজাত পণ্যের রপ্তানি বড়ে ২৮ দশমিক ৮৫ শতাংশ বেড়ে ৩৬৪ দশমিক ৯ মিলিয়ন হয়েছে।
এই ৪ মাসে, রপ্তানি বাজারে টেরি টাওয়েলের বিক্রি ৩১ দশমিক ৯০ শতাংশ বেড়েছে এবং আয়ের পরিমাণ হয়েছে ১৬ দশমিক ৮৩ মিলিয়ন। হোম টেক্সটাইলের রপ্তানি ১৬ দশমিক ৫২ শতাংশ বেড়ে ৪১২ দশমিক ৭৮ মিলিয়ন হয়েছে।
তবে পাট ও পাটজাত পণ্যের রপ্তানি ২৪ দশমিক ১১ শতাংশ কমে ৩৩২ দশমিক ৯৮ মিলিয়ন হয়েছে।
অনুবাদ করেছেন মোহাম্মদ ইশতিয়াক খান
Comments