আইসিটি খাতে ২০২৬ সালের মধ্যে নারীর অংশগ্রহণ হবে ২৫ শতাংশ: প্রধানমন্ত্রী

‘একইসঙ্গে সংঘাত ও রাজনৈতিক কারণে উপদ্রুত ও বাস্তুচ্যুত জনগোষ্ঠীর দিকে মনোযোগ দেওয়াও অত্যন্ত জরুরি বলে আমি মনে করি।’
আইসিটি খাতে নারীর অংশগ্রহণ
আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা | ছবি: টেলিভিশন থেকে নেওয়া

বর্তমান সরকার শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ দেওয়ার মাধ্যমে জনসংখ্যাকে জনশক্তিতে পরিণত করতে কাজ করছে বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

তিনি আরও জানান, বর্তমানে বাংলাদেশের শ্রমশক্তির ৪২ দশমিক ছয় শতাংশ নারী। ২০৩০ সালের মধ্যে যা ৫০ শতাংশে উন্নীত হবে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'আইসিটি খাতে ২০২৬ সালের মধ্যে ২৫ শতাংশ এবং ২০৪১ সালের মধ্যে ৫০ শতাংশ নারীর অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার কার্যক্রম আমরা গ্রহণ করেছি।'

আজ বুধবার সকালে ঢাকার হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে আইসিপিডি৩০ গ্লোবাল ডায়ালগ: ডেমোগ্রাফিক ডাইভারসিটি অ্যান্ড সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট শীর্ষক আন্তর্জাতিক সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'বাংলাদেশে স্বাধীনতার পরেই ১৯৭২ সালে আমাদের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান জনস্বাস্থ্যের উন্নতি সাধনকে রাষ্ট্রের অন্যতম মৌলিক দায়িত্ব হিসেবে আমাদের সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করেন। তার দিক-নির্দেশনায় প্রণীত ১৯৭৩-৭৮ মেয়াদের প্রথম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় জনসংখ্যার সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার ওপর সর্বোচ্চ গুরুত্বারোপ করা হয়। তিনি একটি উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন ন্যাশনাল পপুলেশন কাউন্সিল গঠন করেন, রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে যার সভাপতি ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব নিজেই।'

তিনি বলেন, 'তবে আমাদের দুর্ভাগ্য, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট সপরিবারে আমার পিতা, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। এর পরই এ দেশে অগণতান্ত্রিক সরকার, মার্শাল ল' সরকার ক্ষমতায় আসে এবং সমস্ত অর্জনগুলো একে একে নষ্ট করে দেয়।'

শেখ হাসিনা বলেন, '১৯৯৬ সালে দীর্ঘ সংগ্রামের পথ পারি দিয়ে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করে। আমরা দায়িত্ব নেওয়ার পরই জাতির পিতা শেখ মুজিবের পদাঙ্ক অনুসরণ করে সকলের জন্য স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে নতুন করে জাতীয় স্বাস্থ্যনীতি প্রণয়ন করি। দরিদ্র জনগোষ্ঠীর, বিশেষ করে মা ও শিশুর স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার জন্য তৃণমূল পর্যায়ে সেবা পৌঁছানোর লক্ষ্যে প্রতি ছয় হাজার নাগরিকের জন্য সারা দেশে ১৮ হাজার কমিউনিটি ক্লিনিক স্থাপন করার কাজ শুরু করি। সেই সময় আমরা জাতীয় পুষ্টি কর্মসূচি গ্রহণ করি, যার মূল লক্ষ্য ছিল শিশু ও গর্ভবতী মায়েদের বিদ্যমান অপুষ্টি কমিয়ে আনা।'

তিনি আরও বলেন, 'নারীর উন্নয়ন ও ক্ষমতায়নেও আমরা বিশেষ উদ্যোগ গ্রহণ করি। নারী ও পুরুষের মধ্যে অসমতা দূরীকরণ, নারী শিক্ষার বিস্তার ও অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে তাদের অংশগ্রহণ বৃদ্ধি করার ক্ষেত্রেও ছিল আমাদের আন্তরিক প্রয়াস।'

আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, 'আমাদের আবারও দুর্ভাগ্য নেমে আসে ২০০১ থেকে ২০০৮ পর্যন্ত আমরা সরকারে ছিলাম না। ২০০১ এ যে সরকার এসেছিল বিএনপি-জামায়াত জোট, তারা আমার কমিউনিটি ক্লিনিক সব বন্ধ করে দেয়। আমাদের দেশের মানুষ যে প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবাটা পাবে, সে সুযোগটাও বন্ধ হয়ে যায়। এর ফলে আমাদের জনসংখ্যা উন্নয়ন ও সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনায় স্থবিরতা নেমে আসে।

'২০০৯ সালে জনগণের বিপুল ভোটে নির্বাচিত হয়ে পুনরায় আমরা সরকারে আসি। দায়িত্ব পাওয়ার পরপরই আমরা আইসিপিডি প্রোগ্রাম অব অ্যাকশনের ১৫টি মূলনীতি বাস্তবায়নে জাতীয় জনসংখ্যা নীতি ২০১২ প্রণয়ন করি। মাতৃমৃত্যু ও নবজাতক মৃত্যুহার হ্রাস, মা ও নবজাতকের স্বাস্থ্যসেবা, শিশু ও কিশোর-কিশোরী প্রজনন স্বাস্থ্য, পুষ্টি ও পরিবার পরিকল্পনা সেবা প্রদানে ব্যাপক কর্মসূচি আমরা বাস্তবায়ন শুরু করি,' যোগ করেন তিনি।

আওয়ামী লীগ সরকারের উদ্যোগের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, 'দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যে বন্ধ হয়ে যাওয়া কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো পুনরায় চালু করি। বর্তমানে সারা দেশে ১৪ হাজারেরও বেশি কমিউনিটি ক্লিনিক চালু আছে। এগুলোর মাধ্যমে মাতৃ ও শিশু স্বাস্থ্যসেবাসহ ৩০ প্রকারের অতি প্রয়োজনীয় ওষুধ বিনামূল্যে আমরা প্রদান করছি। এর মধ্যে প্রায় তিন হাজার ক্লিনিকে স্কিলড বার্থ অ্যাটেনডেন্স সেবা প্রদান করা হচ্ছে।

'এছাড়াও, পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের অধীন তিনি হাজার ২৯০টি ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র বা পরিবার পরিকল্পনা ক্লিনিক হতে মা, শিশু ও বয়ঃসন্ধিকালীন স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা সেবা প্রদান করা হচ্ছে। এর মধ্যে, দুই হাজার ২০০টি কেন্দ্র হতে সার্বক্ষণিক স্বাভাবিক প্রসব সেবা প্রদান করা হচ্ছে। প্রসূতিসেবা প্রদানের জন্য এসব কেন্দ্রে চারজন করে ধাত্রী নিয়োগের পরিকল্পনাও গ্রহণ করা হয়েছে। তাদের বিশেষ প্রশিক্ষণের ব্যবস্থাও আমরা নিয়েছি,' বলেন তিনি।

শেখ হাসিনা বলেন, '২০১০ সালে জাতিসংঘ সদর দপ্তরে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে আমি ৩০ হাজার ধাত্রী নিয়োগের অঙ্গীকার করেছিলাম। এর ধারাবাহিকতায় প্রায় ২০ হাজার ধাত্রী নিয়োগ দিতে সক্ষম হয়েছি। বাকি আমরা পর্যায়ক্রমিকভাবে দিয়ে দেবো। আমরা ইতোমধ্যে প্রায় তিন হাজার মিডওয়াইফারি ট্রেনিং দিয়ে দিয়েছি। মাতৃ স্বাস্থ্যসেবা জরুরি প্রসূতি সেবা নিশ্চিত করতে ফ্রি অ্যাম্বুলেন্স সেবা চালু করা হয়েছে। মা টেলি হেলথ সার্ভিসের মাধ্যমে প্রসূতি মায়ের গর্ভকালীন ও প্রসব পরবর্তী সেবা প্রদানের জন্য উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। মা ও শিশুর পুষ্টি চাহিদা পূরণ এবং শিশুর শারীরিক বৃদ্ধি ও মানসিক বিকাশের জন্য মা ও শিশু সহায়তা কর্মসূচি বাস্তবায়নের মাধ্যমে ১৩ লাখ উপকারভোগীকে আর্থিক সহায়তা প্রদান করা হচ্ছে।'

তিনি বলেন, 'সরকারি-বেসরকারি অফিস-আদালত, ব্যাংক-বিমা, শপিংমল, রেলওয়ে স্টেশনসহ বিভিন্ন জায়গায় ব্রেস্ট ফিডিং কর্নার স্থাপন করা হয়েছে। একইসঙ্গে সরকারি-বেসরকারি প্রতিটি কর্মস্থলে শিশু দিবাযত্ন কেন্দ্র স্থাপনের নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে এবং গার্মেন্টসগুলোতে শিশু দিবাযত্ন কেন্দ্র দেওয়া হয়েছে। গত ১৫ বছরে এসব উদ্যোগের ফলে বর্তমানে বাংলাদেশে শিশুমৃত্যুর হার প্রতি হাজারে ২১ জন, যা ২০০৬ সালে ছিল হাজারে ৮৪ জন। একইভাবে মাতৃমৃত্যু হার প্রতি লাখে ২০০৬ সালের ৩৭০ জন থেকে ১৩৬ জনে হ্রাস করা হয়েছে।'

বাংলাদেশকে ২০৪১ সালের মধ্যে বাল্যবিবাহমুক্ত করার কার্যক্রম এগিয়ে যাচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, 'বাল্যবিবাহ আইন সংশোধন, জাতীয় কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন, সচেতনতামূলক কার্যক্রম এবং নারী ও কন্যাশিশুদের কল্যাণে বিভিন্ন সরকারি উদ্যোগের ফলে বাল্যবিবাহের হার বহুলাংশে হ্রাস পেয়েছে। আমরা ইউনিয়ন পর্যায় পর্যন্ত বাল্যবিবাহ প্রতিরোধ কমিটি গঠন করে মানুষের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টি করছি। এছাড়াও, সমাজের বিভিন্ন স্তরের কিশোর-কিশোরীদের নিয়ে আট হাজারেরও অধিক কিশোর-কিশোরী ক্লাব স্থাপন করা হয়েছে।'

প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'তথ্য আপা প্রকল্পের মাধ্যমে নারীদের বিভিন্ন সমস্যা সমাধানের জন্য এক কোটি নারীকে তথ্যসেবা প্রদানের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। নারী ও শিশু নির্যাতন প্রতিরোধে ন্যাশনাল হেল্প লাইন ১০৯ চালুর মাধ্যমে যৌন হয়রানি প্রতিরোধ ও বাল্যবিবাহ বন্ধে কার্যকর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এ ছাড়াও, আমরা প্রতিটি থানায় নারী পুলিশের দায়িত্বে নারী, শিশু, বয়স্ক ও প্রতিবন্ধী সাপোর্ট ডেস্ক স্থাপন করেছি।

'বাল্য বিবাহ, যৌতুক ও নারীর প্রতি সহিংসতা রোধে সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলনের কোনো বিকল্প নেই। আমাদের মেয়েদের কেবল ভুক্তভোগী হিসেবে না দেখে, তাদের পরিবর্তনের মূল চালিকাশক্তি হিসেবে প্রস্তুত করতে হবে। আমরা জাতীয় কৈশোর স্বাস্থ্য বিষয়ক কৌশলপত্র (২০১৭-২০৩০) এবং এর বাস্তবায়নের জন্য জাতীয় কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন করেছি। কিশোর-কিশোরীদের স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করতে আমরা এক হাজার ২৫৩টি ইউনিয়ন পর্যায়ের সেবা কেন্দ্রে কৈশোরবান্ধব স্বাস্থ্য সেবা কর্নার প্রতিষ্ঠা করেছি,' বলেন তিনি।

শেখ হাসিনা আরও বলেন, 'ষষ্ঠ থেকে দ্বাদশ শ্রেণিতে অধ্যয়নরত প্রায় ৫০ লাখ কিশোরীকে বিনামূল্যে স্যানিটারি ন্যাপকিন বিতরণের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। স্কুলগামী শিক্ষার্থীদের পুষ্টি চাহিদা পূরণে আমরা দেশব্যাপী স্কুল মিল চালু করার উদ্যোগ নিয়েছি। অনেক ক্ষেত্রে আমরা চালু করেছি। তাছাড়া, প্রতিটি স্কুলে মেয়েদের জন্য বিশেষ ওয়াশ ব্লক আমরা তৈরি করে দিয়েছি।

'আমরা ২০১০ সাল থেকে মাধ্যমিক পর্যায়ে বিনামূল্যে পাঠ্যপুস্তক বিতরণে বিশ্বের সর্ববৃহৎ পাঠ্যপুস্তক বিতরণ কর্মসূচি চালু করেছি। ২০১০ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত প্রায় ৪৬৪ কোটি বই বিতরণ করা হয়েছে। উপরন্তু, নারী শিক্ষাকে এগিয়ে নেওয়ার জন্য প্রাথমিক থেকে মাধ্যমিক স্তর পর্যন্ত উপবৃত্তি চালু করা হয়েছে। দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত মেয়েদের শিক্ষা অবৈতনিক রয়েছে।
আমরা জাতীয় বাজেটের মোট ৩০ শতাংশ নারীর সামাজিক ও অর্থনৈতিক ক্ষমতায়নের জন্য বরাদ্দ রেখেছি। বেইজিং ঘোষণা ও কর্মসূচির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে জাতীয় নারী উন্নয়ন নীতি ও জাতীয় কর্মসূচি পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা হচ্ছে,' যোগ করেন শেখ হাসিনা।

বর্তমানে বাংলাদেশের শ্রমশক্তির ৪২ দশমিক ছয় শতাংশ নারী জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, '২০৩০ সালের মধ্যে যা ৫০ শতাংশে উন্নীত হবে। আইসিটি খাতে ২০২৬ সালের মধ্যে ২৫ শতাংশ এবং ২০৪১ সালের মধ্যে ৫০ শতাংশ নারীর অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার কার্যক্রম আমরা গ্রহণ করেছি।'

তিনি বলেন, 'বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামের গ্লোবাল জেন্ডার গ্যাপ রিপোর্ট-২০২৩ অনুযায়ী রাজনৈতিক ক্ষমতায়নে বিশ্বে ১৪৬টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান সপ্তম এবং এ অঞ্চলে প্রথম। এবারের দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে নারী প্রতিযোগীদের অংশগ্রহণ আগের সাধারণ নির্বাচনের তুলনায় ৩৮ দশমিক ২৪ শতাংশ বেশি ছিল।

'আমাদের সরকারের গৃহীত নানাবিধ পদক্ষেপের সুফল হিসেবে ২০২৩ সালে দেশের মানুষের গড় আয়ু বেড়ে হয়েছে ৭২ দশমিক তিন বছর। বর্তমানে আমাদের মোট জনসংখ্যার ৬২ শতাংশই কর্মক্ষম,' যোগ করেন তিনি।

আওয়ামী লীগ সভাপতি আরও বলেন, 'দেশে বর্তমানে মোট জনসংখ্যার নয় দশমিক ২৯ শতাংশ ষাটোর্ধ্ব বয়সী। প্রবীণদের স্বাস্থ্যসেবা, সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণে আমরা বিভিন্ন কর্মসূচি বাস্তবায়ন করে যাচ্ছি। ২০২৩ সালে আমরা ৫৮ লাখের বেশি প্রবীণ নাগরিকের জন্য বয়স্ক ভাতার ব্যবস্থা করেছি। এর পাশাপাশি অসহায় নারী, স্বামী পরিত্যক্তা, বিধবা, প্রতিবন্ধী ব্যক্তি, তৃতীয় লিঙ্গের মানুষ এবং সমাজের অন্যান্য প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর সামাজিক ও আর্থিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বিদ্যমান সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী সম্প্রসারিত করেছি। প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে প্রায় চার কোটি মানুষ সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর আওতায় এসেছে। এছাড়াও, আমরা সর্বজনীন পেনশন স্কিম চালু করেছি। ১৮ থেকে ৫০ বছর বয়সী যে কোনো নাগরিক এই পেনশন সুবিধা গ্রহণ করতে পারবেন।

'আমরা ২০২১ সালের মধ্যে জাতিসংঘের স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণের যোগ্যতা অর্জন করেছি। আমাদের ডিজিটাল বাংলাদেশ ভিশন বাস্তবায়ন করেছি। ২০৪১ সালের মধ্যে স্মার্ট বাংলাদেশ গঠনের দিকেও আমরা এগিয়ে যাচ্ছি। স্মার্ট বাংলাদেশের জন্য আমরা চারটি পিলার নির্ধারণ করেছি—স্মার্ট সিটিজেন, স্মার্ট গভর্নমেন্ট, স্মার্ট ইকোনোমি ও স্মার্ট সোসাইটি। এ লক্ষ্যে আমরা আমাদের জনগোষ্ঠীকে বিশেষভাবে তরুণ সম্প্রদায়কে আধুনিক প্রযুক্তি জ্ঞানসম্পন্ন দক্ষ জনশক্তিতে পরিণত করার জন্য ব্যাপক বিনিয়োগের উদ্যোগ নিয়েছি,' বলেন তিনি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'অতি সম্প্রতি আমরা জনসংখ্যানীতি ২০১২ যুগোপযোগী করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। নতুন নীতিতে ২০৪১ থেকে ২০৬১ পর্যন্ত যে ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ট অব্যাহত থাকবে তা কাজে লাগিয়ে জনসংখ্যাকে জনসম্পদে রূপান্তর করার, কর্মদক্ষতা সৃষ্টি ও উন্নয়ন এবং কর্মমুখী শিক্ষার প্রসারে আমরা গুরুত্ব আরোপ করছি।'

শুরু থেকেই বাংলাদেশ আইসিপিডি প্রোগ্রাম অব অ্যাকশন বাস্তবায়নে দৃঢ় প্রত্যয়ী উল্লেখ করে তিনি বলেন, 'আমরা চাই, সকল দেশ বিশেষ করে উন্নয়নশীল, স্বল্পোন্নত ও ক্ষুদ্র দ্বীপ রাষ্ট্রগুলো যাতে আইসিপিডির লক্ষ্যমাত্রাগুলো অর্জন করতে পারে। সে জন্য ইউএনএফপিএসহ অন্যান্য উন্নয়ন সহযোগীরা আরও কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণে উৎসাহী হবে। জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতিকর প্রভাবে জনস্বাস্থ্যসহ অন্যান্য স্বাস্থ্য ঝুঁকি থেকে বিশ্বের সকল মানুষের বিশেষ করে মা, শিশু ও বয়স্ক জনগোষ্ঠীর নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণে বৈশ্বিক সহযোগিতা আরও জোরদার করতে বিশেষভাবে দৃষ্টি দেওয়া প্রয়োজন বলে আমি মনে করি।

'একইসঙ্গে সংঘাত ও রাজনৈতিক কারণে উপদ্রুত ও বাস্তুচ্যুত জনগোষ্ঠীর দিকে মনোযোগ দেওয়াও অত্যন্ত জরুরি বলে আমি মনে করি। এ প্রসঙ্গে উল্লেখ করতে চাই, বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া মিয়ানমার থেকে জোরপূর্বক উচ্ছেদকৃত রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী এবং ইসরাইলের গণহত্যা ও আগ্রাসনের ফলে নিপীড়িত ফিলিস্তিনি জনগণের কথা। বিশেষ করে বিপুল সংখ্যক নারী ও শিশু ফিলিস্তিনে আজ প্রয়োজনীয় চিকিৎসা ও স্বাস্থ্য সেবা থেকে বঞ্চিত। প্রতিনিয়ত জীবন-মৃত্যুর সঙ্গে তারা লড়াই করছে। আমি আশা করি, জাতিসংঘসহ অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংস্থা সেখানে সকলের জন্য, বিশেষ করে নারী ও শিশুর জন্য প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে আরও কার্যকর ভূমিকা পালন করবে,' বলেন শেখ হাসিনা।

তিনি বলেন, 'আমরা যুদ্ধ চাই না, শান্তি চাই। কাজেই এ সমস্ত সংঘাত বন্ধ হোক, সেটাই আমরা কামনা করি।'

শেখ হাসিনা আরও বলেন, 'বিশ্বের বিপুল সংখ্যক জনগোষ্ঠীর জন্য প্রয়োজনীয় শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও অন্যান্য মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করার মাধ্যমে তাদের জনসম্পদে রূপান্তর করতে হবে। যার মাধ্যমে আমরা একটি সমৃদ্ধশালী বিশ্ব ব্যবস্থা গড়ে তুলতে সক্ষম হবো।

'এ লক্ষ্যে সর্বজনীন স্বাস্থ্য সেবা বিশেষ করে মা ও শিশু স্বাস্থ্য সেবা খাতে আন্তর্জাতিক অর্থায়নের পরিমাণ ও সহজ প্রাপ্যতা নিশ্চিত করার জন্য উন্নয়ন সহযোগী ও আন্তর্জাতিক আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর আরও আন্তরিক হতে হবে,' বলেন তিনি।

Comments