শিক্ষা খাতে গুরুত্ব না দেওয়ায় এসএসসিতে সীমিত সিলেবাসে পরীক্ষা

(বাম থেকে) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ইমেরিটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী, সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও গণস্বাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক রাশেদা কে চৌধুরী ও ঢাবির সাবেক ভিসি অধ্যাপক আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক। ছবি: সংগৃহীত

করোনা মহামারির কারণে এ বছর সময় ও সিলেবাস কমিয়ে শুধু বিভাগভিত্তিক বিষয়গুলোর ওপর পরীক্ষা হচ্ছে। আবশ্যিক বিষয়গুলোর ওপর কোনো পরীক্ষা নেওয়া হচ্ছে না।

আবশ্যিকসহ অন্যান্য বিষয়ের ওপর পরীক্ষা না হওয়ায় শিক্ষার্থীদের কী ধরনের ক্ষতি হবে এবং তা পূরণে করণীয় কী সে বিষয়ে জানতে দ্য ডেইলি স্টার কথা বলেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ইমেরিটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী, সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও গণস্বাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক রাশেদা কে চৌধুরী ও ঢাবির সাবেক ভিসি অধ্যাপক আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিকের সঙ্গে।

আবশ্যিক বিষয়গুলোর ওপর পরীক্ষা নেওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ছিল উল্লেখ করে কেউ কেউ বলেছেন, এতে করে শিক্ষার্থীদের যে ক্ষতি হবে তা অপূরণীয়। এই ক্ষতি কিছুটা পূরণে শিক্ষার্থীদের পরবর্তী ধাপে বিশেষ গুরুত্বসহকারে বাংলা ও ইংরেজির ওপর পাঠদান দিতে হবে। আবার কেউ বলেছেন, অটোপাশের চেয়ে সীমিত সিলেবাসে পরীক্ষা নেওয়াটা অনেক ভালো উদ্যোগ।

অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, 'ইংরেজি-বাংলা বিষয়ে পরীক্ষা না নেওয়ায় শিক্ষার্থীদের অপূরণীয় ক্ষতি হলো। ভাষা জ্ঞান না থাকলে কোনো পাঠই ফলপ্রসূ হয় না। এই বিষয়গুলোর গুরুত্ব সবার ওপরে সে কারণেই এগুলোকে আবশ্যিক করা হয়েছে।'

তিনি আরও বলেন, 'আমাদের দেশে এখন শিক্ষাখাতকে তেমন গুরুত্ব না দিয়ে অন্যান্য খাতকে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়। করোনার শুরু থেকেই সরকার শিক্ষাখাত নিয়ে অমনোযোগী ছিল। সরকার চাইলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করে সব বিষয়ে পরীক্ষা নিতে পারতো।'

অন্যান্য বিষয়ে পরীক্ষা না নেওয়ার ফলে যে ক্ষতি হয়েছে তা পূরণে আবশ্যিক বিষয়গুলোর ওপর অতিরিক্ত পাঠদানের পরামর্শ দেন দেশের খ্যাতিমান এই শিক্ষাবিদ।

তার মতে, 'শ্রেণিকক্ষে পড়াশোনা আরও বাড়াতে হবে। বাংলা ও ইংরেজি বিষয়ে আরও গুরুত্ব সহকারে পড়াতে হবে।'

গণস্বাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক ও সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা রাশেদা কে চৌধুরী বলেন, 'মহামারির মধ্যে পরীক্ষা না হওয়ার চেয়ে অত্যন্ত সীমিত সিলেবাসে পরীক্ষা নিয়ে অটোপাশের অপবাদ দূর করা অনেক উত্তম। শিক্ষার্থীদের মূল্যায়ন করা জরুরি ছিল বিধায় সীমিত সিলেবাসে স্বল্প সময়ে পরীক্ষা নেওয়া হচ্ছে এটা মন্দের ভালো।'

তার মতে, 'শিক্ষার্থীদের সব বিষয়ে প্রস্তুতি ছিল। তাই তেমন একটা ক্ষতি হবে না। যতটুকু ক্ষতি হবে তা পুষিয়ে নেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। পরিকল্পনা থাকতে হবে যে আগামী পরীক্ষাগুলোয় যেন আবশ্যিক বিষয়গুলো বাদ না যায়।'

সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের এই উপদেষ্টা বলেন, 'যেটুকু ক্ষতি হবে তা পুষিয়ে নিতে শিক্ষার্থীদেরও সজাগ থাকতে হবে। তাদেরকে পড়াশোনা করতে হবে।'

অধ্যাপক আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক বলেন, 'আবশ্যিক বিষয়গুলোর গুরুত্ব অনেক বেশি বিধায় সেগুলোর নাম আবশ্যিক। অবশ্যই আবশ্যিক বিষয়ের ওপর পরীক্ষা নেওয়া উচিত ছিল। কিন্তু, কেন নেওয়া হলো না তা বুঝতে পারছি না।'

তিনি আরও বলেন, 'ভবিষ্যতে যদি এমন কোনো সমস্যা দেখা দেয় তবে আবশ্যিক বিষয়গুলোর গুরুত্ব সবার আগে দিতে হবে। এবারের এসএসসি পরীক্ষায় যেহেতু আবশ্যিক বিষয়গুলো রাখা হয়নি কাজেই এই শিক্ষার্থীরা যখন উচ্চ মাধ্যমিকে যাবে তখন বাংলা-ইংরেজির ওপর বিশেষভাবে গুরুত্ব দিতে হবে। এই বিষয়গুলোর ওপর অতিরিক্ত ক্লাস রাখা যেতে পারে।'

এ বিষয়ে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনিকে টেলিফোন করলে তিনি রিসিভ করেননি। বিষয় উল্লেখ করে ক্ষুদেবার্তা পাঠানো হলেও তিনি কোনো উত্তর দেননি।

শিক্ষা উপমন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলকে টেলিফোন করলে তিনি কল কেটে দিয়ে ক্ষুদেবার্তা পাঠাতে বলেন। পরবর্তীতে বিষয় উল্লেখ করে ক্ষুদেবার্তা পাঠানো হলে তিনি উত্তর দেননি।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের নিয়ন্ত্রণকক্ষের সূত্রে জানা গেছে, ৯টি সাধারণ শিক্ষা বোর্ডের অধীনে এ বছর ৪ লাখ ৮৮ হাজার ৩৪ পরীক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নেবে বলে আশা করা হচ্ছিল। তবে তাদের মধ্যে ৩ হাজার ৫৪৮ জন পরীক্ষার্থী প্রথম দিন অনুপস্থিত থাকে।

Comments

The Daily Star  | English
Anti-Terrorism Act

Govt issues ordinance amending Anti-Terrorism Act

Activities of certain entities, and activities supporting them can now be banned

1h ago