জাহাঙ্গীরকে মেয়র পদ থেকেও অপসারণের দাবি

বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্যের জের ধরে গাজীপুর সিটি করপোরেশনের মেয়র ও নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলমকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে।
মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম। ছবি: সংগৃহীত

বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্যের জের ধরে গাজীপুর সিটি করপোরেশনের মেয়র ও নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলমকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে।

আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে গতকাল শুক্রবার রাতে অনুষ্ঠিত দলের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

গণভবনে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।

গাজীপুরের মেয়রের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হতে পারে জানিয়ে কাদের বলেন, `জাহাঙ্গীর আলমের ব্যাপারে নেওয়া দলীয় সিদ্ধান্তের বিষয়টি আমরা আনুষ্ঠানিকভাবে স্থানীয় সরকারমন্ত্রীকে (এলজিআরডি) জানাবো।'

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হওয়া জাহাঙ্গীরের ভিডিও ফুটেজ যাচাই করে দলটি এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলেও জানান কাদের।

বৈঠকে উপস্থিত ব্যক্তিদের কাছ থেকে জানা যায়, ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) দ্বিতীয় ধাপের নির্বাচনে সহিংসতা ও দলীয় ভিন্নমতালম্বীদের নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন দলীয় প্রধান। বিদ্রোহী প্রার্থী ও তাদের পৃষ্ঠপোষকদের তালিকা তৈরি করতে দলের জ্যেষ্ঠ নেতাদের নির্দেশ দেন তিনি।

ইউপি নির্বাচন ঘিরে দলীয় কোন্দলের বিষয়ে দলের সাংগঠনিক সম্পাদকদের তৈরি প্রতিবেদন উপস্থাপনের সময় বিষয়টি উঠে আসে।

এ সময় বিদ্রোহী প্রার্থীদের পৃষ্ঠপোষকদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে হুঁশিয়ারি দেন প্রধানমন্ত্রী।

প্রধানমন্ত্রীকে উদ্ধৃত করে বৈঠকে উপস্থিত আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির এক সদস্য বলেন, 'বিদ্রোহী প্রার্থীদের সমর্থকদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তারা কে, হোক এমপি কিংবা নেতা- তাতে কিছু আসে যায় না। তারা ভবিষ্যতে দলীয় মনোনয়ন পাবেন না। আওয়ামী লীগের সঙ্গে রাজনীতি করতে পারবেন না।'

আওয়ামী লীগ সভাপতি আরও জানান, বিদ্রোহী ও তাদের পৃষ্ঠপোষকদের বাদ দিয়ে তিনি দল পরিচালনা করবেন।

গত ১১ নভেম্বর অনুষ্ঠিত দ্বিতীয় ধাপের ইউপি নির্বাচনে সারাদেশে সহিংসতায় প্রায় ৪০ জন নিহত হন। এতে ক্ষমতাসীন দলের মনোনীত চেয়ারম্যান প্রার্থীদের প্রায় সব ইউনিয়নের দলীয় ভিন্নমতালম্বীদের বিরুদ্ধে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে হয়েছে।

আওয়ামী লীগের উচ্চ পর্যায়ের কঠোর সতর্কবার্তা উপেক্ষা করে দলের ১ হাজার ৬৯ জন নেতা-কর্মী আগামী ২৮ নভেম্বর অনুষ্ঠেয় তৃতীয় ধাপের নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে অংশ নিতে যাচ্ছেন।

দ্বিতীয় ধাপের নির্বাচনে এই ধরনের প্রার্থীর সংখ্যা ছিল ৬৯০ জন। আওয়ামী লীগ দলের এমন সব কর্মীদের বহিষ্কারের সুপারিশ করেছে, যারা বিদ্রোহীদের পক্ষে কাজ করবে।

জাহাঙ্গীরের বহিষ্কার

জানা যায়, গতকাল কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকে জাহাঙ্গীর ইস্যুতে অন্তত ১০ জন নেতা বক্তব্য দেন। তারা প্রত্যেকে তার শাস্তি দাবি করেন।

একইসঙ্গে তারা জাহাঙ্গীরকে মেয়র পদ থেকে অপসারণের পাশাপাশি তার বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান।

সূত্রগুলো বলছে, জাহাঙ্গীরকে মেয়র পদ থেকে অপসারণের দাবি প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেছেন যে, তিনি বিষয়টি দেখবেন।

গত ২২ অক্টোবর স্থানীয় নির্বাচনের জন্য আওয়ামী লীগের মনোনয়ন বোর্ডের সভায় দেওয়া ভাষণে শেখ হাসিনা জাহাঙ্গীরের বিতর্কিত মন্তব্যের ব্যাপারে বিরক্তি প্রকাশ করেন।

এর আগে ৩ অক্টোবর দলের পক্ষ থেকে জাহাঙ্গীরকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়। নোটিশে তার বিরুদ্ধে কেন ব্যবস্থা নেওয়া হবে না, তা পরবর্তী ১৫ দিনের মধ্যে জানাতে বলা হয়। এর জবাবে জাহাঙ্গীর ক্ষমা চান এবং তার মন্তব্যের জন্য দুঃখ প্রকাশ করেন। কিন্তু তাতে দলের শীর্ষ নেতৃত্ব সন্তুষ্ট হতে পারেনি।

সেপ্টেম্বরের শেষ দিকে এক অনুষ্ঠানে দেওয়া বক্তব্যে জাহাঙ্গীর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের সংখ্যা নিয়ে মন্তব্য করেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যার ভিডিও ভাইরাল হয়ে যায়।

এতে ক্ষুব্ধ হয়ে গাজীপুর সিটি মেয়রের শাস্তির দাবিতে বিক্ষোভ করেন আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনগুলোর নেতা-কর্মীরা।

যদিও জাহাঙ্গীর অভিযোগগুলোকে 'তার বিরুদ্ধে একটি ষড়যন্ত্র' বলে অভিহিত করেন এবং 'তার বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালানোর' জন্য তার রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে দায়ী করেন।

এদিকে জাহাঙ্গীরকে আওয়ামী লীগ থেকে বহিষ্কারের খবর ছড়িয়ে পড়ার পর পর গত রাতে গাজীপুর শহরে বিক্ষোভ মিছিল করেন মেয়রের প্রতিদ্বন্দ্বী গ্রুপের নেতা-কর্মীরা। আমাদের গাজীপুর সংবাদদাতা জানান, এ সময় তারা পটকা ফাটিয়ে জাহাঙ্গীরের বহিষ্কারের বিষয়টি উদযাপন করেন। এ সময় নেতা-কর্মীদের মঝে মিষ্টি বিতরণও করা হয়।

নতুন প্রেসিডিয়াম সদস্য

গতকালের কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকে দলের কেন্দ্রীয় কমিটির ২ সদস্য মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া ও কামরুল ইসলাম এবং রাজশাহী সিটি করপোরেশনের মেয়র ও নগর আওয়ামী লীগের সভাপতি এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটনকে দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য করা হয়।

সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুন ও সাবেক আইনমন্ত্রী আবদুল মতিন খসরুর মৃত্যুর পর থেকে ওই ৩টি পদ শূণ্য ছিল।

এর আগে বৈঠকে শেখ হাসিনা তার সূচনা বক্তব্যে ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলাসহি বিভিন্ন ঘটনার উল্লেখ করে বলেন, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও তার সহযোগীরা সব সময় আওয়ামী লীগের নাম-চিহ্ন মুছে ফেলার চেষ্টা করেছে।

এ বিষয়ে শেখ হাসিনাকে উদ্ধৃত করে সংবাদ সংস্থা ইউএনবি। নিজেকে সবসময় খালেদা জিয়ার 'লক্ষ্যবস্তু' হিসেবে অভিহিত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'বিএনপি চেয়ারপারসন মন্তব্য করেছিলেন যে, প্রধানমন্ত্রী হওয়া দূরে থাক, শেখ হাসিনা কখনো বিরোধী দলীয় নেত্রীও হতে পারবেন না। এরপর গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ায় বোমা পোঁতা হয়।

প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, খালেদা পরে বলেছিলেন যে আওয়ামী লীগ ১০০ বছরেও ক্ষমতায় যেতে পারবে না। এরপর ২১ আগস্টে ভয়াবহ গ্রেনেড হামলা চালানো হয়েছিল। প্রধানমন্ত্রীর ভাষ্য, 'ওই মন্তব্যগুলো আমাদের ভুলে যাওয়া উচিত নয়।'

শেখ হাসিনা বলেন, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে তাদের (বিএনপি) বিরুদ্ধে দমন-পীড়ন চালায়নি। তার বক্তব্য, দেশের কিছু মানুষ নির্দিষ্ট কিছু লোকের হাজার হাজার অপরাধকে অপরাধ বলে মনে করে না।

'তারা দুর্নীতির বিরুদ্ধে কথা বলে। আবার দুর্নীতির অভিযোগে দণ্ডিত ব্যক্তির পক্ষেও কথা বলে। তারা সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে সোচ্চার। কিন্তু যারা সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের সঙ্গে জড়িত এবং ১০ ট্রাক অস্ত্র মামলায় দোষী সাব্যস্ত তাদের বিরুদ্ধে একটি শব্দও উচ্চারণ করে না।'

কীভাবে আওয়ামী লীগকে ক্ষমতা থেকে উৎখাত করা যায়, তার জন্য তাদের কেউ কেউ এখন বৈঠক করেন মন্তব্য করে শেখ হাসিনা আরও বলেন, 'আওয়ামী লীগের দোষ কোথায়? দেশের উন্নয়ন করাই কি আওয়ামী লীগের দোষ?'

সম্প্রতি সাম্প্রদায়িক হামলা প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, কোনো কোনো মহল দেশে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টির চেষ্টা করলেও সরকার সময়োপযোগী পদক্ষেপের মাধ্যমে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয়েছে।

দণ্ডিত ও পলাতক বিএনপি নেতাকে মানুষ কেন ভোট দেবে- এমন প্রশ্ন তুলে আওয়ামী লীগ সভাপতি আরও বলেন, 'তাদের কে ভোট দেবে? তাদের দল ও তাদের নেতা কোথায়? সে কীভাবে নির্বাচনে অংশ নেবে? একজন সাজাপ্রাপ্ত ও পলাতক নেতাকে জনগণ কেন ভোট দেবে?'

অনুবাদ করেছেন মামুনুর রশীদ

Comments

The Daily Star  | English

Horrors inside the Gaza genocide: Through a survivor’s eyes

This is an eye-witness account, the story of a Palestinian in Gaza, a human being, a 24-year-old medical student, his real human life of love and loss, and a human testimony of war crimes perpetrated by the Israeli government and the military in the deadliest campaign of bombings and mass killings in recent history.

1d ago