৬ বছর ধরে খাঁচায় বন্দি ১০ বছরের শিশু!

খাঁচায় বন্দি ১০ বছরের শিখা দাস। ছবি: স্টার

রাজবাড়ীর কালুখালী উপজেলার পূর্বফুল কাউন্নাইল ঋষিপাড়ার মদন কুমার দাসের ১০ বছরের শিশুকন্যা শিখা দাস। সে গত ৬ বছর ধরে খাঁচায় বন্দি। পরিবারের দাবি, খোলা পরিবেশে থাকলে সবাইকে দাঁত দিয়ে কামড় ও নখ দিয়ে খামচি দিয়ে আহত করে বলেই তাকে খাঁচায় বন্দি করে রাখা হয়েছে।

রাজবাড়ী জেলা শহর থেকে ২৫ কিলোমিটার পশ্চিমে পূর্বফুল কাউন্নাইল ঋষিপাড়ার অবস্থান। এই পাড়ার অন্য ২৩টি পরিবারের কর্তাদের মতো মদন কুমার দাসও বংশ পরম্পরায় বাঁশ-বেতের কাজ করতেন। কিন্তু বাঁশ-বেতের তৈরি জিনিসপত্রের চাহিদা কমে যাওয়ায় তিনি এখন সেলুন দিয়েছেন। তার একার আয়ে চলে বিধবা মা, স্ত্রী, ২ ছেলে ও অসুস্থ মেয়েকে নিয়ে ছয় সদস্যের সংসার।

৩ ভাই-বোনের মধ্যে শিখা মেজো। তার বড় ভাই স্থানীয় একটি বিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থী। ছোট ভাইয়ের বয়স ২ বছর। শিখা দাসের বয়স যখন ১ বছর, তখন তার শারীরিক সমস্যা ধরা পড়ে। মেয়েকে চিকিৎসার জন্য একাধিকবার ভারতেও নিয়ে গেছেন। কিন্তু অবস্থার উন্নতি হয়নি বলে জানিয়েছেন বাবা মদন কুমার দাস।

খাঁচার ভেতর থেকে বাবার কোলে আসার আকুতি শিখার। ছবি: স্টার

তিনি আরও বলেন, 'চিকিৎসক বলেছেন, আমার মেয়ে শিখা বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশু। ওর দীর্ঘমেয়াদী চিকিৎসা প্রয়োজন। আমার মতো একজন দরিদ্র সেলুন মালিকের পক্ষে ৬ সদস্যের পরিবার চালিয়ে ওর উন্নত চিকিৎসা করা সম্ভব হচ্ছে না। শিখা মানুষ দেখলেই কামড় দেয়, খামচি দেয়। এ কারণে ছোট থেকেই তাকে রশি দিয়ে বেঁধে রাখতাম। কিন্তু শিখা ওই রশি ছিঁড়ে হামাগুড়ি দিয়ে পরিবারের সদস্য ছাড়াও আশপাশের লোকজনকে কামড় ও খামচি দিয়ে আহত করতো। তার কামড়ে জলাতঙ্ক রোগ হতে পারে ভেবে ৩ বছর বয়স থেকে শিখাকে ঘরের বারান্দায় নেটের খাঁচা তৈরি করে সেখানে বন্দি করে রেখেছি।'

শিখা দাসের মা চন্দনা রাণী দাস বলেন, 'শিখার বাবা সকালে সেলুনে যায়, রাতে আসে। আমি সংসারের নানা কাজে ব্যস্ত থাকি। বৃদ্ধ শাশুড়িসহ আরও দুটি ছেলে আছে। ওর বাবার একার আয়ে সংসারই চলে না। আমাদের যা ছিল, সবই শেষ হয়ে গেছে। এখন আর কোনো সহায়সম্বল অবশিষ্ট নেই। মেয়েকে খাঁচায় বন্দি করে রাখতে আমাদেরও খুব খারাপ লাগে। কিন্তু কী আর করব। এখন আমরা আর পারছি না। শিখার জন্য সবার সহযোগিতা চাই।' 

পরিবারের সবার সঙ্গে শিখা (দাদির কোলে)। ছবি: স্টার

বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন এই শিশুকে নিয়ে বাবা-মায়ের দুঃখের শেষ নেই। দরিদ্র বাবা-মার সংসার চালানোই কষ্টসাধ্য। তার ওপর মেয়েটির চিকিৎসা করতে বেগ পেতে হচ্ছে। সরকারসহ বিত্তবানদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানান প্রতিবেশীরাও।

কালুখালী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিক্যাল অফিসার ডা. আল-মামুন বলেন, 'শিখা দাসের এই অবস্থার কথা আমরা আগে জানতাম না। গণমাধ্যমে জেনে বাড়িতে গিয়ে শিশুটিকে দেখেছি। চিকিৎসা সংক্রান্ত কাগজপত্রও দেখেছি। ওর বাবা-মার সঙ্গে কথা বলেছি। মেয়েটি সেরিব্রাল পালসি রোগে আক্রান্ত। অটিজমের প্রভাবও আছে। ওর দীর্ঘমেয়াদী চিকিৎসা প্রয়োজন।'

সমাজসেবা অধিদপ্তরে থেকে শিখাকে একটি প্রতিবন্ধী ভাতা কার্ড দেওয়া হয়েছে। প্রতি ৩ মাস অন্তর তাকে ৭৫০ করে টাকা দেওয়া হয়। এ ছাড়া, স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের জনপ্রতিনিধিদের বলা হয়েছে, শিখার পরিবারকে সবসময় সরকারের অন্যান্য সহায়তা দিতে।

খাঁচার মধ্যে আটকে রাখার বিষয়টি অমানবিক। তাই শিখা দাসের উন্নত চিকিৎসাসহ তার সঙ্গে মানবিক আচরণ করতে সংশ্লিষ্ট বিভাগসহ বিত্তবানদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন এলাকাবাসীরা।

Comments

The Daily Star  | English
Anti-Terrorism Act

Banning party activities: Govt amends anti-terror law

The interim government is set to bring the curtain down on the Awami League as a functioning political party.

8h ago