ক্রমবর্ধমান বৈষম্য আমাদের অগ্রগতি আটকে দিচ্ছে

২০২১ সালের ১ ডিসেম্বর একটি উন্নয়ন সম্মেলনে বিশেষজ্ঞরা দুঃখ প্রকাশ করে বলছিলেন, স্বাধীনতার পর থেকে বাংলাদেশের যে উল্লেখযোগ্য অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি হয়েছে, তা একটি বৈষম্যপূর্ণ সমাজের দিকেও নিয়ে যাচ্ছে। এ বিষয়টি নিয়ে আমরাও তাদের মতোই হতাশ।
ইলাস্ট্রেশন: নিক লনডেস

২০২১ সালের ১ ডিসেম্বর একটি উন্নয়ন সম্মেলনে বিশেষজ্ঞরা দুঃখ প্রকাশ করে বলছিলেন, স্বাধীনতার পর থেকে বাংলাদেশের যে উল্লেখযোগ্য অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি হয়েছে, তা একটি বৈষম্যপূর্ণ সমাজের দিকেও নিয়ে যাচ্ছে। এ বিষয়টি নিয়ে আমরাও তাদের মতোই হতাশ।

সাম্যের ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত বাংলাদেশ যখন স্বাধীনতার ৫০তম বার্ষিকী উদযাপন করছে তখন দেশে দ্রুত বৈষম্য বৃদ্ধি পাচ্ছে, বিশেষ করে সাম্প্রতিক সময়ে—বিষয়টি অত্যন্ত হতাশাজনক।

২০১৯ সালের মে মাসে দ্য ডেইলি স্টারে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়,  বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) গৃহস্থালি আয় ও ব্যয় জরিপে (এইচআইইএস) দেখা গেছে, ২০১০ সালের ০ দশমিক ৪৫৮ থেকে বেড়ে ২০১৬ সালে দেশের জিনি সহগ (সমতার অর্থনৈতিক পরিমাপ) ০ দশমিক ৪৮২ তে দাঁড়িয়েছে। এর অর্থ হচ্ছে, দেশে অসমতা সর্বকালের সর্বোচ্চ অবস্থানে।

সবশেষ উন্নয়ন সম্মেলনে বিশেষজ্ঞরা বাংলাদেশিদের উদ্যোক্তা মনোভাব, যা দেশকে অসাধারণ অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির দিকে চালিত করেছে, তার প্রশংসা করেছেন। তবে একইসঙ্গে দেশকে ক্রমবর্ধমান বৈষম্যের দিকে নিয়ে যাওয়া বৃহৎ পরিসরের দুর্নীতিরও সমালোচনা করেছেন তারা।

সামাজিক সূচকে বাংলাদেশের ব্যাপক অগ্রগতি হলেও, স্বাস্থ্য-শিক্ষার সুবিধা ধনী ও দরিদ্রের মধ্যে সমানভাবে বণ্টন করা হয়নি। লিঙ্গ ও অন্যান্য সামাজিক বিভাজনও রয়েছে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, এটি মূলত রাজনৈতিক সমস্যা। সরকারি প্রতিষ্ঠানের জবাবদিহিতার অভাব শুধু আমাদের অগ্রগতি এবং সামাজিক ও অর্থনৈতিক সমতার পথে বড় বাধা হয়ে দাঁড়ায়নি, এটি রাষ্ট্রের বিশ্বাসযোগ্যতাকেও চ্যালেঞ্জ করছে। এটা অত্যন্ত উদ্বেগজনক।

অর্থনৈতিক বৈষম্য ছাড়াও সাম্প্রতিক সময়ে আমরা নানা ধরনের সামাজিক বৈষম্যও বাড়তে দেখেছি। ক্ষমতাশালীদের সমালোচনা করার জায়গা সংকুচিত হয়েছে। নীতিনির্ধারকদের সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রশ্ন তুললে এখন প্রায়ই প্রতিপক্ষের দৃষ্টিতে দেখা হয়। কিন্তু, এই ধরনের খোলামেলা আলোচনা ছাড়া, যে বিষয়গুলো বৃহত্তর অর্থনৈতিক বৈষম্যের দিকে নিয়ে যাচ্ছে, সেগুলোর সমাধান করা আরও কঠিন হয়ে উঠবে।

বেসরকারি সংস্থাগুলোর দেওয়া তথ্য দেখতে না চাওয়ার যে প্রবণতা সম্প্রতি সরকারি কর্মকর্তাদের মধ্যে দেখা যাচ্ছে, তা উদ্বেগের আরেক কারণ। এই ধরনের তথ্য বিবেচনায় না নিয়ে এবং সরকার সংগৃহীত তথ্যে নিরপেক্ষতার অনুপস্থিতিতে কর্তৃপক্ষ কীভাবে এই কঠিন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে পারবে?

মানব উন্নয়ন সূচক দ্বারা মূল্যায়ন করা বাংলাদেশের সামগ্রিক মানব উন্নয়ন স্কোর ২০১৯ সালে ০ দশমিক ৬৩২ ছিল। কিন্তু, তা পরে ০ দশমিক ৪৭৮ এ নেমে আসে, যা অসমতার কারণে মানব উন্নয়নে ২৪ দশমিক ৪ শতাংশ ক্ষতি বোঝায়। ক্রমবর্ধমান বৈষম্য কীভাবে আমাদের উন্নয়ন আটকে রাখছে, এটি তার একটি উদাহরণ মাত্র।

তাই নীতিনির্ধারকরা যখন দেশের উন্নয়নের জন্য নিজেদের অভিনন্দন জানান, তখন বাস্তবতা হলো, উন্নয়নের বেশিরভাগই দেশের নাগরিকদের কঠোর পরিশ্রম ও বুদ্ধিমত্তার ওপর নির্ভর করে।

অনুসরণ করা হচ্ছে—এমন কিছু নীতি প্রকৃতপক্ষে উন্নয়নকে নেতিবাচকভাবে প্রভাবিত করছে। আমরা যদি আমাদের উন্নয়নের স্বপ্ন পূরণ করতে চাই তাহলে এসব নীতি পরিবর্তন করতে হবে।

তাই প্রশাসনে অধিকতর জবাবদিহিতা ও স্বচ্ছতা আনতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে কাজ করতে হবে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে, দুর্নীতি কমাতে সব ধরনের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে। সেই সঙ্গে বৈষম্য দূর করতে নীতি প্রণয়ন করতে হবে।

অনুবাদ করেছেন জারীন তাসনিম

Comments

The Daily Star  | English

Beyond Dollar: Bangladesh to seek over 36b yuan in Chinese loans

Bangladesh is going to seek more than 36 billion yuan, equivalent to $5 billion, as soft loans from China to reduce pressure on its dollar reserves.

2h ago