‘মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে বিজয় দেখার আনন্দের চেয়ে বড় আর কী হতে পারে’

বীর মুক্তিযোদ্ধা রাইসুল ইসলাম আসাদ। গুণী এই অভিনেতার আরেকটি পরিচয় হলো তিনি ছিলেন গেরিলা যোদ্ধা। তারুণ্যে দেশের জন্য অস্ত্র হাতে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন মহান মুক্তিযুদ্ধে। ৫০ বছর আগের বিজয়ের স্মৃতি জানা যাক তার কাছ থেকে।
রাইসুল ইসলাম আসাদ। ছবি: শেখ মেহেদী মোরশেদ/স্টার

বীর মুক্তিযোদ্ধা রাইসুল ইসলাম আসাদ। গুণী এই অভিনেতার আরেকটি পরিচয় হলো তিনি ছিলেন গেরিলা যোদ্ধা। তারুণ্যে দেশের জন্য অস্ত্র হাতে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন মহান মুক্তিযুদ্ধে। ৫০ বছর আগের বিজয়ের স্মৃতি জানা যাক তার কাছ থেকে।

'৫০ বছর আগের আজকের দিনটি ছিল অন্যরকম। কত রক্ত, কত মানুষের জীবনের বিনিময়ে কাঙ্ক্ষিত বিজয় এসেছিল। একটি দেশ, একটি পতাকা, একটি বিজয় পাওয়ার জন্য কত ত্যাগ স্বীকার করেছিলাম আমরা।'

এই গেরিলা বলেন, '৫০ বছর আগের দিনগুলোতে ফিরে গেলে কেমন যেন হয়ে যাই। কতই বা বয়স ছিল তখন আমার। সতেরো কি আঠারো হবে। এখন আমার বয়স ৬৮ বছর। ৫০ বছর আগের স্মৃতিতে ফিরে গেলে কেবলই রক্ত, প্রিয়জন হারানো এবং ত্যাগের কথা মনে পড়ে।'

'আবার, বিজয় এসেছে আজকের দিনে সেজন্য গর্ববোধও করি। একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে বিজয় দেখার আনন্দের মতো বড় আর কী হতে পারে? মুক্তিযোদ্ধার জীবনের বড় অর্জন বিজয়। সেই বিজয় আমি দেখেছিলাম আজ থেকে ৫০ বছর আগে। বিজয়ের আনন্দে চোখে পানি এসেছিল,' বলেন রাইসুল ইসলাম আসাদ।

'ডিসেম্বর মাস আসার পর থেকেই বুঝতে পারি, বিজয় সুনিশ্চিত। আমরা যুদ্ধে জয়ী হতে যাচ্ছি। ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহে আমি ধামরাই ছিলাম। পরে ঢাকার দিকে আসতে শুরু করি। আমার টিম লিডার ছিলেন সাত্তার। তিনি মারা গেছেন কিছুদিন আগে।'

বীর মুক্তিযোদ্ধা আসাদ বলেন, 'তারপর বিজয়ের অল্প কয়েকদিন আগে সাত্তারের পরিবর্তে আমাকে লিডার করা হয়েছিল। একটা অপারেশনের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল আমাকে। সেই অপারেশনটি সফল করেছিলাম। তারপর তো ৯ মাসের যুদ্ধ শেষে বিজয়ের আলো আসে আমাদের জীবনে। এছাড়া অনেক অপারেশন করেছি আমরা।'

'১৫ ডিসেম্বর রাতে আমি ঢাকায় ছিলাম। মূলত অক্টোবর থেকে শুরু করে ডিসেম্বর পর্যন্ত ঢাকা ও আশপাশেই ছিলাম আমরা। সে এক কঠিন সময় পার করেছি। একটাই লক্ষ্য ছিল বিজয়। ঢাকায় উত্তর বাহিনীর ছোট একটা ইউনিট ছিল। বিজয়ের সময় ওই ইউনিটের দায়িত্বে আমি ছিলাম।'

'১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর ঢাকা শহরের রাস্তায় ছিল ভিন্ন চিত্র। বেশ ফাঁকা ছিল। মালিবাগের ওদিকটায় গিয়ে দেখতে পেয়েছিলাম একটি বা দুটি গাড়ি যাচ্ছে। তারপর মেইন রোডের দিকে এগোতে থাকি। অল্প অল্প মানুষ দেখতে পাই। সকাল শেষ হয়। দুপুর গড়ায়। চারদিক থেকে আনন্দের খবর আসছিল-বিজয় অজিত হতে যাচ্ছে, দেশ স্বাধীন হতে চলেছে।'

'অনেক রক্তের বিনিময়ে একটি দেশের জন্ম হলো আমাদের চোখের সামনে। বিজয়ের মাধ্যমে ৫০ বছর আগে একটি দেশ পেয়েছিলাম। এটাই জীবনের বড় ঘটনা,' যোগ করেন তিনি।

Comments

The Daily Star  | English
Workers rights vs corporate profits

How some actors gambled with workers’ rights to save corporate profits

The CSDDD is the result of years of campaigning by a large coalition of civil society groups who managed to shift the narrative around corporate abuse.

11h ago