‘বিজয়ের খবর পেয়ে স্টেনগান ফাঁকা করে ফেলেছিলাম’

বাংলাদেশের সাদাকালো চলচ্চিত্রের নন্দিত নায়ক সোহেল রানা। মুক্তিযুদ্ধের প্রথম সিনেমা ওরা ১১ জন প্রযোজনা করে প্রশংসিত হয়েছেন। ১৯৭১ সালে অস্ত্র হাতে যুদ্ধ করেছেন এই নায়ক। যুদ্ধের ময়দানে থেকে বিজয়ের কথা শুনে কেঁদেছিলেন সেদিন। আজ বৃহস্পতিবার বিজয়ের ৫০ বছরের এই দিনে দ্য ডেইলি স্টারকে সেই গল্প বলেছেন তিনি।
সোহেল রানা। ছবি: সংগৃহীত

বাংলাদেশের সাদাকালো চলচ্চিত্রের নন্দিত নায়ক সোহেল রানা। মুক্তিযুদ্ধের প্রথম সিনেমা ওরা ১১ জন প্রযোজনা করে প্রশংসিত হয়েছেন। ১৯৭১ সালে অস্ত্র হাতে যুদ্ধ করেছেন এই নায়ক। যুদ্ধের ময়দানে থেকে বিজয়ের কথা শুনে কেঁদেছিলেন সেদিন। আজ বৃহস্পতিবার বিজয়ের ৫০ বছরের এই দিনে দ্য ডেইলি স্টারকে সেই গল্প বলেছেন তিনি।

'৫০ বছর আগের দৃশ্য ভাষায় প্রকাশ করা কঠিন। অনেক দৃশ্য চোখে ভাসে। আবার অনেক দৃশ্য ভাসে না। কিন্তু পুরোটা মনে পড়ে না। যারা পুরোটা মনে করতে পারেন তারা অতিমানব। আমি তা নই। এ জন্যই হয়তো পুরোটা মনে করতে পারি না।'

'তারপরও সেই স্মৃতি  চিরতরে ভুলে যাওয়া সম্ভব নয়,' বলেন এই বীর মুক্তিযোদ্ধা। 'যুদ্ধ জয়ের স্মৃতি নিয়েই বেঁচে থাকব বাকিটা জীবন। নিজেকে এই বলে বোঝাব যে স্বাধীন দেশ পাওয়ার জন্য আমারও অবদান আছে। আমিও অস্ত্র হাতে লড়াই করেছিলাম। আমার নেতা বঙ্গবন্ধুর ডাকে ঘর ছেড়ে যুদ্ধের ময়দানে গিয়েছিলাম।'

কেরানীগঞ্জ এলাকায় তিনি যুদ্ধ করেছিলেন উল্লেখ করে বলেন, 'আঁটি বলে একটি জায়গা ছিল। সম্মুখযুদ্ধে অনেককেই হারিয়েছি। আর কোনোদিনও তারা আসবেন না। সেখানেই ছিলাম ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর। আমরা তো সরাসরি অস্ত্র নিয়ে যুদ্ধ করেছিলাম। বিজয়ে খবর যুদ্ধের ময়দানেই পেয়েছিলাম।'

'অবশ্য কয়েকদিন আগে থেকেই টের পাচ্ছিলাম পাকিস্তানিরা পারবে না। পরাজয় নিশ্চিত ওদের। জয় পাব আমরাই। এত রক্ত ঝরল, এত মা বোন ইজ্জত হারাল, এত মানুষ জীবন দিলো, বিজয় আমাদের হবেই একদিন। অবশেষে তা এসেছিল ১৬ ডিসেম্বর।'

তিনি বলেন, 'বিজয়ের খবর পাওয়ার পর আমাদের স্টেনগানের একটি গুলিও ছিল না। বিজয়ের কথা শুনে স্টেনগান ফাঁকা করে ফেলেছিলাম। এভাবেই বিজয়ের মুহূর্ত এসেছিল আমার ও আমার বন্ধুদের জীবনে, যারা কেরানীগঞ্জের ওখানে ছিলাম সেদিন।'

'যুদ্ধের ময়দানে সঙ্গী যোদ্ধাদের জড়িয়ে ধরে কেঁদেছিলাম। বিজয়ের আনন্দে হাউমাউ করে কেঁদেছিলাম। সেই কান্না ছিল আনন্দের। অতি আনন্দের। মানুষের জীবনে ওইরকম কান্না কমই আসে। ইতিহাসের অংশ হয়ে সেদিন সুখের কান্না কেঁদেছিলাম,' যোগ করেন তিনি।

'কেউ কেউ মাটির ওপরই খুশিতে লাফাচ্ছিল। সবাই বলাবলি করছিলাম, স্বাধীন হয়েছি, বাংলাদেশ নামের নতুন একটি রাষ্ট্র পেয়েছি, আর কী চাই আমাদের? আমরা বেশ কয়েকজন ছিলাম  সেখানে। কান্না শেষে এবং গুলি শেষ করে মাটিতে বসে ছিলাম কিছুক্ষণ।'

'আরও কিছুটা সময় পর এক বন্ধুকে বুকে জড়িয়ে ধরে আকাশের দিকে তাকিয়েছিলাম। মনে হয়েছিল যে একজীবনে এর চেয়ে বড় প্রাপ্তি আর নেই।'

'যুদ্ধক্ষেত্রে সেই সময়টায় আমার নেতা বঙ্গবন্ধুর কথা বারবার মনে পড়ছিল, যার ডাকে একদিন ঘর ছেড়েছিলাম দেশকে মুক্ত করব বলে,' সোহেল রানা বলেন।

Comments

The Daily Star  | English

Women MPs in reserved seats: How empowered are they really?

Fifty-two years ago, a provision was included in the constitution to reserve seats for women in parliament for a greater representation of women in the legislative body.

7h ago