মেলোডি কুইন লতা মঙ্গেশকর

লতা মঙ্গেশকর। ছবি: সংগৃহীত

উপমহাদেশের সংগীতের কিংবদন্তি লতা মঙ্গেশকর। অর্ধ শতাব্দীরও বেশি সময় ধরে ৩৬টির বেশি  ভাষায় গান গেয়েছিলেন তিনি। তবে, কেবল ভারতের সীমান্তের গণ্ডিতে নয়, বিশ্বব্যাপী তার খ্যাতি ছড়িয়ে পড়ে। তিনি ৭৩ বছরেরও বেশি সময় ধরে জাদুকরি কণ্ঠে শ্রোতাদের মুগ্ধ করে রেখেছিলেন।

লতা মঙ্গেশকর ১৯২৯ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর মধ্যপ্রদেশের ইন্ডোরে শাস্ত্রীয় সংগীত ব্যক্তিত্ব ও থিয়েটার শিল্পী পণ্ডিত দীননাথ মঙ্গেশকর ও শেবান্তির ঘরে জন্মগ্রহণ করেন। বাবার সাহচার্যে খুব অল্প বয়সেই গান শেখা শুরু করেন লতা মঙ্গেশকর। মাত্র পাঁচ বছর বয়সে বাবার লেখা নাটকে অভিনেত্রী হিসেবে অংশ নেত তিনি। তার ভাই-বোন মিনা, আশা, ঊষা, এবং হৃদয়নাথ। তাদের সবাই দক্ষ গায়ক এবং সঙ্গীতজ্ঞ।

১৯৪২ সালে একটি মারাঠি সিনেমায় 'মাতা এক সাপুত কি দুনিয়া বাদল দে তু' গান দিয়ে তার কর্মজীবন শুরু হয়। তবে, তার জীবনের মোড় ঘুরে যায় ১৯৪৮ সালে হিন্দি চলচ্চিত্র মাজবুরের 'দিল মেরা ঠোডা, মুঝে কাহিন কা না ছোড়া' গানের মাধ্যমে। সেখান থেকে তাকে আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি।

প্রায় আট দশকের ক্যারিয়ারে লতা মঙ্গেশকর বলিউডের লিড নারী কণ্ঠশিল্পী ছিলেন। তিনি এক হাজারের বেশি হিন্দি এবং ৩৬টি আঞ্চলিক চলচ্চিত্রে ২৫ হাজারের বেশি গান গেয়েছেন। বছরের পর বছর ধরে মধুবালা থেকে শুরু করে এই প্রজন্মের প্রিয়াঙ্কা চোপড়ার জন্য গান গেয়েছেন। তিনি বহুমুখী ভয়েস কোয়ালিটির জন্য সর্বাধিক পরিচিত ছিলেন।

১৯৮৯ সালে দাদাসাহেব ফালকে পুরস্কারে ভূষিত হন লতা মঙ্গেশকর। ২০০১ সালে ভারতরত্ন (ভারতের সর্বোচ্চ বেসামরিক পুরস্কার), ১৯৬৯ সালে পদ্মভূষণ (ভারতের তৃতীয় সর্বোচ্চ বেসামরিক পুরস্কার) এবং ১৯৯৯ সালে পদ্মবিভূষণ (ভারতের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বেসামরিক পুরস্কার) পান।

২০১৯ সালের সেপ্টেম্বরে ৯০তম জন্মদিনে ভারত সরকার তাকে 'ডটার অব দ্য নেশন' পুরস্কারে ভূষিত করেন।

অভিনয় ক্যারিয়ার

১৯৪২ সালে বাবার মৃত্যুর পর ১৯৪৮ সাল পর্যন্ত অভিনেত্রী হওয়ার চেষ্টা করেন এবং আটটি চলচ্চিত্রে অভিনয়ও করেছিলেন। তবে, চলচ্চিত্রগুলো কোনো সাফল্য না পেলে তিনি মারাঠি চলচ্চিত্র 'কিটি হাসাল'র (১৯৪২) জন্য প্লেব্যাক গানের মাধ্যমে আত্মপ্রকাশ করেছিলেন। তবে, গানটি আলো দেখেনি কারণ, এটি চলচ্চিত্র থেকে সম্পাদনা করা হয়েছিল।

বৈশ্বিক খ্যাতি

কিংবদন্তি এই গায়কের খ্যাতি ভারতীয় সীমান্তের চেয়েও অনেক বেশি। ১৯৭৪ সালে তিনি প্রথম ভারতীয় হিসেবে লন্ডনের রয়্যাল অ্যালবার্ট হলে পারফর্ম করেন। নিউইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয়সহ ছয়টি বিশ্ববিদ্যালয় তাকে সম্মানসূচক ডক্টরেট উপাধিতে ভূষিত করেছে।

ফ্রান্স ২০০৭ সালে তাকে সর্বোচ্চ বেসামরিক পুরস্কার (অফিসার অব দ্য লিজিওন অব অনার) প্রদান করে।

সম্মানসূচক পণ্য

১৯৯৯ সালে চলচ্চিত্র প্রযোজক ভরত শাহ কিংবদন্তি এই গায়িকার নামে সুগন্ধি পণ্য চালু করেন। যার নাম ছিল লতা ইউ ডে পারফিউম। এটি ছিল লতা মঙ্গেশকর অনুমোদিত প্রথম পণ্য।

অ্যাডোরা নামে একটি ভারতীয় হীরা রপ্তানি সংস্থার জন্যও ডিজাইন করেছিলেন। এই সংগ্রহটির নাম ছিল স্বরাঞ্জলি। যার পাঁচটি টুকরা লন্ডনের একটি জনপ্রিয় ব্রিটিশ নিলাম ঘর ক্রিস্টিতে নিলামে তোলা হয়েছিল।

রাজনৈতিক জীবন

১৯৯৯ সালে তিনি সংসদ সদস্য হিসেবে মনোনীত হন। তবে, শারীরিক অসুস্থতার কারণে রাজ্যসভার অধিবেশনে উপস্থিত থাকতে পারেননি। যা নিয়ে অনেক সমালোচনা হয়েছিল। তবে, সেই বিতর্ক টেকেনি। কারণ, তিনি কোনো বেতন বা সুযোগ-সুবিধা নেননি। এমনকি একটি বাড়িও না।

Comments

The Daily Star  | English

Advisory council set to hold emergency meeting this evening

The meeting will be held tonight at 8:00pm at the State Guest House, Jamuna

1h ago