শাবিপ্রবি আন্দোলন

অনশন ভাঙার ১৩ দিন: উপাচার্য অপসারণসহ ৫ দাবি পূরণ হয়নি

শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদের পদত্যাগের দাবিতে আমরণ অনশনরত শিক্ষার্থীরা অধ্যাপক ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল ও অধ্যাপক ড. ইয়াসমিন হকের মাধ্যমে সরকারের উচ্চমহলের দেওয়া আশ্বাসে অনশন ভাঙার ১৩ দিনেও মূল ৫ দাবি পূরণ হয়নি।
ছবি: শেখ নাসির/স্টার

শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদের পদত্যাগের দাবিতে আমরণ অনশনরত শিক্ষার্থীরা অধ্যাপক ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল ও অধ্যাপক ড. ইয়াসমিন হকের মাধ্যমে সরকারের উচ্চমহলের দেওয়া আশ্বাসে অনশন ভাঙার ১৩ দিনেও মূল ৫ দাবি পূরণ হয়নি।

উপাচার্য পদত্যাগ করবেন নাকি রাষ্ট্রপতি তাকে অপসারণ করবেন, সে বিষয়ে কোনো পরিষ্কার ধারণা পাচ্ছেন না শিক্ষার্থীরা। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনও এ ব্যাপারে কোনো অগ্রগতির কথা জানাতে পারেনি।

আন্দোলনকারীদের মুখপাত্র মোহাইমিনুল বাশার ও ইয়াছির সরকার আজ সোমবার দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, মূল দাবি পূরণের ব্যাপারে মৌখিক আশ্বাস ছাড়া দৃশ্যমান কোনো অগ্রগতি নেই। শিক্ষার্থীরা এখনো ধৈর্য ধরে আছে। কালক্ষেপণে শিক্ষার্থীদের মধ্যে গভীর অসন্তোষ ও ক্ষোভ তৈরি হচ্ছে।

ছবি: শেখ নাসির/স্টার

গত ১৩ জানুয়ারি বেগম সিরাজুন্নেসা চৌধুরী হলের প্রাধ্যক্ষের পদত্যাগের দাবিতে শুরু হওয়া আন্দোলনে ১৬ জানুয়ারি শিক্ষার্থীদের ওপর পুলিশি হামলার পর উপাচার্যের পদত্যাগের দাবির আন্দোলনে রূপ নেয়। এর আগে ছাত্রলীগও আন্দোলনকারীদের ওপর হামলা চালায়।

১৯ জানুয়ারি দুপুরে শিক্ষার্থীদের মধ্যে ২৪ জন আমরণ অনশনে বসলে আন্দোলন তীব্র রূপ লাভ করে। প্রায় ১৬৩ ঘণ্টা পর ২৬ জানুয়ারি সকালে তারা অনশন ভাঙেন।

তাদের অনশন ভাঙাতে সরকারের উচ্চ পর্যায় থেকে দাবি পূরণের আশ্বাস নিয়ে ক্যাম্পাসে আসেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক দম্পতি ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল ও ড. ইয়াসমিন হক। তাদের আশ্বাসেই অনশন ভাঙেন শিক্ষার্থীরা। তাদের অনুরোধে উপাচার্যের বাসভবন ও বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটক থেকে অবরোধ সরিয়ে নেন আন্দোলনকারীরা।

পরে ড. জাফর ইকবাল ও ড. ইয়াসমিন হকের হাতে শিক্ষার্থীরা উপাচার্যের পদত্যাগসহ পাঁচটি দাবি সরকারের উচ্চপর্যায়ে পৌঁছে দেওয়ার জন্য তুলে দেন।

দাবিগুলো হলো: উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদের পদত্যাগসহ ছাত্র উপদেশ পরিচালক অধ্যাপক জহির উদ্দিন আহমেদ ও প্রক্টরিয়াল বডির অপসারণ, ক্যাম্পাসের সবগুলো আবাসিক হল সচল রাখার বিষয়ে উদ্যোগ, আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের অর্থ সাহায্য দেওয়া ৫ সাবেক শিক্ষার্থীর জামিন, অজ্ঞাতনামা শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলা অবিলম্বে প্রত্যাহার এবং অনশনরত শিক্ষার্থী ও উপাচার্যের নির্দেশে পুলিশের হামলায় আহত শিক্ষার্থীদের চিকিৎসার ভার বহন।

আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের মুখপাত্র মোহাইমিনুল বাশার ও ইয়াছির সরকার দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, দাবি ও আশ্বাসের কিছু পূরণ হলেও মূল দাবিগুলোই পূরণ হয়নি। অনশন ভাঙার আগেই প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল যে ২৭ জানুয়ারির মধ্যে সাবেক ও বর্তমান শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে মামলা তুলে নেওয়া হবে। কিন্তু এখনো মামলা তোলা হয়নি। এ ছাড়াও ২০০টির বেশির মোবাইল নাম্বার ও বিকাশ-নগদ অ্যাকাউন্ট এখনো বন্ধ রাখা হয়েছে।

উল্লেখ্য, গত ১৬ জানুয়ারি অবরুদ্ধ উপাচার্যকে বের করে আনতে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়ানোর পরদিন রাতে মামলা করে পুলিশ। পরে আন্দোলনে অর্থ সহায়তা দেওয়ার অভিযোগে পাঁচ সাবেক শিক্ষার্থীকে ঢাকা থেকে আটক করে পুলিশ। তাদের বিরুদ্ধে ২৬ জানুয়ারি মামলা করেন তাঁতী লীগ সিলেট জেলা শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক সুজাত আহমেদ লায়েক। সেদিন সন্ধ্যায় আটক পাঁচ শিক্ষার্থীকে জামিন দেন আদালত।

পুলিশের সাউন্ড গ্রেনেড ও স্প্লিন্টারের আঘাতে গুরুতর আহত শিক্ষার্থী সজল কুন্ডুকে চিকিৎসার জন্য ঢাকায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে।

এদিকে শিক্ষার্থীদের দাবির মধ্যে থাকা ছাত্র উপদেশ পরিচালককে অসুস্থতাজনিত কারণ দেখিয়ে গতকাল (৭ ফেব্রুয়ারি) অব্যাহতি দিয়ে নতুন করে সমাজকর্ম বিভাগের অধ্যাপক ড. আমিনা পারভীনকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।

ছবি: শেখ নাসির/স্টার

এ ব্যাপারে আন্দোলনকারীদের মুখপাত্র মোহাইমিনুল বাশার বলেন, আমরা আশা করেছিলাম একজন উপযুক্ত ও যোগ্য ব্যক্তিকে এই পদ দেওয়া হবে। কিন্তু যাকে দেওয়া হয়েছে, চলমান আন্দোলন ও পরিস্থিতি নিয়ে তার অবস্থান অস্পষ্ট হওয়ায় শিক্ষার্থীরা সতর্কতার সঙ্গে বিষয়টিকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছি এবং উনার কর্মকাণ্ড পর্যবেক্ষণের সিদ্ধান্ত নিয়েছি।

এদিকে গতকাল সন্ধ্যায় ড. জাফর ইকবাল ও ড. ইয়াসমিন হক অনলাইনে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলেছেন। তারা আন্দোলনকারীদের জানান, মামলা তুলে নেওয়া হয়েছে এবং মোবাইল নাম্বার ও অনলাইন ব্যাংকিং চালু করে দেওয়া হয়েছে বলে সরকারের উচ্চ পর্যায় থেকে তাদের জানানো হয়েছে। কিন্তু বাস্তবে তা হয়নি জেনে তারা উৎকণ্ঠা প্রকাশ করেন এবং সরকারের উচ্চ পর্যায়ে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করবেন বলে জানিয়েছেন।

এ ব্যাপারে কথা বলতে অধ্যাপক ড. ইয়াসমিন হকের মোবাইলে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি কল ধরেননি।

অন্যদিকে আওয়ামী লীগ নেতাদের মাধ্যমে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি শিক্ষার্থীদের সঙ্গে যোগাযোগ ও অনলাইনে বৈঠক করলেও অনশন ভাঙার পর থেকে আর কোনো যোগাযোগ হয়নি বলে জানান আন্দোলনকারীরা।

আন্দোলনকারীদের মুখপাত্র ইয়াছির সরকার দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'এই মুহূর্তে সরকারের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের যোগাযোগে কোনো আনুষ্ঠানিক পক্ষ কাজ করছে না। সংবাদ সম্মেলন ডেকে শিক্ষামন্ত্রীকে বৈঠকের আমন্ত্রণ জানালেও এখন পর্যন্ত আমরা কোনো সাড়া পাইনি।'

মোহাইমিনুল বাশার ও ইয়াছির সরকার জানান, সরকারের উচ্চপর্যায়ের অনুরোধে যখন ড. জাফর ইকবাল গোপালগঞ্জের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের ১ মাসের মধ্যে অপসারণের প্রক্রিয়ার কথা বলেছিলেন তখন শিক্ষার্থীরা আশ্বস্ত হয়েছিল। এই উপাচার্যকে তার চেয়েও দ্রুত অপসারণের ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে আশা করছি।

তারা বলেন, 'উপাচার্যকে অপসারণ করা না হলে তা ড. জাফর ইকবাল, ড. ইয়াসমিন হক ও শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি পুরো জাতির সঙ্গেই বিশ্বাসঘাতকতা হবে। সেরকম পরিস্থিতি তৈরি হলে শিক্ষার্থীরা উপাচার্যকে অপসারণের আন্দোলন জোরদার করবে।'

এদিকে, গত ১৬ জানুয়ারি এমএ ওয়াজেদ মিয়া আইআইসিটি ভবনে অবরুদ্ধ অবস্থা থেকে পুলিশি পাহারায় বাসভবনে যাওয়ার পর থেকে সেখানেই অবস্থান করছেন উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ। শিক্ষার্থীরা গত ২৬ জানুয়ারি উপাচার্যের বাসভবনের সামনে থেকে অবরোধ সরিয়ে নিলেও তিনি কার্যালয়ে যাননি।

সার্বিক বিষয়ে কথা বলতে উপাচার্যের মোবাইল ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তিনি কল ধরেননি।

উপাচার্যের পদত্যাগে বা শাবিপ্রবি বিষয়ে কোন অগ্রগতি আছে কিনা জানতে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সচিব ড. ফেরদৌস জামানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, শাবিপ্রবির ব্যাপারে এখনো কোনো তথ্য নেই। উপাচার্যের পদত্যাগের বিষয়টি রাষ্ট্রীয় উচ্চপর্যায়ের সিদ্ধান্ত। সেখান থেকে আমাদের কাছে কোনো তথ্য আসেনি।

Comments