মালয়েশিয়ায় কর্মী নিয়োগ: সমঝোতা স্মারকের বিস্তারিত প্রকাশ করুন

কর্মীদের অভিবাসনে দুই দেশের সরকারের উচিত গোপনীয়তা দূর করা ও দুর্নীতি প্রতিরোধে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেওয়া। ছবি: রয়টার্স

মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশি কর্মী নিয়োগে ২০২১ সালের ১৯ ডিসেম্বর দুই দেশের সরকারের মধ্যে সই হওয়া সমঝোতা স্মারকের (এমওইউ) বিষয়বস্তু প্রকাশ করার আহ্বান জানিয়েছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের (টিআই) বাংলাদেশ ও মালয়েশিয়া চ্যাপ্টার। তাদের এ আহ্বানকে আমরা পূর্ণ সমর্থন জানাচ্ছি।

গত মঙ্গলবার ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) ও ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল মালয়েশিয়া (টিআইএম) এক যৌথ সংবাদ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে। এতে কর্মী নিয়োগের ক্ষেত্রে 'প্রভাবশালী সিন্ডিকেটের অসাধু কূটকৌশল' যেন এ প্রক্রিয়াকে জিম্মি করতে না পারে তা নিশ্চিত করার পাশাপাশি বিষয়টি জনসাধারণের যাচাই-বাছাইয়ের জন্য উন্মুক্ত করার প্রয়োজনীয়তার কথা বলা হয়েছে।

এর আগে বলা হয়েছিল যে, বাংলাদেশের দেওয়া তালিকা থেকে মালয়েশিয়া অনলাইন পদ্ধতিতে যেভাবে বাংলাদেশি রিক্রুটিং এজেন্সি নির্বাচন করবে, সমঝোতা স্মারকে তার রূপরেখা আছে। কিন্তু এ রূপরেখার বিস্তারিত এখনো জানানো হয়নি।

এখানে যে বিষয়টি নিয়ে বিতর্ক উঠছে তা হলো- বাংলাদেশি রিক্রুটিং এজেন্সিদের (বিআরএ) একটি অংশ তাদের মালয়েশীয় সহযোগীদের অসাধু প্রচেষ্টায় বাংলাদেশ থেকে কর্মী নিয়োগ প্রক্রিয়াকে কুক্ষিগত করার অপচেষ্টায় লিপ্ত। মালয়েশিয়ার মানবসম্পদ মন্ত্রী গত ১৪ জানুয়ারির একটি চিঠিতে কর্মী নিয়োগে বাংলাদেশের ২৫টি রিক্রুটিং এজেন্ট ও তাদের ২৫০টি সাব-এজেন্টের অংশ নেওয়ার ওপর জোর দেন। এরপরেই কর্মী নিয়োগ প্রক্রিয়া সিন্ডিকেটের কুক্ষিগত হওয়ার সম্ভাবনার বিষয়টি সামনে চলে আসে।

চিঠির জবাবে বাংলাদেশের প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রী নিয়োগ প্রক্রিয়ায় অনুমোদিত রিক্রুটিং এজেন্টদের যুক্ত করার ওপর জোর দিলেও, অনেকে সন্দেহ করছেন যে, মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার পুনরায় চালু করার স্বার্থে হয়তো একটি আপস করা হতে পারে। কিন্তু ১৯ ডিসেম্বরের ওই সমঝোতা স্মারকের বিষয়বস্তু প্রকাশ না হওয়ায়, আমরা নিশ্চিত হতে পারছি না যে, দুই সরকার ঠিক কী বিষয়ে একমত হয়েছিল।

উচ্চ নিয়োগ ব্যয় ও জোরপূর্বক শ্রমসহ নিয়োগ প্রক্রিয়ায় একই ধরনের সিন্ডিকেটের নিয়ন্ত্রণ এবং দুর্নীতির অভিযোগে ২০১৮ সালে মালয়েশিয়া বাংলাদেশ থেকে শ্রমিক নিয়োগে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিল। মালয়েশিয়ায় জনশক্তি পাঠানোর পুরো প্রক্রিয়াটি তখন মাত্র ১০টি কোম্পানির হাতে ছিল বলে অভিযোগ উঠেছিল। এই ১০টি এজেন্সি অন্যদের এ ক্ষেত্রে প্রতিযোগিতার সুযোগ না দিয়ে তারাই প্রবাসীদের ভাগ্যের নিয়ন্ত্রক হয়ে উঠেছিল। এখন যদি একইভাবে সিন্ডিকেটের হাতে এ প্রক্রিয়া চলে যায়, তবে আবারো আমরা হয়তো ২০১৮ সালের পরিস্থিতির পুনরাবৃত্তি দেখতে পাব।

এটা স্বাভাবিক যে, বাংলাদেশ যেমন তার স্বার্থ রক্ষা করতে চায়, মালয়েশিয়াও চাইবে তার স্বার্থ রক্ষা করতে। কিন্তু এটি দুই পক্ষের মধ্যে গোপন কোনো বিষয় হতে পারে না। সিন্ডিকেশনের বিষয়ে মালয়েশিয়া অগ্রাধিকার দেওয়ায় একটা ভয় তৈরি হলেও, এর সবচেয়ে ভালো সমাধান হবে নিয়োগ প্রক্রিয়ার প্রতিটি পর্যায়ে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা। এতেই শেষ পর্যন্ত শ্রমিক ও নিয়োগদাতা উভয়ের স্বার্থ রক্ষা হবে।

আমরা তাই দুই দেশের সরকারকে স্মারকলিপির শর্তগুলো প্রকাশ করার অনুরোধ জানাচ্ছি। তাদের এ নীরবতাকে দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণ ও জনসাধারণের তথ্য প্রাপ্তি নিশ্চিতে তাদের দেওয়া প্রতিশ্রুতির বিপরীত অবস্থান বলে আখ্যায়িত করেছে টিআইবি ও টিআইএম। দুই দেশের জাতীয় স্বার্থেই যেহেতু এই কর্মী অভিবাসন, তাই উভয় সরকারের উচিত পারস্পরিক স্বার্থ সংশ্লিষ্ট এই খাতের গোপনীয়তা দূর করা ও দুর্নীতি প্রতিরোধে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেওয়া।

Comments

The Daily Star  | English

Govt dissolves NBR as per IMF proposal

An ordinance published last night disbands NBR and creates two new divisions

2h ago