তিস্তা এখন মরা খাল

তিস্তা নদী এখন অনেকটাই পানিশূন্য। ছবি: এস দিলীপ রায়

প্রায় পানিশূন্য হয়ে পড়েছে খরস্রোতা তিস্তা নদী। সামান্য কিছু পানি থাকলেও তা কয়েকখণ্ডে প্রবাহিত হচ্ছে। কোথাও রয়েছে হাঁটু পানি আবার কোথাও কোথাও কোমর পানি। হারিয়ে গেছে তিস্তার সেই চিরচেনা সৌন্দর্য্য।

বাংলাদেশ অংশে লালমনিরহাট, কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা, রংপুর ও নীলফামারী জেলায় ১২০ কিলোমিটার তিস্তা নদীর একই অবস্থা।

সরেজমিনে দেখা যায়, তিস্তা শুকিয়ে অনেকটা মরা খালে পরিণত হয়েছে। তিস্তার বুকে জেগেছে মাইলের পর মাইল বালুচর। বালুচরে পায়ে হেঁটে যোগাযোগ করার কারণে চরম কষ্টে পড়েছেন তিস্তাপাড়ে বসবাসকারী কয়েক লাখ মানুষ। কোথাও ৮ মাইল আবার কোথাও ১০ মাইল প্রশস্ত হয়েছে তিস্তার বুক। এখন শুধু ধুধু বালুচর।

পর্যাপ্ত পানি না থাকায় ঠিকভাবে চলাচল করতে পারছে না নৌকা। নৌকা ঘাটগুলোও অধিকাংশ বন্ধ হয়ে গেছে। যাত্রী পারাপারের কাজে নিয়োজিত কয়েকশত মাঝি এখন কর্মহীন। অনেকে অন্য পেশায় চলে গেছেন। নদীতে পানি না থাকায় মিলছে না মাছ। মৎস্যজীবীরাও কষ্টে আছেন।

পায়ে হেঁটেই চলতে হয় স্থানীয়দের। ছবি: এস দিলীপ রায়

লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলার তিস্তাপাড় গোবর্ধান গ্রামের কৃষক ফজর আলী (৬৭) দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'তিস্তা নদীতে পানি নেই বললেই চলে। মাইলের পর মাইল শুধু ধুধু বালুচর। বালুচর দিয়ে যাতায়াত করতে চরম কষ্ট পোহাতে হচ্ছে। ফসলের চাষাবাদ করতে হচ্ছে শ্যালো মেশিনের পানি দিয়ে।'

কুড়িগ্রামের রাজারহাট উপজেলার তিস্তাপাড়ের মাঝিপাড়া গ্রামের জেলে নরেন দাস (৬৫) দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'তিস্তায় পানি নেই, মাছও নেই। নদীর উপর নির্ভরশীল জেলেরা পৈতৃক পেশা ছেড়ে অন্য পেশা বেছে নিচ্ছেন। তিস্তার উপর নির্ভরশীল জেলেদের মানেবতর জীবনযাপন করতে হচ্ছে।'

একই গ্রামের নৌকার মাঝি কাদের শেখ (৫৫) দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'তিস্তায় পানি না থাকায় নৌকা ঘাট বন্ধ হয়ে গেছে। লোকজন পায়ে হেঁটে তিস্তা পাড়ি দিচ্ছেন। নৌকা চলাচল না করায় মাঝিরা কর্মহীন হয়ে পড়েছেন। পরিবার পরিজন নিয়ে করতে হচ্ছে মানবেতর জীবনযাপন।'

স্থানীয়রা বলেন, তিস্তা নদী খনন করে নির্দিষ্ট একটি চ্যানেলে পানি প্রবাহিত করা হলে উপকৃত হবেন তিস্তাপাড়ের মানুষ। এতে সারা বছরই তিস্তায় পানি প্রবাহ থাকবে। চলাচল করবে নৌকা। নদীতে পাওয়া যাবে মাছ। নদীর বুকে বিপুল পরিমাণে জমি হয়ে উঠবে আবাদি।

লালমনিরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মিজানুর রহমান দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'গেল কয়েক বছর ধরে তিস্তা নদীতে বছরে ৩-৪ মাস পানি প্রবাহ থাকে। তিস্তা শুকিয়ে অনেকটা মরা খালে পরিণত হয়েছে। তিস্তায় সামান্য কিছু পানি থাকলেও তা খণ্ডখণ্ড কয়েকটি চ্যানেলে প্রবাহিত হওয়ায় কোন কাজে আসছে না। তিস্তায় নির্দিষ্ট একটি চ্যানেল করা হলে এসব পানি উপকারে আসতো।'

তিনি বলেন, 'উজানে তিস্তার পানি আটকিয়ে সেচ কাজে লাগানোর জন্য ভাটিতে তিস্তা নদী শুষ্ক মৌসুমে মরা খালে পরিণত হয়। আমরা শুনে আসছি তিস্তা মহাপরিকল্পনা প্রকল্পের কথা কিন্তু এখন পর্যন্ত এর কোন বাস্তব উদ্যোগ নজরে আসেনি।'

'সরকার এ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করলে তিস্তা জেগে উঠবে আগের যৌবনে। তিস্তাপাড়ে আসবে অর্থনৈতিক উন্নতি, বাড়বে কৃষি উৎপাদন। জীবিকা নির্বাহ নিশ্চিত হবে তিস্তাপাড়ের কয়েক লাখ পেশাজীবী মানুষের। রক্ষা হবে পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য,' তিনি যোগ করেন।

Comments

The Daily Star  | English

Interest payments, subsidies soak up almost half of budget

Interest payments and subsidies have absorbed nearly half of Bangladesh’s total budget expenditure in the first seven months of the current fiscal year, underscoring growing fiscal stress and raising concerns over public finances.

2h ago