বৈশ্বিক প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস কমে ৩ দশমিক ৬ শতাংশ: আইএমএফ

ইউক্রেনে রুশ আগ্রাসনের কারণে বৈশ্বিক প্রবৃদ্ধি কমার পূর্বাভাস দিয়েছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)।
আইএমএফের প্রধান কার্যালয় ভবনের বাইরে প্রতিষ্ঠানটির লোগো দেখা যাচ্ছে। ছবি: এপি

ইউক্রেনে রুশ আগ্রাসনের কারণে বৈশ্বিক প্রবৃদ্ধি কমার পূর্বাভাস দিয়েছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)।

গতকাল মঙ্গলবার বার্তা সংস্থা এপি এ তথ্য জানিয়েছে।

প্রতিবেদন মতে, আইএমএফ চলতি বছর ও পরবর্তী বছরের পূর্বাভাসে পরিবর্তন আনার ঘোষণা দিয়েছে।

গত ২৪ ফেব্রুয়ারি রাশিয়া ইউক্রেনে হামলা চালানোর পর প্রায় ৮ সপ্তাহ পার হয়ে গেছে। ইউরোপের ২ গুরুত্বপূর্ণ রাষ্ট্রের সংঘাত বিশ্বঅর্থনীতিতে বিরূপ প্রভাব ফেলেছে।

বৈশ্বিক বাণিজ্য বিঘ্ন, তেলের দাম বৃদ্ধি, খাদ্য সরবরাহে হুমকি ও করোনা মহামারির কারণে সৃষ্ট অনিশ্চিত পরিস্থিতিকে আরও খারাপ দিকে নিয়ে যাওয়ার জন্য ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসনকে দায়ী করেছে আইএমএফ।

প্রায় ১৯০টি দেশকে ঋণ দেওয়া প্রতিষ্ঠানটি তাদের বৈশ্বিক প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস কমিয়ে ৩ দশমিক ৬ শতাংশে নামিয়ে এনেছে। এটি গত বছরের প্রবৃদ্ধি ৬ দশমিক ১ শতাংশের চেয়ে উল্লেখযোগ্য হারে কম এবং জানুয়ারিতে দেওয়া ২০২২ সালের পূর্বাভাস ৪ দশমিক ৪ শতাংশের চেয়েও বেশ খানিকটা কম।

সংস্থাটি আরও জানিয়েছে, আগামী বছরের প্রবৃদ্ধির হারও ৩ দশমিক ৬ দশমিক হবে।

যখন মনে হচ্ছিল বিশ্ব অর্থনীতি উচ্চপর্যায়ের সংক্রমণ সৃষ্টিকারী ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্টের কারণে সৃষ্ট মন্দা থেকে বের হয়ে আসছে, ঠিক তখনই এই যুদ্ধ শুরু হলো।

আইএমএফ'র প্রধান অর্থনীতিবিদ পিয়েরে অলিভিয়ের গৌরিঞ্চাস গতকাল সাংবাদিকদের বলেন, 'যুদ্ধের কারণে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ধীর হয়ে যাবে এবং মূল্যস্ফীতি বাড়বে।'

আইএমএফ'র পূর্বাভাস অনুযায়ী, বিভিন্ন নিষেধাজ্ঞার কবলে পড়ে রাশিয়ার অর্থনীতি ৮ দশমিক ৫ শতাংশ ও ইউক্রেনের অর্থনীতি ৩৫ শতাংশ সংকুচিত হবে।

যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিও ২০২১ সালের ৫ দশমিক ৭ শতাংশ থেকে কমে চলতি বছর ৩ দশমিক ৭ শতাংশে নেমে আসার কথা জানিয়েছে আইএমএফ। ১৯৮৪ সালের পর ২০২১ সালেই সর্বোচ্চ প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছিল দেশটি। বছরের শুরুতে ৪ শতাংশ প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস দিলেও এখন তা কমিয়েছে আইএমএফ।

রুশ জ্বালানির ওপর ইউরোপের অনেক দেশই নির্ভরশীল। যে ১৯টি দেশের আনুষ্ঠানিক মুদ্রা 'ইউরো', সে দেশগুলো সামগ্রিকভাবে ২০২২ সালে ২ দশমিক ৮ শতাংশ প্রবৃদ্ধি পেতে পারে। জানুয়ারি মাসে এ পূর্বাভাস ছিল ৩ দশমিক ৯ শতাংশ। গত বছরের প্রবৃদ্ধি ছিল ৫ দশমিক ৩ শতাংশ।

অপরদিকে, চীনের অর্থনীতি ২০২১ সালের ৮ দশমিক ১ শতাংশ থেকে কমে ২০২২ সালে ৪ দশমিক ৪ শতাংশ প্রবৃদ্ধি পেতে পারে বলেও পূর্বাভাস দিয়েছে আইএমএফ।

বেইজিং এর জিরো-কোভিড কৌশলের কারণে সাংহাই ও শেনঝেনের মতো গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যিক কেন্দ্রগুলোতে অর্থনৈতিক কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়েছে।

কয়েকটি রপ্তানিমুখী দেশ কাঁচামালের বর্ধিত মূল্যের সুবিধা নিয়ে ২০২১ সালের চেয়ে বেশি প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে পারে। উদাহরণ হিসেবে নাইজেরিয়ার কথা উল্লেখ করেছে আইএমএফ। তেল উৎপাদনকারী দেশটির প্রবৃদ্ধির হার ২০২২ সালে ৩ দশমিক ৪ শতাংশ হতে পারে। জানুয়ারির পূর্বাভাস অনুযায়ী এই হার ছিল ২ দশমিক ৭ শতাংশ।

সার্বিকভাবে আইএমএফ'র পূর্বাভাসে জানানো হয়েছে, এ বছর অর্থনৈতিকভাবে উন্নত দেশগুলোয় নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম ৫ দশমিক ৭ শতাংশ বেড়ে যেতে পারে। ইতোমধ্যে যুক্তরাষ্ট্রে গত ৪ দশকের মধ্যে মূল্যস্ফীতির হার সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছে।

আইএমএফ'র মতে, রাশিয়া ও ইউক্রেনের সংঘাতের কারণে 'দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ইউরোপের বৃহত্তম শরণার্থী সংকট' দেখা দিয়েছে।

যুদ্ধের কারণে রাশিয়া ও ইউক্রেনে উৎপাদিত সার ও খাদ্যশস্যের সরবরাহ কমার পাশাপাশি এগুলোর দাম বেড়েছে। আফ্রিকা ও মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর খাদ্য নিরাপত্তায় ঝুঁকি সৃষ্টি হয়েছে।

গত সপ্তাহে আইএমএফ'র ব্যবস্থাপনা পরিচালক ক্রিস্টালিনা জর্জিয়েভা সতর্ক করে বলেন, 'আগামীতে আরও ক্ষুধা, দারিদ্র্য ও সামাজিক অস্থিরতার ঝুঁকি বাড়বে।'

'যুদ্ধ আরও খারাপ দিকে মোড় নিতে পারে। আরও কঠোর নিষেধাজ্ঞা আসতে পারে। করোনা ভাইরাস আবারও সারা পৃথিবীকে আক্রান্ত করতে পারে। নীতিনির্ধারকদের জন্য সামনে কঠিন সময় আসছে', যোগ করেন জর্জিয়েভা।

Comments

The Daily Star  | English

Horrors inside the Gaza genocide: Through a survivor’s eyes

This is an eye-witness account, the story of a Palestinian in Gaza, a human being, a 24-year-old medical student, his real human life of love and loss, and a human testimony of war crimes perpetrated by the Israeli government and the military in the deadliest campaign of bombings and mass killings in recent history.

7h ago