আমি বঙ্গবন্ধুর মেয়ে, যেটা পারবো সেটাই বলবো: প্রধানমন্ত্রী

বিশ্বব্যাংক পদ্মা সেতুতে অর্থায়ন বন্ধ করার পরে যারা সমালোচনা করেছিলেন তাদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আমি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের মেয়ে। আমি যেটা পারবো সেটাই বলবো, যেটা বলবো ইনশাল্লাহ আমি সেটা করবো এবং করে দেখাতে পারি।

বিশ্বব্যাংক পদ্মা সেতুতে অর্থায়ন বন্ধ করার পরে যারা সমালোচনা করেছিলেন তাদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আমি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের মেয়ে। আমি যেটা পারবো সেটাই বলবো, যেটা বলবো ইনশাল্লাহ আমি সেটা করবো এবং করে দেখাতে পারি।

আজ বুধবার সকাল ১১টায় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের শাপলা হলে সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আগামী ২৫ জুন শনিবার বহুল আকাঙ্ক্ষিত পদ্মা সেতুর শুভ উদ্বোধন হতে যাচ্ছে। পদ্মা সেতু আমাদের অহংকার, আমাদের গর্ব। প্রমত্তা পদ্মা নদী দেশের দক্ষিণাঞ্চলকে রাজধানী ঢাকা এবং অন্যান্য জেলা থেকে বিচ্ছিন্ন করে রেখেছিল। আমরা দক্ষিণাঞ্চলের মানুষ কাজে সে কষ্টটা আমরা ভালো করে জানি। দক্ষিণাঞ্চলে বসবাসকারী মানুষেরাই জানে, কী ঝুঁকি নিয়ে এবং কত কষ্ট ও সময় ব্যয় করে আমাদের রাজধানীতে পৌঁছাতে হয়।

১৯৯৬ সালে আমি যখন সরকার গঠন করি তখন '৯৭ সালে আমি জাপান সফরে যাই। সেখানে জাপানের প্রাইম মিনিস্টারের কাছে আমি পদ্মা নদীতে আর খুলনা ভৈরব নদীর উপর রূপসা সেতু করে দেওয়ার প্রস্তাব দেই এবং জাপান সরকার তাতে রাজি হয়। যেহেতু পৃথিবীর সব থেকে খরস্রোতা নদীর মধ্যে পদ্মা একটি আমাজনের পরেই পদ্মা। সেখানে পদ্মা নদীর ওপর ব্রিজটা কথা সময় সাপেক্ষ জাপান পদ্মা সেতু করার জন্য সমীক্ষা শুরু করে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যখন ১৯৭৩ সালে জাপান সফরে গিয়েছিলেন, তখন যমুনা নদীর উপর সেতু এবং পদ্মা সেতুর কথাও বলেছিলেন তবে যমুনা সেতুর উপরই তিনি গুরুত্ব দিয়েছিলেন। তখন জাপান সরকার যমুনা নদীর সমীক্ষা করে। জাপানের সহযোগিতায় আমাদের যমুনা নদীর উপর সেতু নির্মাণ হয়। যদিও সেতুটা পরবর্তীতে আমার হাতেই নির্মিত হয়েছে। ৯৬ সালে ক্ষমতায় আসার পরে আমি সেতু নির্মাণ করি রেল সংযোগসহ। সেটা উল্লেখ করে তাদের যখন প্রস্তাব দেই তখন তারা রাজি হয়। সমীক্ষা রিপোর্টটাও তারা আমাদের কাছে ২০০১ সালে হস্তান্তর করে। তার ওপর ভিত্তি করেই আমরা ২০০১ এর ৪ জুলাই ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করি এবং জাপান সমীক্ষা করে মুন্সিগঞ্জের মাওয়ায় পয়েন্ট থেকে এই সেতুটা নির্মাণ করার সিদ্ধান্ত নেয়। আমাদের দুর্ভাগ্য ২০০১-এ আমি সরকারে আসতে পারিনি। তখন বিএনপি সরকারে এসে সেটা বন্ধ করে দেয়। বিএনপির নেত্রী বলেছিল এখান থেকে হবে না, এটা দৌলতদিয়া থেকে আরিচার ঘাট থেকে এই সেতুটা হবে। জাপানকে পুনরায় সমীক্ষা করতে বলে। দ্বিতীয়বার সমীক্ষায় মাওয়া থেকেই যেন সেতু হয় সেটাই তারা মতামত দেয়। তখন আমরা শুনেছিলাম ২টা পদ্মা সেতু হবে তবে বিএনপি ক্ষমতায় থাকতে কিছুই করতে পারেনি। বরং পদ্মা সেতুটা বন্ধ করে দিলো এটাই হচ্ছে বড় কথা।

আমি যখন ঘোষণা দিলাম পদ্ম সেতু নিজের অর্থায়নে করবো তখন কে কী বলেছিলেন পত্রিকায় এসেছে। প্রথমে আমাদের বিএনপি নেত্রীর কথায় আসি, ২০১৮ সালের ২ জানুয়ারি ছাত্রদলের এক আলোচনা সভায় বিএনপি বললেন, 'পদ্মা সেতুর স্বপ্ন দেখাচ্ছে সরকার। কিন্তু পদ্মা সেতু আওয়ামী লীগের আমলে হবে না।' ড. আকবর আলি খান আমি ৯৬ সালে যখন সরকারে ছিলাম তখন আমাদের অর্থ সচিব ছিলেন। ২০১২ সালের ১ জুলাই বলেছেন, 'বিশ্ব ব্যাংকের এমন সিদ্ধান্তের ফলে বাংলাদেশের পক্ষে পরবর্তীতে ঋণ সহায়তা পাওয়া খুব দুষ্কর হয়ে পড়বে। যখনই কোনো দাতা সংস্থা কোনো নতুন প্রকল্পে অর্থায়নে আগ্রহী হবে, তারা দুর্নীতির কারণে বাংলাদেশকে ভিন্ন চোখে দেখবে। সরকার যদি বিকল্প অর্থায়নে পদ্মা সেতু কাজ শুরু করে, তাহলে খরচ অনেক বেড়ে যাবে, কাজের মান নিয়েও প্রশ্ন থেকে যাবে।' আশা করি পদ্মা সেতুর কাজে মান নিয়ে কেউ কোনো প্রশ্ন তুলতে পারবে না।

আমি জানি না কেন এদের ভেতরে আত্ম বিশ্বাসের অভাব। তারা ভুলে যান জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের ডাকে এ দেশের মানুষ অস্ত্র তুলে নিয়ে যুদ্ধ করে বিজয় অর্জন করেছে। আমরা বিজয়ী জাতি। আমরা যখন একটা কথা বলি ভেবে চিন্তেই বলি। কারণ বিজয়ী জাতি হিসেবে সেই মানসিক শক্তি নিয়েই কথা বলি। কিন্তু ইনাদের ভেতরে একটা যেন পরাজিত মনোভাব। মনে হয় যেন পাকিস্তানি আমলে এই প্রদেশে একটা যে পরাধীনতার গ্লানি, তারা সব সময় সেই আত্মগ্লানিতে ভোগেন, তাদের আত্মবিশ্বাসের অভাব। কিন্তু আমি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের মেয়ে। আমি যেটা পারবো সেটাই বলবো, যেটা বলবো ইনশাল্লাহ আমি সেটা করবো এবং করে দেখাতে পারি। করেছি সে জন্য আমি দেশবাসীর প্রতি কৃতজ্ঞ।

Comments

The Daily Star  | English
What constitutes hurting religious sentiments

Column by Mahfuz Anam: What constitutes hurting religious sentiments?

The issue of religious tolerance have become a matter of great concern as we see a global rise in narrow-mindedness, prejudice and hatred.

8h ago