‘অনির্বাচিত সরকারের দায়বদ্ধতা না থাকায় সমাজে নৈতিকতার অবক্ষয়’

‘গণতন্ত্র অবরুদ্ধ’ রেখে হাজারটা পদ্মা সেতু করলেও বর্তমান সরকার জনগণের আস্থা অর্জন করতে পারবে না বলে মন্তব্য করেছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
ফখরুল
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। স্টার ফাইল ছবি

'গণতন্ত্র অবরুদ্ধ' রেখে হাজারটা পদ্মা সেতু করলেও বর্তমান সরকার জনগণের আস্থা অর্জন করতে পারবে না বলে মন্তব্য করেছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

'দেশের জনগণ আমাদের পাশে থেকে বার বার ভোট দিচ্ছে। আমাদের ওপর জনগণের আস্থা ও বিশ্বাস আছে।' প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এই বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে আজ মঙ্গলবার দুপুরে গুলশান কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি মহাসচিব এরকম মন্তব্য করেন।

তিনি বলেন, 'নির্বাচন দিয়ে দেখুক না উনাদের প্রতি কতটুকু আস্থা আছে? হাজারটা পদ্মা সেতু করেও কোনো লাভ হয় না। আইয়ুব খান যে উন্নয়ন করেছিল পাকিস্তান আমলে… কিন্তু জনগণের রাজনৈতিক মুক্তি যদি না হয়, জনগণ যদি গণতন্ত্রকে না পায়, গণতন্ত্র যদি না থাকে, তার অধিকার যদি না থাকে, তার ভোটাধিকার না থাকে, সেখানে কিন্তু কোনো লাভ হয় না।'

'আর ভোট দিচ্ছে কোথায়? মানুষ ভোট দিতে পারছে কোথায় যে, জনগণের আস্থাটা গ্রহণ করছেন তিনি কীভাবে? তিনি তো কাগজে-কলমে সিল মেরে আগের রাত্রে ভোট দিচ্ছেন, ইউনিয়ন পরিষদের ভোটের মতো আর কী', বলেন তিনি।

এক প্রশ্নের জবাবে মির্জা ফখরুল বলেন, 'নির্বাচনের বিষয়ে আমি স্পষ্ট করে বলতে চাই, এটা নির্ভর করবে নির্বাচনকালীন সরকার নিরপেক্ষ হবে কি না, তার ওপর। যদি নির্বাচনকালীন সরকার নিরপেক্ষ হয়, তাহলে আমাদের অংশগ্রহণ অবশ্যই দৃশ্যমান হবে। আর যদি না হয়, তাহলে হবে না।'

'আমরা খুব স্পষ্ট করে বলেছি, বাংলাদেশে যদি একটা সুষ্ঠু অবাধ নির্বাচন করতে হয়, এখানে অবশ্যই একটা নিরপেক্ষ নির্দলীয় সরকার থাকতে হবে। তা নাহলে এখানে কোনোমতেই আপনার যদি একেবারে স্বর্গ থেকে নির্বাচন কমিশনার নিয়ে আসেন, তাহলেও সেটাকে সুষ্ঠু করতে পারবেন না, ইমপসিবল', বলেন তিনি।

গত ২৫ জুন করোনায় আক্রান্ত হয়ে টানা ৮ দিন উত্তরার বাসায় আইসোলেশনে থেকে চিকিৎসা নেন মির্জা ফখরুল। রোববার করোনামুক্ত হওয়ায় মঙ্গলবারই গুলশানের কার্যালয় এসে বিএনপি মহাসচিব প্রথম সংবাদ সম্মেলনে আসেন। এতে সোমবার দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সভাপতিত্বে জাতীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকের সিদ্ধান্তগুলো তুলে ধরেন তিনি।

'দুর্গত পাশে নেই সরকার'

মির্জা ফখরুল বলেন, 'সরকার বন্যাকবলিত এলাকায় দুর্গত মানুষের পাশে দাঁড়াতে ব্যর্থ হয়েছে। বানভাসি মানুষের মাঝে পর্যাপ্ত ত্রাণ পৌঁছাতে পারেনি। বিশেষ করে বন্যা পরবর্তী পুনর্বাসনে সরকারের কর্মকাণ্ড দৃশ্যমান নয়।'

'জনশুমারি-গৃহগণণা সমীক্ষা সম্পূর্ণ ব্যর্থ'

মির্জা ফখরুল বলেন, 'দেশজুড়ে জনশুমারি ও গৃহগণনার কাজ সঠিকভাবে হয়নি বলে পরিকল্পনা মন্ত্রীর স্বীকারোক্তি থেকে বোঝা যায় কী অবস্থা। প্রকৃতপক্ষে জনশুমারি সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছে। এই সরকারের আমলে সব ধরনের সমীক্ষা জরিপ এবং তথ্য সংগ্রহের কাজ সরকারের নির্দেশ অনুযায়ী হওয়ার প্রকৃত তথ্য কখনোই পাওয়া সম্ভব হয়নি।'

'জনগণকে এবং বিশ্বজনমতকে বিভ্রান্ত করার জন্য, দেশের উন্নয়ন সম্পর্কে ভ্রান্ত ধারণা সৃষ্টি করার জন্যই সরকার এই ধরনের নীতি বিবর্জিত কার্যকলাপ করে চলেছে। ফলে আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো বাংলাদেশের সব তথ্যের ওপর আস্থা রাখতে পারছে না। বিএনপি সঠিক পদ্ধতিতে প্রকৃত জনশুমারি ও গৃহগণনার ব্যবস্থার দাবি জানাচ্ছে', যোগ করেন তিনি।

'সমাজে নীতি-নৈতিকতার চরম অবক্ষয়'

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, 'সম্প্রতি সাভারে স্কুল শিক্ষক হত্যার ঘটনা, নড়াইলে অধ্যক্ষকে অপমানসহ সারাদেশে সামাজিক নৈরাজ্যের চিত্রে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করছি। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সভায় এই বিষয়টি আলোচনা হয়েছে। সভা মনে করে, এই অনির্বাচিত সরকারের কোনো দায়বদ্ধতা না থাকায় সমাজের সব পর্যায়ে নীতি-নৈতিকতা চরম অবক্ষয় দেখা দিয়েছে।'

তিনি আরও বলেন, 'নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে সবার কাছে গ্রহণযোগ্য একটি নির্বাচনের মাধ্যমে গঠিত পার্লামেন্ট ও সরকারর গঠনের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক সমাজ সৃষ্টি করলেই সমাজে সুষ্ঠু পরিবেশ ফিরে আসতে পারে বলে আমরা বিশ্বাস করি।'

সম্প্রতি জাতিসংঘ মানবাধিকার পরিষদের ৫০তম অধিবেশনে উত্থাপিত ডিজিটাল যুগে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ও সাংবাদিকতার নিরাপত্তা জোরদার শীর্ষক প্রতিবেদনে 'বাংলাদেশের ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিলের দাবিতে' সন্তোষ প্রকাশ করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, 'এটাতে প্রমাণিত হয়েছে যে, এই সরকার সংবাদ মাধ্যমের কণ্ঠরোধ করে গণতন্ত্রকে হরণ করেছে।'

'লোডশেডিং ভয়াবহ অবস্থায়'

মির্জা ফখরুল বলেন, 'প্রচন্ড লোডশেডিং হচ্ছে, এটা ভয়াবহ। সরকারের শতভাগ বিদ্যুতের যে কথা, আজকের এই অবস্থা (লোডশেডিং) প্রমাণ করে যে, আমরা যেটা কথাগুলো বলে আসছি, সেগুলো বাকসর্বস্ব কথা। এগুলো (কুইক রেন্টাল পাওয়ার প্ল্যান্ট) করার আসল উদ্দেশ্য হচ্ছে দুর্নীতি করা, এসব করে নিজেদের পকেট ভারী করা, বিদেশে গিয়ে বাড়ি-ঘর তৈরি করা।'

'এখন এটা প্রমাণিত হচ্ছে যে, আমরা যেটা বলে আসছিলাম, আলটিমেটলি দেখা যাবে যে, সবই একেবারে ভঙ্গুর অবস্থা। সেই ভঙ্গুর অবস্থার দিকেই আমরা চলে যাচ্ছি', যোগ করেন বিএনপি মহাসচিব।

'ইডিএফ নামে রিজার্ভ থেকে ঋণ প্রসঙ্গে'

মির্জা ফখরুল বলেন, 'ইডিএফ না দিয়ে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ থেকে সরকারের শীর্ষ মহলের ঘনিষ্ঠ প্রভাবশালী ব্যক্তিদের সাড়ে ৭ মিলিয়ন ডলারের ঋণ প্রদানের ফলে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ এখন ৩৪ দশমিক শূন্য দুই বিলিয়ন ডলার। ওই ধরনের প্রায় সবটাই (ফোর্সডলোন অধিকাংশই রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের) পর্যবসিত হয়েছে। আইএমএফ এই ধরনের ঋণের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ অন্তর্ভুক্ত না করতে বলেছে। এই সাড়ে ৭ বিলিয়ন ডলার বৈদেশিক মুদ্রার অবয়বে আর দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে ফিরে আসার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে।'

'সরকার অর্থনীতির সব নিয়ম-কানুন ভঙ্গ করে, রিজার্ভের সব বিধি ভঙ্গ করে শুধুমাত্র নিজেদের ঘনিষ্ঠ ও প্রভাবশালী ব্যক্তিদের লাভবান করার জন্য রাষ্ট্রের এই ভয়াবহ ক্ষতি করে চলেছে। ইডিএফ ঋণের মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রা পাচার করে বিদেশের বিভিন্ন স্থানে বাড়ি, ব্যবসা, স্থাপনা তৈরি করে দেশের অর্থনীতির ভয়াবহ ক্ষতি সাধন করছে। এর সুদূর প্রসারী প্রভাব সামাজিক ও অর্থনীতি ও সমগ্র অর্থনীতিকে দেউলিয়া করে ফেলবে বলে অর্থনীতিবিদরা আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন। বিএনপির স্থায়ী কমিটির গতকালের সভায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়', যোগ করেন তিনি।

সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকুও উপস্থিত ছিলেন।

Comments

The Daily Star  | English

The story of Gaza genocide survivor in Bangladesh

In this exclusive interview with The Daily Star, Kamel provides a painful firsthand account of 170 days of carnage.

1d ago