ব্রাম স্টোকার অ্যাওয়ার্ড: হরর সাহিত্যে সেরা আন্তর্জাতিক পুরস্কার

পড়লে গা-ছমছম করে, হরর বা ভৌতিক সাহিত্যের প্রতি যাদের আলাদা ঝোঁক আছে, প্রতিবছর তাদের নজর থাকে ‘ব্রাম স্টোকার পুরস্কার’-এর দিকে। বেশ ভালো সাড়াও জাগিয়েছে এ পুরস্কার। 
ছবি: সংগৃহীত

পড়লে গা-ছমছম করে, হরর বা ভৌতিক সাহিত্যের প্রতি যাদের আলাদা ঝোঁক আছে, প্রতিবছর তাদের নজর থাকে 'ব্রাম স্টোকার পুরস্কার'-এর দিকে। বেশ ভালো সাড়াও জাগিয়েছে এ পুরস্কার। 

ডার্ক ফ্যান্টাসি এবং হরর ধারার লেখালেখিতে শ্রেষ্ঠত্ব অর্জনের স্বীকৃতি স্বরূপ 'হরর রাইটার্স অ্যাসোসিয়েশন' প্রতিবছর ব্রাম স্টোকার পুরস্কার প্রদান করে। 

ভৌতিক গল্প, উপন্যাস, চিত্রনাট্য, কবিতাসংগ্রহসহ বেশ কয়েকটি বিভাগে এই পুরস্কার দেওয়া হয়। ব্রাম স্টোকার একজন আইরিশ উপন্যাসিক ও গল্পকার। সারা বিশ্বের সাহিত্যপ্রেমী মানুষ তাকে চেনে ড্রাকুলার স্রষ্টা হিসেবে।

জগদ্বিখ্যাত 'ড্রাকুলা' উপন্যাসের এই লেখকের নামানুসারে চালু হওয়া পুরস্কারটির প্রচলন শুরু হয় ১৯৮৭ সালে। যে বছর স্টিফেন কিং এবং রবার্ট রিক যৌথভাবে ব্রাম স্টোকার শ্রেষ্ঠ সাহিত্য পুরস্কার জেতেন। পরের বছর একই বিভাগে পুরস্কার ওঠে থমাস হ্যারিসের হাতে। তার অসাধারণ সৃষ্টি 'দ্য সাইলেন্স অব দ্য ল্যাম্বস' এর জন্য। 

গত ৩ বছরে ২০১৯, ২০২০ ও ২০২১ সালে ব্রাম স্টোকার জয়ী সেরা উপন্যাসের পুরস্কার জেতেন যথাক্রমে 'মাই হার্ট ইজ আ চেইন স', 'দ্য অনলি গুড ইন্ডিয়ানস' ও 'কায়োটি রেইজ'। শেষ ৩ বছরের ব্রাম স্টোকারজয়ী শ্রেষ্ঠ উপন্যাসগুলো সামান্য পরিচিতি। 

'কায়োটি রেইজ' (২০১৯)

আউল গোয়িংব্যাক তার ভৌতিক উপন্যাস 'কায়োটি রেইজ'-এর জন্য ২০১৯ সালে শ্রেষ্ঠ ব্রাম স্টোকার উপন্যাস পুরস্কার জিতেছিলেন। 

'কায়োটি রেইজ' পড়তে গিয়ে পাঠক নিজেকে আবিষ্কার করবেন চেরোকি আদিবাসীদের আত্মার জগতে। সে জগতের নাম গালুন'লাতি। এতে বিস্ময়কর সব প্রাণীর দেখা মেলে। প্রাণীদের অবতারেরা একে অন্যের সঙ্গে সাক্ষাতের উদ্দেশ্যে গালুন'লাতিতে মিলিত হয়। অবতারদের নেতা থাকে ধূর্ত, রক্তপিপাসু কায়োটি।  

কায়োটি অন্য প্রাণীদের বোঝাতে থাকে যে, তাদের নেতৃত্বাধীন নতুন এক পৃথিবী তৈরির জন্য প্রয়োজন মানব অবতার প্রবীণ চেরোকী লুথারের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করা এবং তাকে হত্যা করা। ধূর্ত কায়োটির প্রস্তাবনায় একে একে সব প্রাণী সম্মতি জানাতে থাকে। শুধু দাঁড়কাক কায়োটির বিরোধিতা করে। এমন বিরোধিতায় কায়োটি তীব্র ক্ষোভে ফেটে পড়ে। দাঁড়কাক কায়োটিকে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দেয়- লুথারসহ সমগ্র মানবজাতিকে রক্ষার জন্য সে অবশ্যই কায়োটিকে পরাজিত করবে। 

প্রাণীদের মনুষ্য রূপ ধারণ, রক্তের স্রোত, কথা বলা মরদেহসহ অবিশ্বাস্য, ভয়ার্ত সব উপাদান সন্নিবেশ করেছেন আউল গোয়িংব্যাক 'কায়োটি রেইজ' উপন্যাসে। 

'দ্য অনলি গুড ইন্ডিয়ানস' (২০২০)

স্টিফেন গ্রাহাম জোনসের 'দ্য অনলি গুড ইন্ডিয়ানস' ভৌতিক উপন্যাসের গল্প আবর্তিত হয় আত্মা হিসেবে ফিরে আসা এক মুস হরিণকে ঘিরে। ৪ জন মানুষ নির্মমভাবে তাকে যখন হত্যা করে, তখন তার গর্ভে ছিল অনাগত সন্তান। গর্ভের সন্তানকে হত্যার প্রতিশোধ নিতে সে আত্মা হয়ে ব্ল্যাকফুটে ফিরে আসে। উপন্যাসজুড়ে প্রাণী ও মানুষের প্রতি একের পর এক ঘটতে থাকে অসংখ্য ভয়ঙ্কর সব নিষ্ঠুর ঘটনা। 

'মাই হার্ট ইজ আ চেইন স' (২০২১

২০২১ সালের ব্রাম স্টোকার সেরা উপন্যাসের পুরস্কারও জিতে নেয় স্টিফেন গ্রাহাম জোনস। তার লেখা উপন্যাসে গল্পের কেন্দ্রীয় চরিত্র জেইড ড্যানিয়েলস। যে কি না একজন ক্রোধী, সমাজ-বিচ্ছিন্ন মেয়ে। মায়ের সঙ্গে যোগাযোগ না রাখা জেইড তার নির্যাতনকারী, মদ্যপ বাবার সঙ্গে থাকে। 

গল্প তার ডানা মেললে, জেইডকে আবিষ্কার করা যায় নিজের একটা পৃথিবীতে বসবাস করতে। যেখানে সে নিরাপত্তা খুঁজে পায় ভৌতিক চলচ্চিত্রের মাঝে। বিশেষত, মুখোশে ঢাকা খুনিদের গল্প উপজীব্য করে বানানো ছবির মাঝে। জেইডের ক্রমাগত দেখা বেশিরভাগ চলচ্চিত্রের মুখোশে আড়ালের খুনিরা পৃথিবীর উপর প্রতিশোধ নেয়, যেই পৃথিবী তাদের সঙ্গে অন্যায় করেছে বলে তাদের বিশ্বাস। 

জেইড ড্যানিয়েলসকে দেখা যায় নিজের শহরের ইতিহাস এমনভাবে বর্ণনা করতে যেন তা তার দেখা চলচ্চিত্রগুলোর একটি। উপন্যাসের এক পর্যায়ে ইন্ডিয়ান লেকে রক্ত বয়ে যেতে থাকে, লাশের দেখা মেলে। এরই সঙ্গে জেইড ড্যানিয়েলসের ভবিষৎবাণী অনুযায়ী গল্পের প্লট উন্মোচিত হতে থাকে।

 

Comments