‘রাস্তার উন্নয়ন আমাদের ভাগ্য বদলে দিয়েছে’

ম্রো
বান্দরবান-থানচি সড়কের পাশে দোকানে স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত ফল-সবজির পসরা। ছবি: স্টার

নৈসর্গিক প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের জন্য খ্যাত বান্দরবানের চিম্বুক পাহাড়। প্রকৃতিপ্রেমী ও ভ্রমণ পিপাসুদের অন্যতম আকর্ষণ এটি।

ছবির মতো সুন্দর সবুজ প্রকৃতির লীলাভূমি চিম্বুক পাহাড়ে ম্রোদের জীবন-জীবিকার মান ও অর্থনৈতিক অবস্থা ১০ বছর আগেও খুব নাজুক ছিল।

যোগাযোগ ব্যবস্থা খারাপ থাকায় নিজেদের উৎপাদিত শস্য, সবজি, ফল তারা সঠিক সময়ে বিক্রি করতে পারতেন না। তাই, পেতেন না পণ্যের যথাযথ মূল্য।

গত কয়েক বছরে যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো হওয়ায় এবং বান্দরবান-থানচি সড়কসহ বেশ কয়েকটি স্থানীয় সড়ক নির্মাণ হওয়ায় তারা তাদের উৎপাদিত ফসল বিক্রি করে লাভবান হচ্ছেন।

ম্রো
পর্যটকদের আকৃষ্ট করতে দোকানে রাখা স্থানীয়ভাবে তৈরি কাপড়। ছবি: স্টার

চিম্বুক পর্যটন স্পটের দোকানদার কুমসিং ম্রো (২৬) দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'বান্দরবান-থানচি রাস্তা নির্মাণের পর থেকে চিম্বুক পাহাড়ের গহীন অরণ্যে বসবাসরত ম্রোদের ভাগ্য পরিবর্তন হতে দেখেছি। এই রাস্তা হওয়ার আগে আমরা সারাদিন জুমে কাজ করে ধান, মার্ফা (এক প্রকার শসা) তুলা, তিল, কলা, কুমড়া, মরিচসহ নানান রকমের ফসল উৎপাদন করতাম।'

'তবে, সময়মতো ফসল বাজারে পাঠাতে পারতাম না। আবার বিক্রি করতে গেলে ন্যায্যমূল্যও পেতাম না। রাস্তা হওয়ায় এখন যা উৎপাদন করি তাই বিক্রি করতে পারি। দামও ভালো পাই,' যোগ করেন তিনি।

চিম্বুক পাহাড়ের পূর্বে রোয়াংছড়ি উপজেলার তারাছা ইউনিয়ন আর পশ্চিমে রেইচা ইউনিয়ন। এখন চিম্বুক দিয়ে রাস্তা ধরে যেতে থাকলে ২ পাশে সারি সারি চালকুমড়া, মিষ্টি কুমড়া, কলা, জাম্বুরা, কমলা ইত্যাদি সবজি-ফলসহ ব্যবসায়ীদের অপেক্ষা থাকতে দেখা যায়।

দোকানদার ডলি প্রু মারমা (৩৫) ডেইলি স্টারকে বলেন, 'বান্দরবান-থানচি রাস্তা হওয়ার পর আমরা আর্থিক সচ্ছলতার আশা নিয়ে এখানে এসেছি। এখানে আসার পর থেকে পরিবার নিয়ে ভালো আছি।'

ম্রো
বান্দরবান-থানচি সড়কের পাশে দোকানে কাপড় সেলাই করছেন স্থানীয় বাসিন্দা। ছবি: স্টার

দৈনিক বেচাকেনার বিষয়ে তিনি বলেন, 'পর্যটক আসলে প্রতি দিন ৪-৫ হাজার টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়। তাছাড়া, দৈনিক ১-২ হাজার টাকা তো হয়ই।'

ওই এলাকার বাসিন্দা পায়াং ম্রো (৫৫) ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমাদের ভাগ্য পরিবর্তন করেছে চিম্বুকের পর্যটন ও থানচি সড়ক। রাস্তা হওয়ার আগে যখন জুম চাষ করতাম, তখন খুব খারাপ ছিলাম। কোনো পণ্য বিক্রি করলে ন্যায্য দাম পেতাম না।'

'এখন জুমের যে কোনো ফসল নগদ টাকায় বিক্রি করি' উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, 'ব্যবসায়ীরাও এখানে এসে টাকা দিয়ে ফসল নিয়ে যায়।'

ভালো থাকলেও তাদের মনে ভয় আছে বলে জানান পায়াং ম্রো। বলেন, 'আমদের বাগান-জুমগুলো কখন যে কে দখল করে ফেলে—তা নিয়ে আতঙ্কে থাকি। আমরা এমনিতেই গরিব, আবার পড়ালেখাও জানি না।'

ম্রো
বান্দরবান-থানচি সড়কের পাশে ব্যবসায়ীদের রাখা কুমড়া। ছবি: স্টার

পাহাড়ে কুমড়া ও আম চাষ করেন তুইঙিন ম্রো। তিনি ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমার বাগানে প্রায় ৮০০ আম গাছ আছে। এ বছর প্রায় ১ লাখ ৫০ হাজার টাকার আম বিক্রি করেছি। মিষ্টি কুমড়া বিক্রি করেছি ১ লাখ ৪০ হাজার টাকার। সঠিক দাম পেলে এবার চালকুমড়া বিক্রি করে ৫০ হাজার টাকা আয় হতে পারে।'

তিনি জানান, মিষ্টি কুমড়া প্রতি মণ ৬০০ টাকা, চালকুমড়া ৫০০ টাকা। মৌসুমে পুরো বাগানের আম চুক্তির মাধ্যমে বিক্রি করা হয়েছে ১ লাখ ৫০ হাজার টাকায়।

তুইঙিন ম্রো বলেন, 'আমরা চিম্বুক পাহাড়ে থেকে বাগানের ফসল ন্যায্য দামে বিক্রির সুযোগ পাচ্ছি, এর একমাত্র কারণ থানচি সড়ক। রাস্তার উন্নয়ন আমাদের ভাগ্য বদলে দিয়েছে।'

Comments

The Daily Star  | English

JP central office vandalised, set ablaze

A group of unidentified people set fire to the central office of Jatiyo Party in Dhaka's Kakrail area this evening

43m ago