বেলজিয়াম: সোনালী প্রজন্মের হাতে কি ধরা দেবে সাফল্য?

কাতার বিশ্বকাপে শিরোপা জিততে পারে যেকোনো দলই। তবে ব্রাজিল, আর্জেন্টিনা, ফ্রান্স, জার্মানি, স্পেন, পর্তুগালের মতো তারকাখচিত দলগুলোর পক্ষে বাজি ধরা লোকের সংখ্যাই বেশি। বেলজিয়ামও কাগজে কলমে কোন অংশে কম নয় তাদের চেয়ে। কেভিন ডি ব্রুইনা, ইডেন হ্যাজার্ড, রোমেলু লুকাকুরা জ্বলে উঠলে শিরোপার স্বপ্নে বিভোর হতে পারে রেড ডেভিলরাও।

জাতীয় দলে এলে বরাবরই ভিন্ন গ্রহের মানুষে পরিণত হন লুকাকু। ইনজুরি বাঁধা না হয়ে দাঁড়ালে ২৯ বছর বয়সী তারকা স্ট্রাইকার যে এবারও নিজের সেরাটা দিতে মুখিয়ে থাকবেন, তা বলাই বাহুল্য। এদিকে মিডফিল্ডে ডি ব্রুইনা যে সময়ের সেরাদের একজন, সেকথা অনেক আগেই জানান দিয়েছেন ম্যানচেস্টার সিটি তারকা। তাই প্লে-মেকার ভূমিকায় হ্যাজার্ড দ্যুতি ছড়ানোর ওপর নির্ভর করছে না বেলজিয়ামের সাফল্য।

চেলসি ছাড়ার পর থেকেই ইনজুরি ও খারাপ ফর্ম নিত্যসঙ্গী ৩১ বছর বয়সী এই ফরোয়ার্ডের। চলতি মৌসুমে রিয়াল মাদ্রিদের হয়ে মাঠে নামার সুযোগ পেয়েছেন মাত্র ছয় ম্যাচে। নেই আগের মতো গতি, ফিনিশিং ও ড্রিবলিংয়েও হারিয়েছেন ধার। তবে বিশ্বকাপকে সামনে রেখে হ্যাজার্ডের ভিতর বাড়তি উদ্যম দেখছেন বেলজিয়াম কোচ রবার্তো মার্তিনেজ।

সেপ্টেম্বরে ওয়েলস ও নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে এক ঘণ্টার কিছু বেশি সময় মাঠে ছিলেন হ্যাজার্ড। সেই ম্যাচ দুটিতে নিজের পুরনো রূপের কিছুটা ঝলক দেখিয়েছেন বেলজিয়াম অধিনায়ক। গণমাধ্যমকর্মীদের মার্তিনেজ বলেছিলেন, 'মাঠে যথেষ্ট সময় না পাওয়ার বিষয়টি আছে, কিন্তু সে (হ্যাজার্ড) মানসিকভাবে ভালো অবস্থায় আছে ও মাঠে নামার জন্য মুখিয়ে আছে। আমি তাকে ঘিরে একটি শক্তি ও খুশি দেখছি যেটা আমি ছয় মাস আগে দেখিনি।'

চার বছর আগে সেমিফাইনালে ফ্রান্সের বিপক্ষে হেরে আক্ষেপে পুড়তে হয়েছিল বেলজিয়ামকে। যদিও তৃতীয় হয়ে সেবারই নিজেদের বিশ্বকাপ ইতিহাসের সর্বোচ্চ সাফল্য পেয়েছিল হ্যাজার্ডের দল। সেবার গোটা আসরেই আলো ছড়িয়েছিলেন রিয়াল তারকা। এবারও নিজের ওপর বিশ্বাস হারাচ্ছেন না তিনি।

লুক্সেমবার্গের সংবাদমাধ্যম আরটিএলকে হ্যাজার্ড বলেন, 'আমি জানি আমি কি করতে পারি। এখন আমি বিশ্বকাপের জন্য উপযুক্ত অবস্থায় ফিরতে চাই। আমি সবচেয়ে খুশি থাকি যখন খেলি। যখন আমি খেলি আমি আমার সর্বোচ্চটা দেই। সবসময়ই বলে এসেছি অতীতের ইডেন হ্যাজার্ড ফিরে আসবে যখন সে খেলবে। আমার শুধু ছন্দে ফেরা প্রয়োজন।'

নেই অস্ত্রের কোন কমতি

বেলজিয়ামের এই প্রজন্মকে বলা হয়ে থাকে সোনালী প্রজন্ম। বর্তমান দলের অধিকাংশ সদস্যই দীর্ঘদিন ধরে দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন বিশ্বের বিভিন্ন লিগে। ডি ব্রুইনা, হ্যাজার্ড, থিবো কর্তোয়া, লুকাকুরা ক্লাব ফুটবলের বড় নাম। তবে এখন পর্যন্ত ১২ মিলিয়ন বেলিজিয়ানকে কোন ট্রফি এনে দিতে পারেননি তারা।

বর্তমান দলের অনেকেই পা দিয়েছেন ত্রিশের কোঠায়। ফলে আগামী বিশ্বকাপে তাদের না থাকার সম্ভাবনাই বেশি। তাই এবার না হলে কখনোই নয়, অনেকটা এমন সমীকরণ মাথায় নিয়েই কাতারে নামবে বেলজিয়াম। নিজেদের দারুণ প্রতিভার স্বাক্ষর এবারের বিশ্বকাপেই রাখার শেষ সুযোগ পাবেন তারা। মরুর বুকের আসর শেষেই শেষ হবে মার্তিনেজের চুক্তির মেয়াদ, তার জন্যও বেলজিয়ামকে কোন সাফল্য এনে দেওয়ার শেষ মঞ্চ কাতার বিশ্বকাপ।

বিগত আসরগুলোতে অনেক সম্ভাবনা নিয়ে গেলেও নিজেদের নামের প্রতি সুবিচার করতে পারেনি বেলজিয়াম। রাশিয়ায় তৃতীয় হওয়াটা নিশ্চিতভাবেই তাদের লক্ষ্য ছিল না। ২০২০ সালের ইউরোর কোয়ার্টার ফাইনালে হারও ছিল তাদের জন্য বড় ধাক্কা। এবার 'এফ' গ্রুপে ক্রোয়েশিয়া, মরক্কো ও কানাডার বিপক্ষে লড়বে বেলজিয়াম। শেষ ষোলতে পা রাখতে তাই খুব একটা বেগ পাওয়ার কথা নয় মার্তিনেজের শিষ্যদের।

বেলজিয়াম আক্রমণভাগের মান নিয়ে প্রশ্ন তুলবেন খুব কম মানুষই। তবে রক্ষণে অতীতে কিছুটা সংগ্রাম করেছে তারা। জুনে ঘরের মাঠে নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে ৪-১ ব্যবধানের হারে আরও বেশি করে সামনে আসে তাদের এই দুর্বলতা। ২০২১ সাল থেকে এখন পর্যন্ত ১২ ম্যাচ খেলে মাত্র দুটিতে ক্লিন শিট রাখতে সক্ষম হয়েছে তারা।

তবে গোলরক্ষক কর্তোয়ার মান নিয়ে নেই কোন প্রশ্ন। অতিমানবীয় সব সেভে প্রায়ই রিয়ালকে ম্যাচে রাখেন তিনি। এবার তাই গুরুদায়িত্বটা নিতে হবে টবি আল্ডারওয়েরল্ড ও ইয়ান ভারটোনঘেনকেই। দুজনেই জাতীয় দলের হয়ে খেলে ফেলেছেন ১০০টিরও বেশি ম্যাচ। এক্সেল উইটসেল, হ্যাজার্ড, ডি ব্রুইনাদের অভিজ্ঞতার সঙ্গে লিওনার্দো ট্রোসার্ড, ইয়োরি তিলেমানসদের তারুণ্যের মিশ্রণে অদম্য হয়ে উঠতে পারে বেলজিয়াম মিডফিল্ডও।

আক্রমণভাগে লুকাকুকে না পেলে কিছুটা সমস্যায়ই পড়বেন মার্তিনেজ। সেক্ষেত্রে তাকে আস্থা রাখতে হবে মিচি বাতশুয়াই ও নবাগত লোইস ওপেন্ডার ওপর। তবু মার্তিনেজের অস্ত্রভাণ্ডারকে সমৃদ্ধই বলা চলে। এবার কি তবে আসল কাজটা করে দেখাতে পারবেন স্প্যানিশ কোচ?

বিশ্বমঞ্চে বেলজিয়ামের ইতিহাস

সর্বশেষ ১০টি বিশ্বকাপের আটটিতেই জায়গা করে নিয়েছিল বেলজিয়াম। তবে ২০০৬ ও ২০১০ সালে বাছাইপর্ব বাঁধা পারেনি তারা। ১৯৩০ সালে উরুগুয়েতে উদ্বোধনী আসরে খেলতে যাওয়া চারটি ইউরোপীয় দলের একটি ছিল বেলজিয়াম। ২০১৮ বাদে আরও একবার শেষ চারে খেলেছিলো তারা, ১৯৮৬ সালে দিয়েগো ম্যারাডোনার আর্জেন্টিনা ছিটকে দিয়েছিল তাদের। সবমিলিয়ে ১৩টি বিশ্বকাপে সুযোগ পেয়েছে বেলজিয়াম।

যেভাবে আগমন ২০২২ বিশ্বকাপে

ফিফা র‍্যাঙ্কিংয়ের দুই নম্বর দল হ্যাজার্ড-ব্রুইনারা। বাছাইপর্বে আধিপত্য বিস্তার করেই মূল পর্বে নাম লিখিয়েছে তারা। আট ম্যাচের ছয়টিতেই জয় তাদের। মোট ২৫ বার প্রতিপক্ষের জালে বল জড়িয়েছে বেলজিয়াম, অর্থাৎ ম্যাচপ্রতি তিনটিরও বেশি গোল তাদের। তবে সাম্প্রতিক ফর্ম কিছুটা দুশ্চিন্তার কারণ হতে পারে রেড ডেভিলদের জন্য। ২০২১ এর অক্টোবর থেকে ১২টি ম্যাচের মাত্র পাঁচটিতে জয় পেয়েছে বেলজিয়াম।

Comments

The Daily Star  | English

Pilots faked flying records

CAAB inquiry finds, regulator yet to take action

11h ago