বেশিরভাগ লোগোতে লাল রং থাকে কেন

নেটফ্লিক্স, লিভাইস, সিএনএন, এইচ অ্যান্ড এম, ডিজনি, লিভাইস— এরকম হাজারো কোম্পানির লোগোতে একটি মিল লক্ষ্য করা যায়, তা হলো লাল রং।

বড় বড় ব্র্যান্ড তাদের ব্র্যান্ডিং ও লোগোতে কেন লাল রং ব্যবহার করে, তার বিজ্ঞানসম্মত কারণ আছে।

ডিজিটাল মার্কেটিং প্রতিষ্ঠান ওয়েবপেজ এফএক্সের তথ্য অনুসারে, মানুষ কোনো ব্যক্তি বা বস্তু দেখার ৬০ থেকে ৯০ সেকেন্ডের মধ্যে ওই ব্যক্তি বা বস্তু সম্পর্কে মনে মনে একটা ধারণা বা সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলে এবং এই সিদ্ধান্ত নেওয়াটা ৯০ ভাগ নির্ভর করে রংয়ের ওপর ভিত্তি করে।

ওয়েবপেজ এফএক্সের মার্কেটিং অ্যানালিস্ট এমিলি কার্টারের মতে, কোম্পানিগুলো মানুষের আবেগ ও অনুভূতিকে লক্ষ্য করে লোগো কিংবা বিজ্ঞাপনে রং ব্যবহার করে থাকে।

লাল রংয়ের বিশেষত্ব কী

কার্টারের কথা অনুসারে 'লাল রং হৃদকম্পনের সঙ্গে জড়িত। এটি দিয়ে তাড়াহুড়োও বোঝানো হয়। এ জন্য ক্লিয়ারিং সেল অথবা বড় কোনো ছাড়ের পণ্যের গায়ে লাল রংয়ের ট্যাগ লাগানো হয়।'

আমাদের চোখের ফটো রিসেপটরগুলো সাধারণত দীর্ঘ ওয়েভলেন্থ আছে (যেভাবে আমরা লাল রং দেখি), এমন আলোর প্রতি একটু বেশি স্পর্শকাতর।

নিউরোসায়েন্টিস্ট বেভিল কনওয়ে বলেন, 'লোগোতে লাল রং ব্যবহারের দিকে অনেকেরই ঝোঁক বেশি, কারণ এটি সবচেয়ে বেশি দৃষ্টিগ্রাহ্য রং'।

তিনিসহ অনেক গবেষক বিভিন্ন ভাষাভাষীর মানুষের ওপর রংয়ের প্রভাব নিয়ে গবেষণা করেছেন।

কনওয়ে বলেন, 'লাল যে একটি বিশেষ রং, তার বহু প্রমাণ আছে। পৃথিবীর সব ভাষায় এবং সব রংয়ের মধ্যে লাল রং দিয়েই সবচেয়ে কার্যকরভাবে যোগাযোগ করা সম্ভব।'

ইতিবাচক এবং নেতিবাচক উভয় অনুভূতির সঙ্গেই এই রংটির সংযোগ আছে। এটা নির্ভর করে কোম্পানিগুলো রংটিকে কীভাবে ব্যবহার করছে তার উপর। ট্রাফিক সিগন্যালের লাল রং দিয়ে কড়া নিয়ম বোঝায়, আবার লাল রংয়ের লাভ চিহ্ন দিয়ে হয়তো উষ্ণতা, আবেগ ও ভালোবাসা বোঝায়। কিন্তু লাল রংয়ের আবেদন সবসময়ই স্পষ্ট।

ফাস্ট ফুড প্রতিষ্ঠানগুলো কেন লাল রং ব্যবহার করে

আপনার দৃষ্টি আকর্ষণের বাইরেও ফাস্ট ফুড প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছে লাল রংয়ের অন্য মর্মার্থ আছে। এই রংটি মানুষের ক্ষুধা ও রুচি বাড়াতে সাহায্য করে। আপনি হয়তো বুঝবেনও না, কিন্তু লাল রংয়ের কারণে হয়তো খাবারটি আপনার খেতে ইচ্ছা করবে।

খাবারের রুচি বাড়াতে সাহায্য করে বলেই ম্যাকডোনাল্ডস এবং কোকাকোলার মতো প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের লোগো এবং ব্র্যান্ডিংয়ে লাল রংকে এত প্রাধান্য দেয় বলে মনে করেন কার্টার।

অন্য রংগুলোর ভূমিকা কী

আপনি হয়তো ভাবছেন এমনও তো অনেক প্রতিষ্ঠান আছে যারা তাদের ব্র্যান্ডিংয়ে লাল রং ব্যবহার করে না। যেমন: স্টারবাকস। যেসব ব্র্যান্ড সাধারণত নিজেদেরকে 'স্বাস্থ্যকর' এবং 'পরিবেশবাদী' হিসেবে উপস্থাপন করতে চায়, তারা নিজেদের ব্র্যান্ডিংয়ে সবুজ রং ব্যবহার করে। সবুজ রংটা অনেকটাই প্রকৃতির সঙ্গে সম্পর্ক নির্দেশ করে। এ জন্য হোল ফুডস, মর্নিং স্টার এবং ট্রপিকানার মতো অর্গানিক খাবার বিপণনকারী প্রতিষ্ঠানের কাছে সবুজ রংটি এত গুরুত্বপূর্ণ।

যেকোনো খাবারের প্যাকেটের গায়ে সাধারণ নীল রং ব্যবহার করা হয় না। কারণ, এই রং রুচি নষ্ট করে। নীল উৎপাদনশীলতার প্রতীক। তাই ফোর্ড, আমেরিকান এক্সপ্রেস এবং চেস ব্যাংক তাদের লোগো ও ব্র্যান্ডিংয়ে নীল রং ব্যবহার করে।

নারীদের পণ্যে সাধারণত পিংক বা গোলাপি রং ব্যবহার করা হয়, কারণ বিশ্বব্যাপী এটা প্রতিষ্ঠিত যে নারীরা এই রংটি পছন্দ করেন। গোলাপি রংটিকে অনেকে 'মিষ্টি রং' হিসেবেও বিবেচনা করেন এবং ডেজার্ট প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানগুলো এই রং ব্যবহার করে। যেমন: বিশ্বখ্যাত আইসক্রিম প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান বাস্কিন-রবিনস।

অন্যদিকে, অভিজাত ও দামী পণ্যে সাধারণত কালো ও বেগুনী রং ব্যবহার করা হয়। লোগোতে এই রং ব্যবহারকারী প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের ক্রেতাদেরকে এই বার্তা দিতে চান যে তাদের পণ্যের সুনাম আছে। যেমন: এবিসি নিউজ, বিবিসি, নিউইয়র্ক টাইমস, গুচ্চি, প্রাডা।

সূত্র: রিডার্স ডাইজেস্ট

Comments

The Daily Star  | English

UK govt unveils 'tighter' immigration plans

People will have to live in the UK for 10 years before qualifying for settlement and citizenship

1h ago