গাজীপুরে দুদকের গণশুনানি: ভূমি সংক্রান্ত ২৪টিসহ ১০০ অভিযোগ

গাজীপুরে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) গণশুনানিতে প্রায় ১০০ অভিযোগ উত্থাপিত হয়েছে বলে জানিয়েছেন কমিশনের সচিব মো. মাহবুব হোসেন।

গাজীপুরে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) গণশুনানিতে প্রায় ১০০ অভিযোগ উত্থাপিত হয়েছে বলে জানিয়েছেন কমিশনের সচিব মো. মাহবুব হোসেন।

তিনি বলেন, 'দুদকের আওতাধীন ১১টি আমলযোগ্য বিষয়ের মধ্যে ৬টি প্রতিরোধযোগ্য। আর বাকিগুলো প্রতিকারযোগ্য। প্রতিরোধযোগ্য বিষয়গুলো আমরা শুনে তাৎক্ষণিক সংশ্লিষ্ট সেবাদানকারী বিভাগের জেলা কার্যালয়ের কর্মকর্তা বা নির্দিষ্ট কর্মকর্তাকে দায়িত্ব দিয়েছি। প্রতিকারযোগ্য বিষয়গুলো দুদক অনুসন্ধানের জন্য নোট নিয়েছে। তবে প্রতিরোধযোগ্য বিষয়গুলোও আমরা ওয়াচে রাখব। নিষ্পত্তি না হলে দুদকের হস্তক্ষেপে তা নিষ্পত্তি করা হবে।'

আজ সোমবার গাজীপুরের বঙ্গতাজ অডিটোরিয়ামে দুদকের ১৪৯তম গণশুনানি অনুষ্ঠিত হয়, যা শেষ হয় বিকেল ৪টায়। এর আগে বিভিন্ন জেলায় ১৪৮টি গণশুনানি অনুষ্ঠিত হয়।

গণশুনানিতে সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান স্বাস্থ্য, বিদ্যুৎ, দলিল নিবন্ধন, ভূমি, শিক্ষা, রেলওয়ে, সিটি করপোরেশন, ইউনিয়ন পরিষদ, পাসপোর্ট, বন বিভাগসহ বিভিন্ন অধিদপ্তরের সেবাগ্রহিতারা তাদের নানা ধরনের অভিযোগ তুলে ধরেন। অভিযোগগুলোর মধ্যে ভূমি সংক্রান্ত ২৪টি অভিযোগ উত্থাপিত হয়।

মহানগরের বাসিন্দা বীর মুক্তিযোদ্ধা শেখ সামসুদ্দীন বলেন, 'গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দিন মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসকরা ব্যবস্থাপত্রে যেসব ওষুধের নাম লিখে দেন, তার সবগুলো ওষুধ বাইরে থেকে কিনে নিতে হয়। হাসপাতাল থেকে বিনামূল্যে পাওয়া যায় না। মুক্তিযোদ্ধারা হাসপাতালে কাঙ্ক্ষিত সেবা পান না।'

একই বিষয় সমর্থন করে মজিবুর রহমান বলেন, 'গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দিন আহমেদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রচুর দালাল। যেকোনো সেবা নিতে গেলে দালালের মুখোমুখি হতে হয়। একটা সেবা নিতে গেলে আগেই দালালেরা টাকা দাবি করে তাদের পছন্দ অনুযায়ী ক্লিনিকের ঠিকানায় ধরে নিয়ে যায়। রক্তের ২টি টেস্ট ও ১টি বুকের টেস্টের জন্য ক্লিনিকে ১ হাজার ২০০ টাকা দিতে হয়।'

এ প্রসঙ্গে ওই হাসপাতালের পরিচালক ডা. তপন কুমার সরকার বলেন, 'প্রতিদিন দেড় থেকে ২ হাজার বহিরাগত রোগী চিকিৎসা নেন। হাসপাতালে আগে থেকেই রক্তের স্বাভাবিক পরীক্ষা নিরীক্ষা, সিটি স্ক্যান, আল্ট্রাসনোগ্রাম করা হয়। নানা সীমাবদ্ধতার কারণে শতভাগ সেবা দেওয়া সম্ভব হয় না। ৩০-৪০ ভাগ সেবা দেওয়া সম্ভব হয়।'

তসলিম, রফিক, হাসান ইউসুফ খান, ইয়াকুব আলীসহ ২৪ জন ভূমি সংক্রান্ত অভিযোগ করেন। তারা দাবি করেন, গাজীপুর পৌর ভূমি অফিস, টঙ্গী ভূমি অফিস, কাপাসিয়ার সনমানিয়া, সালনা ভূমি অফিসসহ বিভিন্ন ভূমি অফিসে নামজারির জমাভাগ, পর্চা উত্তোলন, একজনের জমি আরেকজনের নামে নামজারি ও জমাভাগ করে দেওয়া, নির্ধারিত মৌজার নির্ধারিত পরিমাণের জমি থাকার পরও একই দাগে অধিক পরিমাণ জমি নামজারির জমাভাগ করে দেওয়া হয়। এতে জমির মালিকদের মধ্যে দ্বন্দ্ব সৃষ্টি হয়। অভিযোগকারীরা সনমানিয়া ভূমি অফিসের কর্মচারী শচীন কুমার রাজবংশী, টঙ্গী ভূমি অফিসের ইকবাল, সাইফুল, গাজীপুর পৌর ভূমি অফিসের রুমির নাম উল্লেখ করেন। ভূমি অফিসগুলোতে দালালদের দৌরাত্ম্য সেবাগ্রহিতাদের হয়রানি হতে হয় বলে জানান তারা।

গাজীপুরের জেলা প্রশাসক (ডিসি) মো. আনিসুর রহমান ভূমি সংক্রান্ত অভিযোগগুলোর নোট নেন। একইসময় বিভিন্ন ইউনিয়ন ভূমি অফিসের কয়েকজন কর্মচারীর নামে নোট নিয়ে তাদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার ঘোষণা দেন। এ ছাড়া ভূমি সংক্রান্ত বড় অভিযোগের ব্যাপারে অভিযোগকারীদের আগামী বুধবার তার কার্যালয়ে নথিপত্রসহ উপস্থিত থাকার পরামর্শ দেন। অভিযোগে যাদের নাম এসেছে, তাদের অনেকেই ভূমি অফিসের কর্মচারী নয়। তারা দালাল হয়ে থাকতে পারে। দালালদের ব্যাপারে তিনি সহকারী কমিশনারদের নির্দেশনা দেন।

Comments

The Daily Star  | English

One month of interim govt: Yunus navigating thru high hopes

A month ago, as Bangladesh teetered on the brink of chaos after the downfall of Sheikh Hasina, Nobel Laureate Muhammad Yunus returned home to steer the nation through political turbulences.

7h ago