ডেইলি স্টারের সাংবাদিককে ‘দেখে নেওয়ার’ হুমকি চাকরিচ্যুত সেই কনস্টেবলের
দুই কিলোমিটার পথের জন্য মেয়ের বিয়েতে হেলিকপ্টার উড়িয়ে আনার সংবাদ প্রকাশ করায় দ্য ডেইলি স্টারের সাংবাদিক এফ এম মিজানুর রহমানকে 'দেখে নেওয়ার' হুমকি দিয়েছেন চট্টগ্রাম নগর পুলিশের ট্রাফিক বিভাগের বরখাস্ত পুলিশ কনস্টেবল মো. মহিবুল্লাহ।
গতকাল বুধবার দ্য ডেইলি স্টার বাংলায় 'চাঁদাবাজি মামলায় বরখাস্ত কনস্টেবল এবার মেয়ের বিয়েতে আনলেন হেলিকপ্টার' শিরোনামে সংবাদ প্রকাশের পর আজ দুপুর ২টা ২২ মিনিটে নিজের ব্যক্তিগত মোবাইল থেকে প্রতিবেদককে ফোন করেন তিনি।
ফোনে মহিবুল্লাহ বলেন 'আপনার নিউজটি সুন্দর হয়েছে। খুব ভালোভাবে করেছেন। আর আমি এটাও জানতে পেরেছি আপনি একজন চাঁদাবাজ সাংবাদিক। পুলিশের বিভিন্ন ট্রাফিক বক্স এবং প্রতিষ্ঠান থেকে চাঁদাবাজি করেন এই সংবাদ আমার কাছে আছে। আপনার সাথে আমার কথা হবে, কত বড় সাংবাদিক হয়েছেন আপনি আমি তা বের করে দিব। আপনি দেখবেন।'
এরপর দুপুর ২টা ৫৩ মিনিটে দ্বিতীয়বার ফোন করে ৩ মিনিট ২৯ সেকেন্ড কথা বলেন। সেখানে তিনি আরেক পত্রিকার সাংবাদিকের নাম জড়িয়ে বলেন, 'এক লাখ টাকা আপনারা চাঁদা চেয়েছেন নিউজ না করার জন্য।' পরে তিনি বলেন, 'ডেইলি স্টারের সম্পাদক কে? আপনার আমলনামা আমি রেডি করে পাঠিয়ে দিচ্ছি।'
ছিনতাই ও চাঁদাবাজির অভিযোগে গত বছরে ১৮ জানুয়ারি পাহাড়তলী থানায় মো. মহিবুল্লাহর বিরুদ্ধে মামলা হয়। অভিযোগের সত্যতা পাওয়ায় তাকে চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। ওই মামলায় পাহাড়তলী থানা পুলিশ মুহিববুল্লাহ ও তার ছেলেসহ আরও দুই জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট দিয়েছে। মহিববুল্লাহ সিএমপির ট্রাফিক পশ্চিম বিভাগে কর্মরত ছিলেন।
জানা যায়, গত ১৮ ফেব্রুয়ারি মেয়ের বিয়েতে হেলিকপ্টারে করে মেয়ে ও জামাতাকে নিয়ে আসেন অ্যাপোলো শপিং সেন্টারের টাইম স্কয়ারে। মেয়েকে লালখান বাজার মাদ্রাসার মাঠ থেকে এবং বরকে এনায়েত বাজার মোড় থেকে আউটার স্টেডিয়ামে নামানো হয়। বর এবং কনের জন্য হেলিকপ্টার ভাড়া করে আনা হয় ঢাকা থেকে।
এ বিষয়ে মহিবুল্লাহ ডেইলি স্টারকে বলেছিলেন, 'মনের আশা ছিল মেয়েকে হেলিকপ্টারে করে বিয়ে দেব। এটার স্পন্সর আমি নিজেই। কনেকে লালখান বাজার আর বরকে এনায়েত বাজার থেকে আউটার স্টেডিয়ামে নামানো হয়। হেলিকপ্টার আনা হয়েছে ঢাকা থেকে। হেলিকপ্টার ভাড়া দিয়েছি ৬৫ হাজার টাকা।'
তবে বিসিএল (বাংলাদেশ কনস্ট্রাকশন লিমিটেড) এভিয়েশনের চার সিটের এই হেলিকপ্টারের ভাড়া প্রতি ঘণ্টায় ৭৫ হাজার টাকা বলে দ্য ডেইলি স্টারকে জানিয়েছেন প্রতিষ্ঠানটির উপ-ব্যবস্থাপক আব্দুল্লাহ আল মামুন।
মহিবুল্লাহর বিরুদ্ধে মামলার ব্যাপারে পাহাড়তলী থানার ওসি মো. মোস্তাফিজুর রহমান ডেইলি স্টারকে বলেন, 'মহিবুল্লাহ ও তার ছেলেসহ কয়েকজনের বিরুদ্ধে দায়ের করা চাঁদাবাজির মামলায় তাদের অভিযুক্ত করে চার্জশিট দিয়েছে পুলিশ। তাদের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেছে।'
মামলার তথ্য অনুযায়ী, মিথ্যা মামলার ভয় দেখিয়ে ১০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করার অভিযোগের সত্যতা পাওয়ায় কনস্টেবল মহিবুল্লাহ, তার ছেলে মো. ইয়াছিন আরাফাত তুষার (২৩), তাদের সহযোগী জাহিদ হোসেন (৩৯) ও রাশেদ হাসানকে (৩২) গ্রেপ্তার করে পাহাড়তলী থানা পুলিশ। গত বছরের ১৮ জানুয়ারি ভুক্তভোগী নবী হোসেন পাহাড়তলী থানায় এই মামলা করেন। এরপর পুলিশের সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। অনৈতিক কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকায় কনস্টেবল মহিবুল্লাহকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করেন উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি-ট্রাফিক) তারেক আহম্মেদ।
মামলা অনুযায়ী গত ১৬ জানুয়ারি নবী হোসেন কুমিল্লা থেকে চট্টগ্রাম আদালতে হাজিরা দিতে যাওয়ার পথে পাহাড়তলী সিডিএ মার্কেট এলাকায় ট্রাফিক কনস্টেবল মো. মহিবুল্লাহ তাদের বহনকারী প্রাইভেট কারটিকে থামানোর নির্দেশ দেন। গাড়ি থামলে কনস্টেবল মহিবুল্লাহ গাড়িতে উঠে মামলায় ফাঁসিয়ে দেবেন বলে ভয় দেখিয়ে ১০ লাখ টাকা দাবি করেন। এতে রাজি না হলে মামলার ভয়ে কনস্টেবল মহিবুল্লাহকে নগদ ৮ হাজার টাকা এবং বিকাশে ১ লাখ ১৪ হাজার ৫০০ টাকা দেওয়া হয়। অভিযোগের প্রাথমিক তদন্তে সত্যতা পাওয়ায় গত ১৮ জানুয়ারি গ্রেপ্তার করা হয় অভিযুক্তদের।
সিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (ট্রাফিক) ফয়সাল মাহমুদ বলেন, 'এ ধরনের হুমকি দেওয়া একটি ফৌজদারি অপরাধ। যদি এই ধরনের কোনো হুমকি দেওয়া হয়ে থাকে তাহলে ওই প্রতিবেদক আমাদেরকে লিখিতভাবে বিষয়টি জানাতে পারেন বা সাধারণ ডায়েরি করতে পারেন। অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।'
Comments