রেকর্ড পুঁজির পর রেকর্ড ব্যবধানে জয় বাংলাদেশের

ছবি: ফিরোজ আহমেদ

সেঞ্চুরির পথে ছিলেন সাকিব আল হাসান ও তৌহিদ হৃদয়। কিন্তু দুই জন মাঠ ছেড়েছেন আক্ষেপ নিয়ে। নার্ভাস নাইন্টিজের শিকার হয়েছেন দুইজনই। তবে এ দুই ব্যাটারের ব্যাটে নিজেদের রেকর্ড পুঁজি পেয়ে যায় বাংলাদেশ। পরে শুরুটা ভালো না হলেও দারুণ জ্বলে ওঠেন বোলাররা। আর উইকেটের পেছনে তো দুর্দান্ত মুশফিকুর রহিম। তাতে ওয়ানডে ক্রিকেটে নিজেদের সবচেয়ে বড় জয় পায় টাইগাররা।

শনিবার সিলেট আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামে সিরিজের প্রথম ওয়ানডে ম্যাচে আয়ারল্যান্ডকে রেকর্ড ১৮৩ রানের ব্যবধানে হারিয়েছে বাংলাদেশ। এর আগে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় জয় ছিল জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে। এই সিলেটের মাঠেই ২০২০ সালের মার্চে তাদের হারিয়েছিল ১৬৯ রানের ব্যবধানে। এদিন প্রথমে ব্যাট করতে নেমে নির্ধারিত ৫০ ওভারে ৮ উইকেটে ৩৩৮ রান সংগ্রহ করে টাইগাররা। জবাবে ১৯.১ ওভার বাকি থাকতেই ১৫৫ রানে গুটিয়ে যায় আইরিশরা। ফলে তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজে ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে গেল বাংলাদেশ।

তবে রেকর্ড জয়ের পরও আলোচনা ওই তৌহিদ হৃদয়ের বিশ্বরেকর্ড হাতছাড়া নিয়ে। ওয়ানডে ক্রিকেটের ইতিহাসে মাত্র ১৬ জন ক্রিকেটার অভিষেক ম্যাচে সেঞ্চুরি পেয়েছেন। এ তালিকায় নেই বাংলাদেশের কোনো ব্যাটার। পাঁচ নম্বরে নেমে তো পারেননি বিশ্বের কেউই। নতুন রেকর্ডের সামনে গিয়েও পারেননি হৃদয়। ব্যক্তিগত ৯২ রানে বোল্ড হয়ে গেছেন গ্রাহাম হিউমের বলে। ৮৫ বলে ৮টি চার ও ২টি ছক্কায় এ রান করেন তিনি।

এর আগে আক্ষেপ নিয়ে মাঠ ছেড়েছেন সাকিব। চার বছর ফের তিন অঙ্কের সামনে ছিলেন তিনি। সেই ২০১৯ সালে বিশ্বকাপে শেষ সেঞ্চুরি পেয়েছিলেন। এরপর ওয়ানডে তো দূরের কথা সেঞ্চুরি নেই কোনো সংস্করণেই। কিন্তু তিনিও হাতছাড়া করেন এ সুযোগ। অ্যান্ডি ম্যাকব্রাইনের বলে কটবিহাইন্ড হয়ে সাজঘরে ফেরার সময় তার নামের পাশে ছিল ৯৩ রান। ৮৯ বলে ৯টি চারে এ রান করেন। নার্ভাস নাইন্টিজে আটকে যাওয়ায় ছুঁয়ে ফেলেন মুশফিকুর রহিমকে। দুইজনই ওয়ানডেতে চারবার নব্বইয়ের ঘরে আউট হয়েছেন কিংবা থেমেছেন।

এছাড়া বিশ্বরেকর্ডের সামনে ছিলেন মুশফিকুর রহিমও। গ্লাভস হাতে এদিন একাই পাঁচটি ক্যাচ নিয়েছেন তিনি। তবে বিশ্বরেকর্ড ছয়টি ক্যাচে। অবশ্য এ তালিকায় রয়েছেন অনেকেই। বিশ্বরেকর্ড গড়া না হলেও দেশের হয়ে সর্বোচ্চ ক্যাচের রেকর্ডটি তারই। এদিন ছুঁয়েছেন নিজেকেই। এর আগেও পাঁচটি ক্যাচ নিয়েছিলেন তিনি। ২০১৫ সালে মিরপুরে ভারতের বিপক্ষে এ কীর্তি গড়েছিলেন তিনি।

এদিন টস হেরে প্রথমে ব্যাটিংয়ে নামে বাংলাদেশ। টস হারলেও অখুশি ছিলেন না টাইগার অধিনায়ক তামিম ইকবাল। তখনই বলেছিলেন আগে ব্যাটিং করতে পারায় খুশি তিনি। তবে মাঠে নেমে নিজে খুব একটা সুবিধা করতে পারেননি অধিনায়ক। ব্যক্তিগত ৩ রানেই আউট হন মার্ক অ্যাডাইরের বলে। অফ স্টাম্পের বাইরের বলে ড্রাইভ করতে গেলে ব্যাটের কানায় লেগে ক্যাচ চলে যায় স্লিপে দাঁড়ানো পল স্টার্লিংয়ের হাতে।

এরপর আরেক ওপেনার লিটন দাসকে নিয়ে প্রতিরোধ গড়ার চেষ্টা করেন নাজমুল হোসেন শান্ত। ৩৪ রানের জুটি গড়েন তারা। তবে কার্টিস ক্যাম্ফারের বলে আনাড়ির মতো ব্যাট চালিয়ে আউট হন লিটন। তার বিদায়ের পর উইকেটে আসেন সাকিব। শান্তর সঙ্গে ৩২ রানের জুটি গড়েন। অসাধারণ এক ডেলিভারিতে শান্তকে ফিরিয়ে এ জুটি ভাঙেন ম্যাকব্রাইন। ভিতরের দিকে ঢুকতে থাকা ফ্লাইটেড ডেলিভারিতে স্টাম্প ভাঙে শান্তর।

শান্তর বিদায়ের পর তরুণ হৃদয়কে নিয়ে দলের হাল ধরেন সাকিব। দারুণ ব্যাটিংয়ে দুই ব্যাটারই সচল রাখেন রানের চাকা। টানা তৃতীয় ফিফটি তুলে সেঞ্চুরির দিকেই এগিয়ে যাচ্ছিলেন সাকিব। মাঝে হ্যারি ট্যাক্টরের এক ওভারে মারেন পাঁচটি চার। কিন্তু সেঞ্চুরি থেকে ৭ রান দূরে এসে হিউমের বলে পেছনের পায়ে দূর থেকে খেলতে গিয়ে আউট হন এ অলরাউন্ডার। ব্যাটের কানায় লেগে চলে যায় উইকেটরক্ষক লরকান টাকারের হাতে। ভাঙে ১৩৫ রানের জুটি।

এরপর মুশফিককে সঙ্গে নিয়ে এগিয়ে যেতে থাকেন হৃদয়। ব্যাটিংয়ে নেমে শুরু থেকেই আগ্রাসী মুশফিক। নিয়মিত বাউন্ডারি মারায় হুহু করে বাড়তে থাকে রান। তবে ক্ষতিটা আরও বাড়ার আগেই মুশফিককে ফিরিয়ে জুটি ভাঙেন হিউম। ২৬ বলে ৩টি করে চার ও ছক্কায় ৪৪ রান করেন মুশফিক। তবে আরেক সেট ব্যাটার হৃদয় এগিয়ে যাচ্ছিলেন সেঞ্চুরির দিকে। সাকিবের মতো তিনিও শিকার হন নার্ভাস নাইন্টিজে। ৮ রান দূরে থাকতে হিউমের বলে পেছনে পায়ে খেলতে গিয়ে বোল্ড হয়ে যান এ তরুণ। ততোক্ষণে বড় স্কোরের ভিত পেয়ে যায় টাইগাররা। শেষ পর্যন্ত নিজেদের সর্বোচ্চ স্কোর গড়েই মাঠ ছাড়ে স্বাগতিকরা।

বিশাল লক্ষ্য তাড়ায় অবশ্য শুরুটা ভালোই করেছিল আয়ারল্যান্ড। দুই ওপেনার স্টিফেন ডহেনী ও পল স্টার্লিংয়ের ওপেনিং জুটিতে আসে ৬০ রান। অবশ্য শুরুতে ভাঙতে পারতো এ জুটি। মোস্তাফিজুর রহমানের করা তৃতীয় ওভারেই স্টার্লিংয়ের বিরুদ্ধে এলবিডাব্লিউর আবেদনে সাড়া দিয়েছিলেন আম্পায়ার। তবে রিভিউ নিয়ে বাঁচেন স্টার্লিং। রিপ্লেতে দেখা যায় বল চলে যায় স্টাম্পের উপর দিয়ে।

ওপেনিং জুটি ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠার আগে ডোহেনিকে ফিরিয়ে ভাঙেন সাকিব। যদিও এর ঠিক আগের ওভারেই তাকে দুটি চার ও একটি ছক্কা মেরেছিলেন ডোহেনি। পরের ওভারে তার লেগ স্টাম্পে রাখা বল বেরিয়ে যাওয়ার মুখে ডোহেনির ব্যাটের কানা ছুঁয়ে চলে যায় উইকেটরক্ষক মুশফিকের হাতে। ৩৮ বলে ৪টি চার ও ১টি ছক্কায় ৩৪ রান করেন এ ওপেনার।

জুটি ভেঙেই দারুণ উজ্জীবিত হয়ে ওঠে টাইগার পেসাররাও। ১৪ রানের ব্যবধানে চারটি উইকেট তুলে নেন তারা। আরেক সেট ওপেনার স্টার্লিংকে ফেরান ইবাদত হোসেন। ঝাঁপিয়ে দারুণ এক ক্যাচ লুফে নেন মুশফিক। ২২ রানের ইনিংস খেলেন স্টার্লিং। পরের ওভারে ফিরে হ্যারি টেকটরকে মুশফিকের আরও একটি ক্যাচে পরিণত করেন ইবাদত। এপ্রর জোড়া ধাক্কা দেন তাসকিন আহমেদ। অধিনায়ক অ্যান্ডি বালবার্নেকে বোল্ড করে দেওয়ার পর লরকান টাকারকে পরিণত করেন ইয়াসির আলীর ক্যাচে।

৭৬ রানে পাঁচ উইকেট হারানো আয়ারল্যান্ড দলের হাল কার্টিস ক্যাম্ফারকে নিয়ে ধরেন জর্জ ডকরেল। ৩৩ রানের জুটি গড়ে প্রতিরোধ গড়ার চেষ্টা করেন এ দুই ব্যাটার। ক্যাম্ফারকে ফিরিয়ে এ জুটি ভাঙেন নাসুম আহমেদ। তাকে এলবিডাব্লিউর ফাঁদে ফেলেন তিনি। ১৭ বলে ১৬ রান করেন ক্যাম্ফার। পরের ওভারে ফিরে জোড়া ধাক্কায় আইরিশদের কোণঠাসা করে ফেলেন নাসুম। গ্যারেথ ডিলেনি ও ম্যাকব্রাইনকে টানা দুই বলে ফিরিয়ে তৈরি করেছিলেন হ্যাটট্রিকের সুযোগও।

এরপর অবশ্য মার্ক অ্যাডাইরকে নিয়ে আরও একবার প্রতিরোধ গড়ার চেষ্টা করেন ডকরেল। তবে তার প্রতিরোধ কেবল হারের ব্যবধানই কমিয়েছে। ৪৭ বলে ৪৫ রান করে আউট হন ডকরেল। ৪২ রানের খরচায় ইবাদত নেন ৪টি উইকেট। নাসুম ৩টি ও তাসকিন ২টি উইকেট পান। 

Comments

The Daily Star  | English
Banks deposit growth in 2024

Depositors leave troubled banks for stronger rivals

Depositors, in times of financial uncertainty, usually move their money away from troubled banks to institutions with stronger balance sheets. That is exactly what unfolded in 2024, when 11 banks collectively lost Tk 23,700 crore in deposits.

13h ago