পেসারদের দাপটে ৮ উইকেটের ঘটনাবহুল সেশন
প্রায় প্রতি বলে বলেই যেন উইকেট পাওয়ার সম্ভাবনা। কোন বল লেন্থ থেকে লাফিয়ে উঠছে, কোনটা আবার মুভ করে বিপাকে ফেলছে ব্যাটারদের। প্রথম দিনে প্রচুর রানের দেখা পাওয়া মিরপুরের বাইশ গজ মেঘলা আকাশের নিচে হয়ে গেল বিষাক্ত। দুই দলের পেসারদের দাপটে উইকেট পড়ল ৮টি।
আগের দিনের ৫ উইকেটে ৩৬২ রানের সঙ্গে সকালে আর ২০ রান যোগ করেই ২৮২ রানে গুটিয়ে যায় বাংলাদেশ। আফগানিস্তানের দুই পেসার নিজাত মাসুদ আর ইয়ামিন আহমেদজাই দারুণ স্পেলে ধসিয়ে দেন বাংলাদেশকে। নিজাত অভিষেকে ৭৯ রানে পান ৫ উইকেট।
জবাবে খেলতে নেমে বাংলাদেশের তিন পেসার তাসকিন আহমেদ, শরিফুল ইসলাম আর ইবাদত হোসেনও দেখাতে থাকেন ঝাঁজ। বারবারই তৈরি হতে থাকে সুযোগ। প্রথম সেশনে ১০.৪ ওভার ব্যাট করে ৩৫ রান তুলতেই ৩ উইকেট হারিয়ে ফেলেছে আফগানিস্তানও। অর্থাৎ দ্বিতীয় দিনের প্রথম সেশনে দুই দল মিলিয়ে খেলা হয়েছে ১৭.৪ ওভার, তাতে ৫৫ রান উঠতে উইকেট পড়েছে ৮টি।
বাংলাদেশের ইনিংসের পর জবাব দিতে নেমে দ্বিতীয় ওভারেই আউট হতে পারতেন ইব্রাহিম জাদরান। শরিফুলের বলে আউটসাইড এজড হয়ে ইব্রাহিমের ক্যাচ গিয়েছিল প্রথম স্লিপের দিকে। অধিনায়ক ও উইকেটকিপার লিটন দাস নিজেই ঝাঁপিয়ে ক্যাচ নিতে গিয়ে জমাতে পারেননি হাতে। খানিক পর আব্দুল মালিককে রান আউটের সুযোগ হাতছাড়া করেন তাসকিন।
সাফল্য আসতে অবশ্য দেরি হয়নি। ৬ষ্ঠ ওভারে শরিফুলের অ্যাঙ্গেলে বেরিয়ে যাওয়া বল ইব্রাহিমের ব্যাট স্পর্শ করে জমা পড়ে লিটনের গ্লাভসে। পরের ওভারে বল হাতে নিয়েই সাফল্য পান ইবাদত হোসেন। বাড়তি বাউন্সে হকচকিয়ে আব্দুল মালিক স্লিপে জমা পড়েন জাকির হাসানের হাতে।
রহমত শাহ নেমেই ফিরতে পারতেন। অল্পের জন্য রান আউট থেকে বেঁচে ইবাদতকে দুই বাউন্ডারি মেরেছিলেন। ইবাদতই তার হন্তারক। আবারও বাড়তি বাউন্স সামলাতে পারেননি আফগান ব্যাটার। রহমত ফেরেন ৯ রান করে। এই আউটের সঙ্গে তিন মিনিট আগেই লাঞ্চ বিরতি দেন আম্পায়াররা।
এর আগে সকালে ৫ উইকেট নিয়ে দিন শুরু করা বাংলাদেশের লক্ষ্য ছিল বড় পুঁজি। কিন্তু আগের দিনের সঙ্গে আর কেবল ২০ রান যোগ করতেই পড়ে গেল বাকি পাঁচ উইকেট। মেঘলা আকাশের নিচে হুট করে মুভমেন্টের কারণে কঠিন হয়ে পড়া উইকেটে খেলতে নেমে টিকতে পারেননি কেউ।
আগের দিন শেষ সেশনে দারুণ জুটি বেধে দলকে বড় রান পাইয়ে দেওয়ার আভাস দিচ্ছিলেন মিরাজ-মুশফিক। মিরাজ খেলছিলেন ৪৩ রান নিয়ে, মুশফিক অপরাজিত ছিলেন ৪১ রানে। আর কেবল ৫ রান যোগ করেই থামেন মিরাজ। দ্বিতীয় ওভারে ইয়ামিনকে দারুণ কাভার ড্রাইভে বাউন্ডারি পেয়েছিলেন। ইয়ামিনের বলেই বিদায় তার। শরীর থেকে একটু দূরের বল পাঞ্চ করতে গিয়ে ব্যাকওয়ার্ড পয়েন্টে ধরা দেন তিনি। পরের ওভার নিজাত মাসুদের হঠাৎ লেন্থ থেকে লাফিয়ে উঠা বলে হকচকিয়ে যান মুশফিক। স্লিপে যায় সহজ ক্যাচ।
এক বল পরই আরেক সাফল্য আফগানদের। এবার নিজাতের লেগ স্টাম্পের উপরে থাকা বল ঠেলে দিতে চেয়েছিলেন তাইজুল ইসলাম। শর্ট লেগে দাঁড়ানো আব্দুল মালিক দারুণ রিফ্লেক্সে হাতে জমিয়ে ফেলেন ক্যাচ।
পরের ওভারে ইয়ামিন ভেতরে ঢোকা বলে এলবিডব্লিউ করে দেন তাসকিন আহমেদকে। দিনের সপ্তম ওভারে শরিফুল ইসলামকে বোল্ড করে ইনিংস মুড়ে দেন নিজাত মাসুদ। অভিষেকেই ৭৯ রানে ৫ উইকেট নিয়ে আফগানদের সেরা বোলার তিনি। আরেক পেসার ইয়ামিন আহমেদজাই ৩৯ রানে পেয়েছেন ২ উইকেট।
বাংলাদেশকে গুটিয়ে দিয়ে চরম অস্বস্তিতে পড়ল আফগানরাও। বাংলাদেশের পেসত্রয়ী যেভাবে আগুন ঝরাচ্ছেন দ্বিতীয় সেশনেও কঠিন পরিস্থিতি অপেক্ষা করছে তাদের।
Comments