'কোনোমতে খেয়ে-পরে, ভাত-কাপড়ে বাঁচতেই ২৫ হাজার টাকা মজুরি প্রয়োজন’

শুক্রবার বিকেল ৪টায় এ বিক্ষোভ সমাবেশ ও মিছিল অনুষ্ঠিত হয়। ছবি: সংগৃহীত

পোশাক শ্রমিকের মজুরি ২৫ হাজার টাকা নির্ধারণ, ৬৫ শতাংশ বেসিক ও ১০ শতাংশ ইনক্রিমেন্টের দাবিতে গাজীপুরের চৌরাস্তার সামনে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে বাংলাদেশ গার্মেন্টস শ্রমিক সংহতি।

আজ শুক্রবার বিকেল ৪ টায় এ বিক্ষোভ সমাবেশ ও মিছিল অনুষ্ঠিত হয়।

বাংলাদেশ গার্মেন্টস শ্রমিক সংহতির গাজীপুরের সংগঠক হযরত বিল্লারের সভাপতিত্বে এবং মোহাম্মদ আরশাদুলের পরিচালনায় সভায় বক্তব্য রাখেন সংগঠনটির কেন্দ্রীয় সভাপ্রধান তাসলিমা আখতার, সাধারণ সম্পাদক বাবুল হোসেন, হযরত বিল্লাল, বিল্লাল শেখ, রূপালী আক্তার, মো. হাবীব, লিজা আক্তার ও অন্যান্য স্থানীয় নেতারা।

সভায় তাসলিমা আখতার বলেন, মজুরি বোর্ডের মেয়াদ শেষ হতে বাকি মাত্র ১৬ দিন। ইতোমধ্যে ১১ সংগঠনের জোট 'মজুরি বৃদ্ধিতে গার্মেন্ট শ্রমিক আন্দোলন' এবং অন্যান্য সকল জোট তাদের প্রস্তাবনা বোর্ডে জানিয়েছে। কিন্তু ৫ মাস পার হলেও বোর্ডের পক্ষ থেকে এখনো কোনো নতুন মজুরির প্রস্তাব আসেনি। এই দীর্ঘসূত্রিতা শ্রমিকদের মধ্যে ক্ষোভ বাড়িয়ে তুলছে।

তিনি আরও বলেন, 'পোশাক শ্রমিকসহ শ্রমজীবী মানুষ বর্তমান দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে হিমশিম খাচ্ছে। শ্রমিকের তরকারি হিসাবে একমাত্র ভরসা যে আলু তার দামও বর্তমানে ৫০ টাকা কেজি। দাম সরকার নির্ধারণ করে দিলেও বাজারে এখনো ডিম ১৫০-১৬০ টাকায় এবং পেয়াজ ৮০ থেকে ৮৫ টাকায় বিক্রি হয়। শ্রমজীবীর আমিষ হিসাবে পরিচিত সস্তা গুড়া মাছ, পাঙ্গাস মাছ, ফার্মের মুরগি কিংবা ডিম আগের মতো পরিমাণে কিনতে পারছেন না পোশাক শ্রমিকরা। এমন পরিবারও আছে যারা এক পোয়া গুড়া মাছ ভাগ করে দুদিন খাচ্ছে। কখনো সেটুকু আমিষও জুটছে না। এই দুরাবস্থায় খাদ্য গ্রহণের পরিমাণ কমিয়ে দিয়েছে শ্রমিকরা। যার ফলে নানা শারীরিক সমস্যা ও অপুষ্টিতে ভুগছে তারা। এই কঠিন সময়ে অর্থনীতির প্রাণ পোশাক শ্রমিকদের ২৫ হাজারের নিচে মজুরিতে বাঁচা দায় হবে।'

সমাবেশে অন্যান্য নেতারা বলেন, গত ৫ বছরে মালিকদের আয় যতটা বেড়েছে সেই হারে শ্রমিকের মজুরি বাড়ার বদলে প্রকৃত আয় কমেছে। বরং গত ৫ বছরে দফায় দফায় দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি পাওয়ায় শ্রমিকরা দুর্ভিক্ষের পরিস্থিতির দিকে নিমজ্জিত হচ্ছে। খাদ্য মূল্যস্ফীতি গত সাড়ে ১১ বছরের মধ্যে এবার সর্বোচ্চ হয়েছে।

সরকারি তথ্যানুযায়ী, কেবল খাদ্যে গত অগাস্ট মাস পর্যন্ত মূল্যস্ফীতি ১২.৫৪ শতাংশ আর সার্বিক মূল্যস্ফীতি প্রায় ১০ শতাংশ। মূল্যস্ফীতির প্রভাব সবচেয়ে বেশি পড়েছে শ্রমিক ও শ্রমজীবীর ওপর। ফলে ২০১৮ সালে মালিকপক্ষ যেভাবে মজুরি নির্ধারণ করেছিল এবারও সেই হারে প্রস্তাব কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য হবে না। শ্রমিকের পুষ্টির জন্য প্রয়োজনীয় ক্যালরি, উৎপাদনশীলতা এবং মৌলিক চাহিদার দিক বিচেনায় রেখেই মজুরি নির্ধারণ করতে হবে। সকল বিবেচনায় কেবল খেয়ে-পরে, ভাত-কাপড়ে কোনোমতে বাঁচতেই ২৫ হাজার টাকা মজুরি প্রয়োজন।

বর্তমানে কেবল মজুরি বাড়ালেই হবে না। মজুরি কাঠামোতেও পরিবর্তন আনতে হবে জানিয়ে তারা বলেন, 'একজন শ্রমিকের মোট মজুরির মধ্যে মূল মজুরি বা বেসিকই আসল। মূল মজুরির হারের ওপর নির্ভর করে ওভারটাইম, গ্র্যাচুইটি, বাৎসরিক ছুটি, মাতৃত্বকালীন সুবিধা, ইনক্রিমেন্টস অন্যান্য সুযোগসুবিধা। মূল মজুরি কমলে শ্রমিকরা সব কিছুতেই বঞ্চিত হন। এবার এই কৌশল শ্রমিকদের ওপর চাপানো চলবে না।'

তারা বলেন, গত মজুরি বোর্ডে ২০১৮ সালে নির্ধারিত মোট বেতন ৮ হাজার টাকার মধ্যে মূল মজুরির হার ছিল ৫১ শতাংশ। কিন্তু ১৯৯৪ থেকে ২০১০ পর্যন্ত বেসিকের পরিমাণ ছিল ৬৫ শতাংশ থেকে ৬৭ শতাংশ। ২০১০ সালের পর থেকে বেসিকের হার কমিয়ে শ্রমিকদের বঞ্চিত করার নতুন কৌশল নিয়েছে মালিকপক্ষ। এবার শ্রমিকদের কোনভাবেই আর বঞ্চিত যাতে না হয় তার জন্য  মোট মজুরির কমপক্ষে ৬৫% মূল বা বেসিক করার দাবি জানান তারা।

তারা আরো বলেন, শ্রমিকদের মজুরি ২৫ হাজার করার পাশাপাশি প্রতি বছরের ইনক্রিমেন্টের হারও বাড়াতে হবে। বর্তমানে ইপিজেডে ৫ থেকে ১০ শতাংশ এবং ইপিজেডের বাইরের কারখানায় ৫ শতাংশ ইনক্রিমেন্ট দেওয়া হয়। এই বৈষম্য দূর করে প্রতিবছর ১০ শতাংশ হারে ইনক্রিমেন্ট প্রদানের বিষয় গুরুত্ব দেন তারা।

Comments

The Daily Star  | English

Govt issues notification banning AL activities

A Public Security Division joint secretary confirmed the matter

8m ago