আইসিসি ক্রিকেট বিশ্বকাপ ২০২৩

দক্ষিণ আফ্রিকার দাপুটে পেসে পরাস্ত অস্ট্রেলিয়া

দক্ষিণ আফ্রিকা টানা দ্বিতীয় জয় তুলে নিয়েছে অস্ট্রেলিয়াকে ৪০.৫ ওভারে অলআউট করে।

দক্ষিণ আফ্রিকার দাপুটে পেসে পরাস্ত অস্ট্রেলিয়া

বিশ্বকাপে অস্ট্রেলিয়ার সর্বনিম্ন রানে অলআউট হওয়ার রেকর্ডটি ১৩১ রানের। লখনউয়ে অজিরা সে রেকর্ডটাই নতুন করে লিখার হাতছানি দেখতে পাচ্ছিল। পেস, সুইং, বাউন্স- কাগিসো রাবাদা, লুঙ্গি এনগিদি, মার্কো ইয়ানসেনে ৭০ রানে ৬ উইকেট হারিয়ে অস্ট্রেলিয়া নিজেদের এমন অবস্থানেই পেয়েছিল। মার্নাস লাবুশেনের ৪৬ রানের ইনিংসের সাথে কামিন্স-স্টার্কের ক্যামিওতে পরে তারা ব্যবধানটাই কমিয়েছে শুধু। তবে সেটিও ১৩৪ রানের কম হয়নি। দক্ষিণ আফ্রিকা টানা দ্বিতীয় জয় তুলে নিয়েছে অস্ট্রেলিয়াকে ৪০.৫ ওভারে অলআউট করে।

মার্শ-ওয়ার্নার দুজনেই শুরুতে আগ্রাসী হওয়ার চেষ্টা করেন। ৩১২ রানের বড় লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে এনগিদি আর ইয়ানসেনের সামনে দুজনেই দিশেহারা হয়ে পড়েছিলেন। সুইং-সিম, বেশ মুভমেন্ট পাচ্ছিলেন দুই পেসারই, এনগিদি লাইন-লেংথের দুর্দান্ত নিয়ন্ত্রণে পাঁচ ওভারের স্পেলে মাত্র ৯ রান দিয়ে নেন ১ উইকেট। ৫ ওভার শেষে অস্ট্রেলিয়ার রান ছিল ১৬। চাপটা দুই ওপেনারের উপরই চেপে বসেছিল ভালোমতোন। নিজেদের শক্তির জায়গা, পুলে মিসটাইমিং হচ্ছিল মার্শের, ওয়ার্নার বেশ বাইরের বলে কাট করে একেবারে হাতে তুলে দিলেন!

ইয়ানসেনের বলে ৭ রানে মার্শ আউট হওয়ার পর ওয়ার্নারও একই পথ ধরেন ১৩ রান করে। এনগিদি-ইয়ানসেনের স্পেল শেষে আসেন আরেক আতঙ্ক রাবাদা! এদিন ঠিক 'আতঙ্ক' হয়েই অজিদের সামনে প্রকট হয়েছিলেন রাবাদা। স্টিভেন স্মিথ চারটি চারে ইনিংসের সূচনা করেছিলেন ভালো, তাকে এসে রাবাদা এলবিডাব্লিউ বানিয়ে ফিরিয়ে দেন ১৯ রানে। অজিরা দশ ওভারেই ৫০ রানে হারিয়ে ফেলে ৩ উইকেট।

বিপদ তাদের আরও বাড়িয়ে দেন রাবাদা এসে ৫৬ রানেই চতুর্থ উইকেট তুলে নিয়ে। ইংলিসকে বোল্ড করে ফিরিয়ে দেন ৫ রানেই। ম্যাক্সওয়েল-লাবুশেন স্ট্রাইক বদল করতেই হিমশিম খাচ্ছিলেন। ৬৫ রানে এরপর কেশব মাহরাজ এসে ম্যাক্সওয়েলকে ফিরিয়ে দেন, ম্যাক্সওয়েল ১৬ বলে ৩ রানে আউট হন।

রাবাদার বলে দলীয় ৭০ রানে ডাউন দ্য লেগের বলে ডি ককের দুর্দান্ত ক্যাচের শিকার বনে আউট হয়ে যান স্টয়নিস। অস্ট্রেলিয়ার জন্য লক্ষ্যতাড়া তখন 'অসম্ভব' ছাড়া আর কিছুই ছিল না। স্টার্ককে সঙ্গে নিয়ে লাবুশেন নামেন টিকে থাকার লডাইয়ে। উইকেটের মিছিল থামিয়ে তারা তাদের জুটিতে ৭৭ বলে পঞ্চাশ পেরিয়ে যান। বিশ্বকাপে নিজেদের সর্বনিম্ন রানে অলআউট হওয়ার রেকর্ডটাও দূরে ঠেলে দেন তারা। ১৩১ পাড়ি দিয়ে ফেললেও কিছুক্ষণ পরেই ২৭ রানে স্টার্ক আউট হয়ে যান ইয়ানসেনের বাউন্সারে ক্যাচ দিয়ে। ১৩৯ রানে স্টার্ক যাওয়ার পর লাবুশেনও একই পথ ধরেন ৭৭ বলে ৪৬ রানে আউট হয়ে। কামিন্স এসে আগ্রাসী রুপ ধারণ করে ৪টি চারের মারে ২২ রান এনে আউট হয়ে যান শামশির বলে, ওই ওভারেই অস্ট্রেলিয়া ১৭৭ রানে অলআউট হয়ে যায় ৫৫ বল বাকি থাকতে।

এর আগে টস হেরে ব্যাট করতে নেমে ব্যাক টু ব্যাক সেঞ্চুরি হাঁকিয়েছিলেন কুইন্টন ডি কক। স্টার্ক-হ্যাজলউডের নিয়ন্ত্রিত বোলিং দেখেশুনে খেলতে থাকে দক্ষিণ আফ্রিকা। প্রথম চার ওভারে ডি কক ও বাভুমা আনতে পারেন ১১ রান। বেশিক্ষণ খোলসে থাকার পাত্র নয় ডি কক। বাঁহাতি এই ব্যাটার হাত খুলতে শুরু করেন এরপর। কাট-পুলে বাউন্ডারি বের করেন, তবে ম্যাক্সওয়েলের কিপটে বোলিংয়ে তারা পাওয়ারপ্লেতে ৫৩ রানের বেশি আনতে পারেনি।

অপর প্রান্তে বাভুমা তখন বেশ ভোগান্তিতে পড়েছিলেন। দশ ওভার শেষে ককের রান যেখানে ৩৩ বলে ৩০, বাভুমা ছিলেন ২৭ বলে ১৭ রানে। তিনবার সুযোগ পেয়েও বাভুমার ইনিংস দীর্ঘায়িত হয়নি। ৫৫ বলে দুই চারে ৩৫ রানের সংগ্রামী ইনিংস থেমে যায় ম্যাক্সওয়েলের বলে ক্যাচ দিয়ে আউট হলে।

ডি কক ততক্ষণে ফিফটি পেরিয়ে গেছেন। ডুসেন-ডি কক জুটিতে কিছু সময়ের জন্য চাপ তৈরি করতে পারলেও ডি কক তা উড়িয়ে দেন দুর্দান্ত ব্যাটিং করে। ২৭তম ওভারেই দেড়শ পেরিয়ে যায় তারা। আগের ম্যাচেও সেঞ্চুরি করা ডি কক এ ম্যাচেও শতকের দেখা পেয়ে যান ৯০ বলে। তবে ডুসেন ২৮ রানের বড় ইনিংস খেলতে পারেননি। ১৫৮ রানে তাকে হারানোর পর ডি ককও তার ইনিংসটা আর বড় করতে পারেননি, ৮ চার ও ৫ ছক্কায় ১০৫ বলে ১০৯ রানে তার ইনিংস থেমে যায়।

২৩২ রানে থেকে শেষ দশ ওভারে প্রবেশ করে তারা। মার্করাম ভয়ঙ্কর হওয়ার ইঙ্গিত দিয়ে ৫৬ রানেই যদিও থেমে যান। দক্ষিণ আফ্রিকার ইনফর্ম বিধ্বংসী ব্যাটার ক্লাসেনও আউট হয়ে যান ২৯ রানে। দুর্দান্ত দুই স্লোয়ার বাউন্সারে অস্ট্রেলিয়া ফিরিয়ে দেয় এই দুজনকে। মিলার-ইয়ানসেনরাও বড় অবদান রাখতে পারেননি। শেষ দশ ওভারে ৪ উইকেট তুলে নেয় অস্ট্রেলিয়া। ডেথে দুর্দান্ত বোলিং করা স্টার্ক ম্যাচ শেষ করেন ৯ ওভারে ৫৩ রান দিয়ে দুই উইকেটে। শেষ ৬০ বলে ৭৯ রান এনে দক্ষিণ আফ্রিকা ৩১১ রানের পুঁজি গড়তে পারে। যা লখনউর মাঠে সর্বোচ্চ স্কোর, সেটি ডিফেন্ড করে দক্ষিণ আফ্রিকা দুর্দান্ত বোলিংয়ে দুই পয়েন্ট হাসিল করে নিতেই সক্ষম হয়েছে।

Comments

The Daily Star  | English
chief adviser yunus confirms election date

Election in February

Chief Adviser Prof Muhammad Yunus last night announced that the general election will be held before Ramadan in February 2026, kickstarting the process of handing over the power to an elected government.

5h ago