আইসিসি ক্রিকেট বিশ্বকাপ ২০২৩

'যথেষ্ট হয়েছে': পুরো বোর্ডকে পদত্যাগ করার আহ্বান সাবেরের

'যথেষ্ট হয়েছে। আমার মনে হয় জবাবদিহিতার দৃষ্টিভঙ্গিতে দেখলে বিসিবির সকল সদস্যদের পদত্যাগ করা উচিত যেহেতু এটা সমষ্টিগত ব্যর্থতা। তারা অনেক সময় হল দেশকে হতাশ করেছে।'

'যথেষ্ট হয়েছে': পুরো বোর্ডকে পদত্যাগ করার আহ্বান সাবেরের

বোর্ডকে পদত্যাগ করার আহ্বান সাবেরের

বিশ্বকাপে বাংলাদেশের ভরাডুবির পর সাবের হোসেন চৌধুরীর সঙ্গে কথা বলেন দ্য ডেইলি স্টারের আল আমিন। ১৯৯৯ সালে বাংলাদেশ প্রথম বিশ্বকাপে অংশগ্রহণ নিশ্চিত করে বিসিবির সাবেক এই সভাপতি ও সংসদ সদস্যের অধীনে এবং এরপর টেস্ট স্ট্যাটাস অর্জনও তার নেতৃত্বের সময়েই ঘটে। বাংলাদেশে ক্রিকেটের বর্তমান পরিস্থিতিতে হতাশা ব্যক্ত করে পেশাদারিত্ব, জবাবদিহিতা, স্বজনপ্রীতির দায়ে বর্তমান ক্রিকেট বোর্ডকে কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়েছেন তিনি।

সাক্ষাৎকারের অংশবিশেষ তুলে ধরা হলো:

দ্য ডেইলি স্টার: বাংলাদেশ বিশ্বকাপে দুই জয়ের বিপরীতে হারল সাতটি ম্যাচ। কতটা হতাশ আপনি এই ফলাফলে?

সাবের হোসেন চৌধুরী: তীব্রভাবে হতাশ। বিসিবি, চন্ডিকা হাথুরুসিংহে এবং এমনকি খেলোয়াড়দের থেকে বিশ্বকাপের আগে প্রত্যাশার বেলুন উড়ানো হল আমরা সেমিতে যাব বলে। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে আমরা সেমির দৌড় থেকে ছিটকে পড়া প্রথম দল ছিলাম। আমরা শুধু বাছাইপর্ব থেকে আসা দুই দলের উপরে থেকে শেষ করলাম এবং হারের ব্যবধানগুলো আরও আগুনের উপর ঘি ঢেলেছে। আমরা যদি কেবল সরাসরি জায়গা করে নেওয়া দলগুলো বিবেচনায় নেই, তাহলে আমরা আসলে টেবিলের তলানিতেই।

দ্য ডেইলি স্টার: মানুষজন বলছে ১৯৯৯ সালে বিশ্বকাপে অভিষেকের পর এটা দ্বিতীয় সর্বোচ্চ হতাশাজনক বিশ্বকাপ অভিযান। কী বলবেন?

সাবের হোসেন চৌধুরী: ১৯৯৯ সালে আমাদের বিশ্বকাপ অভিষেকে, আইসিসির সহযোগী দেশ হয়ে আমরা পাঁচ ম্যাচের মধ্যে দুটি ম্যাচ জিততে সক্ষম হই (পাকিস্তান ও স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে)। আর এখন, ২৩ বছরের টেস্ট অভিজ্ঞতা নিয়ে আমরা জিতলাম ৯ ম্যাচে ওই দুটিতেই। বিস্ময়কর!

আমরা আক্ষরিক অর্থেই পেছন দিকে হাঁটছি। যেখানে আফগানিস্তানের মতো দেশ যারা কিনা আমাদের ১৭ বছর পর টেস্ট স্ট্যাটাস পেল এবং যাদের নানান চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হয়, তারা এগিয়েই যাচ্ছে। আমরা নেদারল্যান্ডসের সঙ্গে হেরে গেলাম যারা কিনা টেস্ট-খেলুড়ে দেশই নয়। আরেকটা দেশ আয়ারল্যান্ড যারা এই বিশ্বকাপে জায়গা করে নিতে পারেনি, কিন্তু দারুণভাবে এগিয়ে যাচ্ছে।

একারণে আমি এই বিশ্বকাপকেই সবচেয়ে ব্যর্থ আসর হিসেবে দেখি এবং বিসিবি তাদের সবচেয়ে খারাপটা বরাদ্ধ রেখেছিল এই বিশ্বকাপ অভিযানের জন্যই।

দ্য ডেইলি স্টার: খেলোয়াড় এবং টিম ম্যানেজমেন্টের উপর দোষ বর্তাবে। আপনি কী মনে করেন বিসিবিকেও সমান দোষে সাব্যস্ত করা উচিত?

সাবের হোসেন চৌধুরী: অন্যের উপর দোষ চাপিয়ে দেওয়া শেষ দশক ধরে বিসিবির রীতি বনে গেছে। যখনই আঙুল তুলা হয় এবং ভুল উঠে আসে, সবসময়ই সেটা অন্যের ভুল অথবা কোনো ষড়যন্ত্র। টিম ম্যানেজমেন্টকে দায়িত্ব দিয়েছে কে? নির্বাচকদের দায়িত্ব দিয়েছে কে? কে দল নির্বাচনে হস্তক্ষেপ করে?

আমরা সবাই জানি এবং আমি কোন গোপন কথা ফাঁস করে দিচ্ছি না এখানে। কোন জবাবদিহিতা ও সম্মিলিত নেতৃত্ব ছাড়াই বিসিবি ওয়ান ম্যান শো হয়ে চলছে।

দ্য ডেইলি স্টার: বিশ্বকাপের দল নির্বাচন নিয়েও অনেক নাটক হয়েছে। দুঃখজনকভাবে দুই বড় তারকার মধ্যকার বিবাদ খোলামেলা দেখেছে পুরো দেশ। এই ব্যাপারটা বাংলাদেশের ব্যর্থতায় বড় ভূমিকা রেখেছে বলে মনে করেন আপনি? 

সাবের হোসেন চৌধুরী: বিশ্বকাপের মতো আসরের প্রস্তুতি ও পরিকল্পনা কোন শিশুর খেলা নয় এবং সেটা গুরুত্ব সহকারে দেখা উচিত ছিল। যা প্রয়োজন তা হলো দৃঢ়তা, ধারাবাহিকতা, সততা ও পেশাগত দক্ষতা; বিশৃঙ্খলা ও নাটকের মধ্যে গুরুতর বাস্তব পরিস্থিতি ঢাকতে হাস্যরসের যোগান দেওয়া কোনো ক্লাউন নয়।

দ্য ডেইলি স্টার: বিশ্বকাপের আগে চন্ডিকা হাথুরুসিংহেকে হেড কোচ হিসেবে ফিরিয়ে আনে বিসিবি। যেভাবে তার আগের মেয়াদে অপেশাদার উপায়ে বিদায় ঘটেছে, এটা কী ভালো সিদ্ধান্ত ছিল?

সাবের হোসেন চৌধুরী: আজ পর্যন্ত আমরা জানিনা সে কেন বিদায় নিয়েছিল, দ্বিতীয় মেয়াদে কেন দায়িত্ব পেল সে কথা বাদই দিলাম। এবারে বা দুটো ক্ষেত্রেই কি তাকে দায়িত্ব দেওয়ায় স্বচ্ছভাবে পূর্ণ ও উন্মুক্ত আলোচনা হয়েছিল?

দ্য ডেইলি স্টার: আপনি কি মনে করেন বর্তমান বিসিবির নেতৃত্বে অধিনায়ক ও তার সহকারী নির্ধারণ করতে সাধারণ প্রক্রিয়া মানা হয়?

সাবের হোসেন চৌধুরী: এই দুটি পজিশনই বেশ গুরুত্বপূর্ণ এবং বাছাই করতে গেলে সতর্কভাবে বিবেচনা ও মূল্যায়ন করতে হয়। যে কেউ আশা করবে, প্রক্রিয়া ও পদ্ধতি আসলেই শুদ্ধ হবে। কিন্তু এই প্রশ্নটা বিসিবির দিকেই করা উচিত।

দ্য ডেইলি স্টার: ভারতে অনেক কিছু হয়েছে যা দলে শৃঙ্খলা ও সংহতির অভাব তুলে ধরে। মিডিয়ায় নিজের বিরক্তি প্রকাশ করতে গিয়ে টিম ডিরেক্টর খালেদ মাহমুদ বলেছিলেন, কিছু ইস্যুতে তাকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি যেগুলোতে তার পদ অনুযায়ী সে সুযোগ আছে। এটা নির্দেশ করে যে বোর্ড নির্দিষ্ট ব্যক্তিকে একক আধিপত্যর সুযোগ দিয়েছে যা বুমেরাং হয়েছে। আপনি কী এই ধারণার সঙ্গে একমত?

সাবের হোসেন চৌধুরী: এখানে চমকপ্রদ তথ্য হচ্ছে আপনি যার কথা বলছেন তিনি বর্তমানে নেতৃত্বের অধীনে সবসময় সুবিধা পেয়ে আসছেন এবং একাধিক, পরস্পরবিরোধী ভূমিকায় দায়িত্ব পেয়েছিলেন। এটা আরও মজার যে অ্যালান ডোনাল্ডকে মিডিয়ায় কথা বলার জন্য কারণ দর্শানোর নোটিশ পাঠানো হয়েছিল, সেখানে বাকিদের জন্য যে নিয়ম খাটে এই ব্যক্তি পরিষ্কারভাবে তার উপরে। ব্যর্থ নেতৃত্ব থেকে এই ব্যক্তির দূরে সরে যাওয়ার সঙ্গে আমরা সবাই পরিচিত এবং এটি অবশ্যই নতুন কিছু নয়।

দ্য ডেইলি স্টার: এই ভরাডুবির উপর নির্ভর করে কিছু মাথা বদলাবে হবে হয়তো। আপনার কী মনে হয় অদল-বদল আসলেই গভীরে ছড়িয়ে থাকা সমস্যা সমাধান করবে, ঘরোয়া ক্রিকেটের দুর্বল কাঠামোয় মনোযোগ না দিয়ে শুধুমাত্র জাতীয় দলে নজর দিলে?

সাবের হোসেন চৌধুরী: মাথা আগেও বদলেছে এবং নিঃসন্দেহে সুবিধামত বলির পাঁঠা বানানো হবে। আমার মনে হয়, আবারও এটা ওই দায়িত্ব পাওয়ারাই হবে, যারা দায়িত্ব দেওয়ার সিদ্ধান্তে আছে এবং দায়িত্ব দিয়েছে তারা নয়।

ঘরোয়া ক্রিকেট এখন জগাখিচুড়ি হয়েই আছে, প্রয়োজনীয় গুরুত্ব/প্রাধান্য পাচ্ছে না। যেখানে ম্যাচ ফিক্সিংয়ের অভিযোগ ও পক্ষপাতমূলক আম্পায়ারিং এখনও অনুসন্ধান না করা অবস্থায়ই পড়ে থাকে। আমাদের আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ততটাই শক্তিশালী হবে যেটুকু ঘরোয়া ক্রিকেটের সূচি ও ভিত্তি প্রদান করবে।

দ্য ডেইলি স্টার: মানুষ বলছে বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপনকে ব্যর্থতার পুরো দায়ভার নিয়ে পদত্যাগ করতে। আপনারও কী একই চিন্তাধারা?

সাবের হোসেন চৌধুরী: যথেষ্ট হয়েছে। আমার মনে হয় জবাবদিহিতার দৃষ্টিভঙ্গিতে দেখলে বিসিবির সকল সদস্যদের পদত্যাগ করা উচিত যেহেতু এটা সমষ্টিগত ব্যর্থতা। তারা অনেক সময় হল দেশকে হতাশ করেছে।

এটা বোঝা বিস্ময়কর যে একটা খেলা যেটি দেশের নাম্বার ওয়ান খেলা, যাতে বিশ্বে ছড়িয়ে থাকা কোটি বাংলাদেশের আবেগ জড়িত, ভরপুর ঐতিহ্য আছে, স্পন্সরের অভাব হয় না, মিডিয়ার তীব্র মনোযোগ, এবং ১০০০ কোটি টাকার ফান্ড নিয়ে বসে আছে- সেটি এমন একটা বোর্ডের দ্বারা পরিচালনা হয় যেটি কিনা সম্ভবত বাংলাদশের ক্রিকেট ইতিহাসের সবচেয়ে অযোগ্য এবং অপেশাদার।

Comments

The Daily Star  | English
chief adviser yunus confirms election date

Election in first half of February

'I will send a letter to the CEC requesting that the Election Commission holds the election before the upcoming Ramadan,' says Yunus

3h ago