২০১৬: শিল্প সাহিত্য অঙ্গন যাঁদের হারিয়েছে

এ বছর দেশের শিল্প ও সাহিত্য অঙ্গনের বেশ কয়েকজন গুণী ব্যক্তিকে হারিয়েছি আমরা। কবি-সাহিত্যিক-শিল্পী-চলচ্চিত্রকার-অভিনেতা যাঁরা আমাদের ছেড়ে চলে গেছেন তাঁদের শূন্যতা পূরণ হবার নয়। দ্য ডেইলি স্টার অনলাইন পাঠকদের জন্য দেওয়া হলো সেইসব কৃতি সন্তানদের নাম।

এ বছর দেশের শিল্প ও সাহিত্য অঙ্গনের বেশ কয়েকজন গুণী ব্যক্তিকে হারিয়েছি আমরা। কবি-সাহিত্যিক-শিল্পী-চলচ্চিত্রকার-অভিনেতা যাঁরা আমাদের ছেড়ে চলে গেছেন তাঁদের শূন্যতা পূরণ হবার নয়। দ্য ডেইলি স্টার অনলাইন পাঠকদের জন্য দেওয়া হলো সেইসব কৃতি সন্তানদের নাম।

সাহিত্যিক সৈয়দ শামসুল হক

সাহিত্যিক সৈয়দ শামসুল হক ২৭ সেপ্টেম্বর আগস্ট চলে যান পৃথিবীর মায়া ছেড়ে। বরেণ্য এই সাহিত্যিকের পদচারণা ছিল কবিতা, গল্প, নাটক, উপন্যাস ও চলচ্চিত্রসহ সাহিত্যের বিভিন্ন শাখায়।

‘সব্যসাচী’ লেখক হিসেবে সম্মানিত সৈয়দ হকের জন্ম ১৯৩৫ সালের ২৭ ডিসেম্বর কুড়িগ্রামে। একুশে পদক ও বাংলা একাডেমি পুরস্কার পাওয়া এই সাহিত্যিকের হাত দিয়ে রচিত হয়েছিল ‘পায়ের আওয়াজ পাওয়া যায়’, ‘নিষিদ্ধ লোবান’, ‘খেলারাম খেলে যা’, ‘নীল দংশন’, ‘মৃগয়া’ ইত্যাদি।

‘পায়ের আওয়াজ পাওয়া যায়’ ও ‘নুরুল দীনের সারাজীবন’ বাংলাদেশের মঞ্চনাটকের ইতিহাসে মাইলফলক হয়ে আছে। মাত্র ২৯ বছর বয়সে সৈয়দ শামসুল হক বাংলা একাডেমি পুরস্কার পান। বাংলা একাডেমি পুরস্কার পাওয়া সাহিত্যিকদের মধ্যে তিনিই সবচেয়ে কম বয়সী লেখক।

সৈয়দ শামসুল হক ছিলেন হোমিওপ্যাথি ডাক্তার সৈয়দ সিদ্দিক হুসাইন ও গৃহিণী হালিমা খাতুন দম্পতির আট সন্তানের প্রথম সন্তান। প্রথিতযশা লেখিকা ডা. আনোয়ারা সৈয়দ হকের স্বামী।

কবি রফিক আজাদ

‘ভাত দে হারামজাদা’-খ্যাত কবি রফিক আজাদ ১২ মার্চ চলে যান না ফেরার দেশে।

রফিক আজাদের জন্ম ১৯৪১ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি টাঙ্গাইল জেলার ঘাটাইল থানার গুণী গ্রামে। বাবা সলিম উদ্দিন খান ছিলেন একজন সমাজসেবক এবং মা রাবেয়া খান ছিলেন গৃহিণী।

একুশে পদক ও বাংলা একাডেমি পুরস্কারজয়ী রফিক আজাদ বাংলা একাডেমির মাসিক সাহিত্য পত্রিকা ‘উত্তরাধিকার’-এর সম্পাদক ছিলেন। রোববার পত্রিকাতেও তিনি নিজের নাম ঊহ্য রেখে সম্পাদনার কাজ করেছেন। তিনি টাঙ্গাইলের মওলানা মুহম্মদ আলী কলেজের বাংলার প্রভাষকও ছিলেন।

কবির প্রকাশিত বইয়ের মধ্যে রয়েছে ‘অসম্ভবের পায়ে’, ‘সীমাবদ্ধ জলে সীমিত সবুজে’, ‘চুনিয়া আমার আর্কেডিয়া’, ‘পাগলা গারদ থেকে প্রেমিকার চিঠি’, ‘হৃদয়ের কী বা দোষ’, ‘কোনো খেদ নেই’, ‘প্রিয় শাড়িগুলো’ প্রভৃতি।

কবি শহীদ কাদরী

‘তোমাকে অভিবাদন প্রিয়তমা’-খ্যাত কবি শহীদ কাদরী নশ্বর পৃথিবী ছেড়ে বিদায় নেন ২৮ আগস্ট। পঞ্চাশ দশকের পর বাংলা কবিতায় আধুনিক মনন ও জীবনবোধ সৃষ্টি করে যে কজন কবি স্মরণীয় হয়ে আছেন তিনি তাঁদের অন্যতম।

শহীদ কাদরীর জন্ম ১৯৪২ সালের ১৪ আগস্ট কলকাতায়। দশ বছর বয়সে তিনি ঢাকায় চলে আসেন।

একুশে পদক ও বাংলা একাডেমি পুরস্কারজয়ী এই কবি আধুনিক নাগরিক জীবনের টানাপোড়ন, প্রেম এবং স্বদেশচেতনার পাশাপাশি বিশ্ব-নাগরিক বোধের মিলন ঘটিয়েছিলেন তাঁর কবিতায়।

‘উত্তরাধিকার’, ‘তোমাকে অভিবাদন প্রিয়তমা’, ‘কোথাও কোন ক্রন্দন নেই’ ও ‘আমার চুম্বনগুলো পৌঁছে দাও’ এই চারটি কাব্যগ্রন্থ দিয়েই বাংলার জনপ্রিয় কবিদের একজন হয়ে উঠেছিলেন শহীদ কাদরী।

১৯৭৮ সালের পর থেকে বাংলাদেশের বাইরে অবস্থান করেন তিনি। জার্মানি ও যুক্তরাজ্য হয়ে ১৯৮৫ সালে যুক্তরাষ্ট্রে স্থায়ী হয়েছিলেন এই নাগরিক কবি।

চিত্র পরিচালক সাদেক খান

‘নদী ও নারী’-খ্যাত চিত্র পরিচালক সাদেক খান মারা যান ১৬ মে। চিত্র পরিচালনা ছাড়াও করেছেন অভিনয় ও সাংবাদিকতা। তিনি পরিচালক এজে কারদারের উর্দু ছায়াছবি ‘দূর হ্যায় সুখ কি গাঁও’ এবং মহিউদ্দিন পরিচালিত বাংলা চলচ্চিত্র ‘রাজা এলো শহরে’-তে অভিনয় করেছিলেন। এছাড়াও, তিনি কারদারের ‘জাগো হুয়া সাভেরা’ ছবিটিতে কাজ করেছেন। সাদেক খানের জন্ম ১৯৩৬ সালে।

সংগীত পরিচালক খোন্দকার নূরুল আলম

২২ জানুয়ারি বিদায় নিয়েছেন প্রখ্যাত সংগীত পরিচালক খোন্দকার নূরুল আলম। ‘চোখ যে মনের কথা বলে’, ‘এত সুখ সইবো কেমন করে’, ‘তুমি এমনই জাল পেতেছো সংসারে’ এবং ‘আমি চাঁদকে বলেছি আজ রাতে’ এমনই অনেক জনপ্রিয় গানের সংগীত পরিচালক ছিলেন তিনি। একাধিক জাতীয় পুরস্কারসহ একুশে পদকে ভূষিত হয়েছিলেন খোন্দকার নূরুল আলম। ১৯৩৭ সালে তিনি ভারতের আসাম রাজ্যে জন্মগ্রহণ করেন।

অভিনেত্রী পারভীন সুলতানা দিতি

২০ মার্চ মৃত্যুবরণ করেন অভিনেত্রী পারভীন সুলতানা দিতি। জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত অভিনেত্রী দিতি ‘দুই জীবন’, ‘ভাই বন্ধু’, ‘হীরামতি’, ‘জোনাকির আলো’, ‘নয় নম্বর বিপদ সংকেত’-সহ অনেক চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন। তিনি ১৯৬৫ সালের ৩১ মার্চ নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁওয়ে জন্মগ্রহণ করেন।

পরিচালক শহীদুল ইসলাম খোকন

খ্যাতিমান চিত্র পরিচালক শহীদুল ইসলাম খোকন ৪ এপ্রিল মৃত্যুবরণ করেন। ‘লড়াকু’, ‘ম্যাডামফুলি’, ‘লাল সবুজ’, ‘ভণ্ড’ এবং ‘পালাবি কোথায়’ তাঁর পরিচালিত উল্লেখযোগ্য চলচ্চিত্র। তিনি ১৯৫৭ সালের ১৫ মে বরিশালে জন্মগ্রহণ করেন।

আবদুল গফুর হালী

২০ ডিসেম্বর না ফেরার দেশে পাড়ি জমান গীতিকবি আবদুল গফুর হালী। ‘সোনাবন্ধু তুই আমারে করলিরে দিওয়ানা’, ‘পাঞ্জাবিঅলা’ এবং ‘মনের বাগানে ফুটিল ফুল গো’ তাঁর রচিত উল্লেখযোগ্য গানগুলোর অন্যতম। আবদুল গফুর হালী ১৯২৯ সালের ৬ আগস্ট চট্টগ্রামের পটিয়ায় জন্মগ্রহণ করেন।

কণ্ঠশিল্পী সালমা সুলতানা

২৯ সেপ্টেম্বর মৃত্যুবরণ করেন কণ্ঠশিল্পী সালমা সুলতানা। তিনি সংগীত পরিচালক আলাউদ্দীন আলীর স্ত্রী ছিলেন। তাঁদের মেয়ে সংগীত শিল্পী আলিফ আলাউদ্দীন। সালমা ১৯৭০ ও ১৯৮০-র দশকে একজন নজরুলসংগীত শিল্পী হিসেবে জনপ্রিয় ছিলেন।

Comments

The Daily Star  | English

Movements that cause public suffering should be avoided: Quader

Awami League General Secretary Obaidul Quader today said programmes like the anti-quota movement that cause public suffering should be avoided

2h ago