তামাক চাষ ছাড়ছেন রংপুরের কৃষকরা

তামাক চাষ থেকে সরে আসছেন রংপুরের কৃষকরা। অর্থনৈতিকভাবে লাভজনক হলেও তামাকের স্বাস্থ্য ঝুঁকি সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি পাওয়ায় এর উৎপাদন কমছে। ২০১২-১৩ অর্থ বছরের তুলনায় জেলায় গত বছর মাত্র এক তৃতীয়াংশ জমিতে তামাক চাষ করা হয়েছে।
স্টার ফাইল ছবি

তামাক চাষ থেকে সরে আসছেন রংপুরের কৃষকরা। অর্থনৈতিকভাবে লাভজনক হলেও তামাকের স্বাস্থ্য ঝুঁকি সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি পাওয়ায় এর উৎপাদন কমছে। ২০১২-১৩ অর্থ বছরের তুলনায় জেলায় গত বছর মাত্র এক তৃতীয়াংশ জমিতে তামাক চাষ করা হয়েছে।

রংপুরের কৃষি সম্প্রসারণ অফিসের পরিসংখ্যান বলছে, ২০১২-১৩ অর্থ বছরে জেলার মধ্যে সর্বোচ্চ পরিমাণ জমিতে তামাক চাষ হয়। সে বছর সাড়ে চার হাজার হেক্টর জমিতে তামাক উৎপাদিত হয়। কিছু চ্যালেঞ্জ থাকলেও পরের বছর থেকেই তামাক বাদ দিয়ে অন্য ফসলের দিকে ঝুঁকতে শুরু করেছেন কৃষকরা।

১৯৭১ সালে রংপুরে তামাক চাষ ছড়াতে শুরু করে। এখন রংপুর সদর, হারাগাছ, তারাগঞ্জ ও গঙ্গাচরা উপজেলায় তামাক চাষ হচ্ছে।

তারাগঞ্জের দক্ষিণ জিগাগারি গ্রামের বাসিন্দা ৬০ বছরের মোজাম্মেল হোসেন। গত দুই বছর ধরে আগের চেয়ে কম জমিতে তামাক চাষ করছেন তিনি। তিন বছর আগেও দুই একর জমিতে তামাক চাষ করতেন তিনি। আর এ বছর মাত্র ৩৩ শতাংশ জমিতে তামাক লাগিয়েছিলেন তিনি।

তিনি বলেন, “স্বাস্থ্য ঝুঁকির কারণে তামাক ক্ষেতে আর কেউ কাজ করতে চায় না।”

তামাক ক্ষেতে দীর্ঘ সময় কাজ করলে শরীর অসুস্থ মনে হয়। এ কারণেই তামাক ছেড়ে অন্য ফসলের দিকে ঝুঁকেছেন মোজাম্মেল। তার মতোই এই এলাকার অনেক কৃষক এখন তামাক চাষ ছেড়ে দিচ্ছেন।

২০১৩-১৪ বছরে রংপুরে দুই হাজার ৫২২ হেক্টর জমিতে তামাক চাষ হয়। এর পরের বছর দুই হাজার ১৩০ হেক্টর ও ২০১৫-১৬ বছরে তা আরও কমে এক হাজার ৫৯৫ হেক্টরে নেমে আসে।

রংপুর সদরের লালচাঁদপুর গ্রামের বাসিন্দা আব্দুল জলিল (৩২)। তিনি বুঝতে পারেন তামাকের গন্ধ তার পরিবারের সদস্যদের স্বাস্থ্য খারাপের দিকে নিয়ে যাচ্ছে। ২০১৪ সাল থেকে এর চাষ ছেড়ে দিয়েছেন তিনি।

তিনি জানান, “মাথা ঘোরা তামাক চাষিদের মধ্যে খুবই সাধারণ একটি ব্যাপার।”

ওই একই গ্রামের বাসিন্দা আয়ুব আলী। তামাক বাদ দিয়ে এ বছর তিনি তার ৫০ শতাংশ জমিতে আলু চাষ করেছিলেন। আলু ক্ষেতে ছত্রাকের আক্রমণে ব্যাপক আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েছেন তিনি। এর পরও শুধুমাত্র মানুষের স্বাস্থ্যের কথা বিবেচনা করে তামাক চাষে না ফেরার কথা জানান তিনি।

মাত্র দুই তিন বছর আগেও ঢাকা-দিনাজপুর মহাসড়কের রংপুর অংশে দুই পাশে বিস্তীর্ণ এলাকায় তামাকের জমি দেখা যেত। রংপুরের স্কুল শিক্ষক আমিনুল ইসলাম যিনি প্রায়ই তার মোটর সাইকেল চালিয়ে দিনাজপুর যান বলেন, তামাকের জমিগুলোতে এখন অন্য ফসল চাষ করা হচ্ছে।

সরেজমিনে দ্য ডেইলি স্টারের প্রতিনিধি দেখেন, তামাক বাদ দিয়ে কৃষকরা শাকসবজি, গম, সরিষা, তুলা, আলু ও ভুট্টা চাষ করছেন।

গঙ্গাচরার একজন বয়স্ক কৃষক তিস্তার চরে এখন কুমড়া আবাদ করেন। সেখানে তিনি আগে তামাক চাষ করতেন। হারাগাছের সরাই গ্রামের আসাদ মিয়া জানান গত বছর থেকে তিনি তার তিন একর জমিতে তামাকের বদলে তুলা উৎপাদন শুরু করেছেন। তুলা চাষে সফলতাও পেয়েছেন তিনি। এখন আরও বেশি জমিতে তুলা লাগানোর কথা ভাবছেন তিনি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কৃষক জানান, স্থানীয় ও বহুজাতিক তামাক কোম্পানিগুলো বীজ ও সার সরবরাহ করে খোদ কৃষকদের কাছ থেকে তামাক কিনে এর চাষকে উৎসাহিত করেন। অন্যদিকে বাংলাদেশ পরিবেশ আইনজীবী সমিতি (বেলা) তামাকের ক্ষতির কথা প্রচার করে কৃষকদের তামাক চাষে নিরুৎসাহিত করছে। বেলার রাজশাহী অফিসের সমন্বয়ক তন্ময় সান্যাল বলেন, এই অঞ্চলের অন্যান্য সংগঠনগুলো তামাকবিরোধী প্রচারণা চালালে আরও বেশি সংখ্যক কৃষক তামাক চাষে নিরুৎসাহিত হবেন।

Click here to read the English version of this news

Comments

The Daily Star  | English

Teesta floods bury arable land in sand, leaving farmers devastated

40 unions across 13 upazilas in Lalmonirhat, Kurigram, Rangpur, Gaibandha, and Nilphamari are part of the Teesta shoal region

1h ago