দুর্ঘটনায় প্রাণ হারালেন দোহারের কালিকা প্রসাদ

জনপ্রিয় লোকসঙ্গীতশিল্পী ও ব্যান্ড দল দোহারের প্রধান কালিকা প্রসাদ। ছবি: ফেসবুক থেকে সংগৃহীত

বর্ধমানের শিউড়িতে একটি লোকসঙ্গীতের অনুষ্ঠানে যোগ দিতে যাওয়ার সময় মর্মান্তিক পথদুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন দুই বাংলার জনপ্রিয় লোকসঙ্গীত শিল্পী ও গবেষক কালিকা প্রসাদ ভট্টাচার্য।

১৯৭১ সালে ১১ সেপ্টেম্বর আসামের শিলচরে জন্ম তার। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৪৭ বছর।

কালিকা প্রসাদ ভট্টাচার্য জনপ্রিয় লোকসঙ্গীতের ব্যান্ড দল দোহারেরও কর্ণধার,  ১৯৯৯ সালে তৈরি করা দলটি পশ্চিমবঙ্গের লোকসঙ্গীতের অন্যতম গানের দল।

এদিন মঙ্গলবার সকালে লোকসঙ্গীত শিল্পীর সঙ্গে দুর্ঘটনায় তার পাঁচ সহ-শিল্পীও গুরুত্বর আহত হন। তারা হচ্ছেন সন্দীপ পাল, নিলান্দ্রী রায়, অর্ণব রায়, সুদীপ্ত চক্রবর্তী, রাজিব দাশ। এদের মধ্যে চালক রাজিব দাশের অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানা গেছে।

দুর্ঘটনাস্থল কলকাতা থেকে আনুমানিক ৫৫ কিলোমিটার দূরে দুর্গপুর এক্সপ্রেস ওয়ের হুগলি গুরাপ।

কালিকা প্রসাদের আদিবাড়ি আসামের শিলচর হলেও বাংলাদেশের প্রতি তার ছিল অকৃত্রিম টান, ভালোবাসা। বাংলাদেশের যে কোন অনুষ্ঠানে ডাক পেলেই ছুটে আসতেন। বাংলাদেশের বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলগুলোর জন্মদিন কিংবা কোনও কলেজের অনুষ্ঠানেও তাকে গান গাইতে দেখা গিয়েছে।

হুগলি জেলা পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, সকাল ১০টা নাগাদ দোহারের শিল্পীদের বহনকারী প্রাইভেটকারটি হুগলির গুরাপ অতিক্রম করছিল। সেই সময় আচমকাই একটি ট্রাক পেছন দিকে এসে ধাক্কা মারে। আর সাথে সাথে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে কালিকা প্রসাদের গাড়িটি ছিটকে পড়ে রাস্তার পাশে খাদে। গুরুত্বর আহত অবস্থায় সবাইকে নিয়ে যাওয়া হয় বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। কিন্তু সেখানে চিকিৎসকরা কালিকা প্রসাদকে মৃত বলে ঘোষণা করেন।

কালিকার মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়তেই চারদিকের শোকের ছায়া নেমে আসতে শুরু করে। প্রথম টুইট করে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি গভীর শোক প্রকাশ করেন। এর পর একে একে রাজ্যের প্রায় সকল শীর্ষস্থানীয় শিল্পী, সাংবাদিক, বুদ্ধিজীবী ফেসবুক কিংবা টুইটার অ্যাকাউন্টে ভেসে উঠে কালিকা প্রসাদকে নিয়ে নানা স্মৃতি, ঘটনা এবং শোকগাথার নানা লেখা।

বিকাল সাড়ে ৪টা নাগাদ কালিকা প্রসাদের দেহ নিয়ে যাওয়া হয় কলকাতার রবীন্দ্রসদন চত্বরে। এর আগে রাজ্যের সচিবালয় নবান্নে নিয়ে যাওয়া হয় তার দেহ। সেখানে মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জিসহ রাজ্য সরকারের র্শীর্ষস্থনীয় কর্মকর্তারা শেষ শ্রদ্ধা জানান। মৃতদেহ নিয়ে যাওয়া হয় দক্ষিণ কলকাতার সন্তোষপুরের তার নিজের বাড়িতেও। সেখানেও এক হৃদয় বিদারক দৃশ্যের অবতারণা হয়।

কালিকা প্রসাদের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন বাংলাদেশের সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রী অভিনেতা আসাদুজ্জামান নূর। বাংলাদেশের মানুষের পক্ষ থেকে কলকাতার বাংলাদেশ উপদূতাবাসের প্রথম সচিব (প্রেস) মোফাকখারুল ইকবাল কালিকা প্রসাদের মরদেহে ফুল দিয়ে শেষ শ্রদ্ধা জানান।

কালিকা প্রসাদের মৃত্যুর নিয়ে প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে কবীর সুমন বলেন, এটা বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছে আমার, কালিকা নেই। কালিকার মৃত্যু নিয়ে প্রায় বাকরুদ্ধ সঙ্গীত পরিচালক শান্তুনু মৈত্র এবং সঙ্গীত শিল্পী অনুপম রায়।

অনুপম রায় বলেন, মাত্র দুদিন আগেই একটা অনুষ্ঠানে জমিয়ে আড্ডা দিয়ে এলাম। এখনও মনে হচ্ছে ওর উপস্থিতি আমার স্বত্বা জুড়ে।

ঊষা উথুপ বলেন, সব সময় ছেলেটাকে হাসিখুশি দেখেছি, স্তব্ধ হয়ে গেল সব- বিশ্বাস করতে পারছি না আমি।

লোপামুদ্রা মিত্র বলেন, যেভাবে কালিকা প্রসাদ নতুন করে লোক সঙ্গীতকে আবার জাগিয়ে তুলছিলেন, সেই চেষ্টায় বড় একটা ধাক্কা লাগলো। কে এর উত্তরণ করবেন- জানা নেই আমাদের। 

প্রসঙ্গত, বাংলা ছায়াছবি জাতিস্মর (২০১৪), মনের মানুষ (২০১০) এবং ভুবন মাঝি (২০১৭) তার কাজের জন্য পরিচিত।

ভারতীয় সময় সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় কেওড়াতলা মহাশ্মশানে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় কালিকা প্রসাদ ভট্টাচার্যের শেষকৃত্যানুষ্ঠান সম্পন্ন হয়।

Comments

The Daily Star  | English

JP central office vandalised, set ablaze

A group of unidentified people set fire to the central office of Jatiyo Party in Dhaka's Kakrail area this evening

1h ago