ফরিদপুরে ৩০০ শিক্ষার্থীর চুল কেটে দিলেন ‘প্রতিমন্ত্রীর এপিএস’

faridpur-map

ফরিদপুরের ভাঙ্গায় একটি বিদ্যালয়ের তিন শতাধিক শিক্ষার্থীর চুল কেটে দিলেন প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের কথিত প্রতিমন্ত্রীর সহকারী একান্ত সচিব (এপিএস) এবিএম শেখ বাপী এলাহী।

গত বুধবার দুপুর ১২টা ৪০ মিনিট থেকে ২টা পর্যন্ত এ ঘটনা ঘটে ভাঙ্গা পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ে। ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ হায়দার হোসেন ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।

ভাঙ্গা উপজেলা সদরের পশ্চিম হাসামদিয়া মহল্লায় ১৮৮৬ সালে স্থাপিত হয় ভাঙ্গা পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়। এই বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় চার হাজার। বিদ্যালয়ে সকালে ছাত্রীদের এবং দুপুরে ছাত্রদের ক্লাস নেওয়া হয়।

বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা জানায়, দুপুরের পর্বে প্রথম ক্লাস শেষ হওয়ার পর দুপুর ১২টা ৪০ মিনিট থেকে এ চুল কাটার অভিযান শুরু হয়। এপিএস প্রথম ক্লাস শেষ হওয়ার পর এবং দ্বিতীয় ক্লাস শুরু হওয়ার আগে পর্যন্ত নবম শ্রেণির বিজ্ঞান ক্লাসে গিয়ে কক্ষের দরজা ভিতর থেকে বন্ধ করে কাঁচি দিয়ে শিক্ষার্থীদের চুল কাটা শুরু করেন।

তিনি (এপিএস) প্রতি শিক্ষার্থীর মাথার সামনের দিকের চুল মুষ্ঠিবদ্ধ করে ধরে কাঁচি দিয়ে কেটে, কাটা চুল ওই শিক্ষার্থীর হাতে ধরিয়ে দেন। এভাবে দুপুর ২টা পর্যন্ত সপ্তম থেকে দশম শ্রেণির প্রায় তিন শতাধিক ছাত্রের চুল কেটে দেওয়া হয়।

এপিএসকে বিদ্যালয়টির দুজন শিক্ষক এবং বহিরাগত এক ব্যক্তি এ কাজে সহায়তা করেন।

এ ঘটনায় বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। শিক্ষার্থীরা দুপুর সোয়া ২টার বিরতির সময় ক্লাস বর্জন করে স্কুল থেকে বের হয়ে আসে। পরে প্রত্যেক শিক্ষার্থীকে ক্ষৌরকারের কাছে গিয়ে চুল ঠিকমত কেটে নিতে হয়েছে।

নবম শ্রেণির বিজ্ঞান বিভাগের শ্রেণিশিক্ষক আরিফুল ইসলাম বলেন, “আমি ক্লাস থেকে বের হওয়ার পর এ ঘটনা ঘটে। যখন নবম শ্রেণির (বিজ্ঞান) শিক্ষার্থীদের চুল কাটা হচ্ছিল আমি তখন অন্য শ্রেণির ক্লাস নিচ্ছিলাম। আমি ক্লাসে থাকা অবস্থায় এ ঘটনা ঘটেনি।”

এ ঘটনায় ক্ষুব্ধ হয়েছেন শিক্ষার্থীদের অভিভাবকগণ। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন অভিভাবক জানান, “ছেলেদের চুল বড় মনে হলে শিক্ষকরা তাদের বলতে পারতেন। সে কথা ছাত্ররা না শুনলে আমাদেরও জানাতে পারতেন। কিন্তু তা না করে স্কুলের সাথে সম্পর্কিত নন এমন এক ব্যাক্তির নেতৃত্বে এ কাজটি কিভাবে করা হলো? বিদ্যালয়টিতে কোন শৃংখলা আছে বলেও তো মনে হচ্ছে না। সর্বপরি বিষয়টি মানবাধিকার লঙ্ঘন।”

ছাত্রদের চুল কেটে দেওয়ার সত্যতা নিশ্চিত করে ভাঙ্গা পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ হায়দার হোসেন বলেন, “প্রবাসীকল্যাণ প্রতিমন্ত্রীর এপিএস ছাত্রদের চুল কেটেছেন।”

তিনি আরও বলেন, “এ কাজটি তাঁর করা ঠিক হয়নি। আমি তাঁকে আমার আপত্তির কথা জানিয়েছি।”

এবিএম শেখ বাপী এলাহী এই বিদ্যালয়ের একজন পৃষ্ঠপোষক বলেও জানান বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক।

উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. আব্দুর রহমান বলেন, “তিনি এ বিষয়টি জানেন না। কেউ তাঁর কাছে কোন অভিযোগও করেনি।” তিনি ওই স্কুল পরিদর্শন করে এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন বলে আশ্বাস দেন।

নিজেকে প্রবাসীকল্যাণ প্রতিমন্ত্রী শেখ ইকবালের এপিএস পরিচয় দিয়ে এবিএম শেখ বাপী এলাহী বলেন, “আমি কিছু ছাত্রের চুল কেটেছি।”

তিনি এই প্রতিনিধিকে আরও বলেন, “সাংবাদিক হিসেবে নয় একজন অভিভাবক হিসেবে ভেবে দেখুন, ছাত্ররা বড় চুল রাখলে বিষয়টা কেমন দেখায়!”

নিজের বাড়ি গোপালগঞ্জ জেলার টুঙ্গিপাড়া উপজেলায় উল্লেখ করে তিনি বলেন, “এ চেতনা থেকেই আমি বিদ্যালয়টির কোন কার্যকরী দায়িত্বে না থাকলেও একজন শুভান্যুধায়ী হিসেবে আমি এ কাজটি করেছি।”

প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয় সুত্রে জানা গেছে মন্ত্রণালয়টিতে প্রতিমন্ত্রীর কোন পোষ্ট নেই। প্রবাসীকল্যাণমন্ত্রী নূরুল ইসলামের এপিএস ইয়াসির আদনান বলেন, “এই মন্ত্রণালয়ে কোন প্রতিমন্ত্রী নেই। তাছাড়া, মন্ত্রণালয়ে শেখ বাপী এলাহী নামে কোন এপিএস নেই।”

Comments

The Daily Star  | English

Advisory council set to hold emergency meeting this evening

Sources from the CA office confirmed that the meeting will take place at the State Guest House, Jamuna

35m ago