তিন কৃতী শিক্ষার্থীর গল্প

মাহিন আর-রহমানকে বলা যেতে পারে তিন কৃতী শিক্ষার্থীর মধ্যে সেরা। কেননা, স্কুলজীবনের শুরু থেকেই তিনি তাঁর সাফল্যের পরিচয় দিয়েছেন।
nation_builder
গতকাল রাজধানীর শহীদ সোহরাওয়ার্দী জাতীয় ইনডোর স্টেডিয়ামে ‘ও’ এবং ‘এ’ লেভেলের কৃতি শিক্ষার্থীদের মধ্যে পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে সেরা শিক্ষার্থী সানজানা নামরিন (বাম থেকে ২য়), মোহাম্মদ মোহাইমেন, (ডান থেকে ৩য়) এবং মাহিন আর-রহমান (ডান থেকে ২য়)। তাঁদের সঙ্গে রয়েছেন অধ্যাপক মুহাম্মদ জাফর ইকবাল (ডানে), প্রধানমন্ত্রীর আন্তর্জাতিক বিষয়ক উপদেষ্টা গওহর রিজভী (বাম থেকে ৩য়) এবং দ্য ডেইলি স্টারের সম্পাদক ও প্রকাশক মাহফুজ আনাম (বামে)। ছবি: আমরান হোসেন

মাহিন আর-রহমানকে বলা যেতে পারে তিন কৃতী শিক্ষার্থীর মধ্যে সেরা। কেননা, স্কুলজীবনের শুরু থেকেই তিনি তাঁর সাফল্যের পরিচয় দিয়েছেন।

তিনি ‘ও’ লেভেলে ১১টি বিষয়ে ৯০ এর বেশি নম্বর পেয়েছিলেন। এর মধ্যে ছয়টিতে ছিল ‘এ’ গ্রেড এবং চারটিতে ‘এ’ স্টার। ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষে ‘এ’ লেভেলে দেশের মধ্যে সেরা অর্জনটিও তাঁরই ঝুলিতে।

গতকাল ‘ও’ এবং ‘এ’ লেভেলের কৃতী শিক্ষার্থীদের মধ্যে পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে পুরস্কার নেওয়ার পর দ্য ডেইলি স্টারের কাছে নিজের অনুভূতি ব্যক্ত করতে গিয়ে মাহিন বলেন, “আজকের এই সাফল্য সম্ভব হয়েছে আমার মা-বাবার সহযোগিতার ফলেই।”

‘স্যালুটিং দ্য নেশন বিল্ডারস অব টুমরো’ – স্লোগান নিয়ে গত ১৮ বছর থেকে দ্য ডেইলি স্টার এই পুরস্কার দিয়ে আসছে ‘ও’ এবং ‘এ’ লেভেলের কৃতি শিক্ষার্থীদের। এরই ধারাবাহিকতায় গতকাল রাজধানীর শহীদ সোহরাওয়ার্দী জাতীয় ইনডোর স্টেডিয়ামে পুরস্কৃত করা হয় ১,৯০১ সেরা শিক্ষার্থীকে।

মাহিনের বাবা মেখলেসুর রহমান পড়াশোনা করেছিলেন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বুয়েট) এবং মা নায়ার সুলতানা রহমান ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। তাই পরিবারে মাহিন পেয়েছিলেন পড়াশোনার উপযুক্ত পরিবেশ।

মাহিনের দুই ভাইও লেখাপড়ায় বেশ ভালো। তাঁরা এখন কানাডার একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ছেন।

এছাড়াও, শিক্ষকদের কাছ থেকে তিনি অনেক উৎসাহ ও সহযোগিতা পেয়েছেন।

এমন ঈর্ষনীয় সাফল্যের জন্যে কোন কোচিং সেন্টারে যেতে হয়নি মাহিনকে। পড়ালেখায় মা তাঁকে সহযোগিতা করেছিলেন।

বাবা যখন মাহিনকে স্কুল থেকে বাসায় নিয়ে আসতেন, পথে গল্প শোনাতেন কেনো পড়ালেখা এতো গুরুত্বপূর্ণ।

তাঁর ইচ্ছে মেকানিক্যাল অথবা অ্যারোস্পেস ইঞ্জিনিয়ারিং বিষয়ে পড়তে যাবেন দেশের বাইরে আর পড়াশোনা শেষ করে ফিরবেন দেশে।

“আমি বাংলাদেশের অটোমোটিভ বা অ্যারোস্পেস ইন্ডাস্ট্রিতে বিপ্লব ঘটাতে চাই।”

ছোটদের প্রতি মাহিনের পরামর্শ, “আমরা যে যেখানেই যাই না কেনো, আমাদের কাজ হলো নিজেদের সেরা চেষ্টাটাই করে যাওয়া।”

অপর একজন কৃতীমান হলেন সানজানা নামরিন। তিনি চট্টগ্রামের সানশাইন গ্রামার স্কুল থেকে ১৫টি বিষয়ে ‘এ’ গ্রেড পেয়েছেন এবং এর মধ্যে ১২টিতে পেয়েছেন ‘এ’ স্টার।

তাঁর দুই ভাই ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অ্যারোস্পেস ইঞ্জিনিয়ারিং এ পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেছেন। সানজানা সে পথেই হাঁটতে চান।

আরও দুজন রয়েছেন তাঁর রোল মডেল হিসেবে – একজন মা, অন্যজন স্কুলের প্রিন্সিপাল।

সানজানার মা গরীবদের জন্য একটি হাসপাতাল ও স্কুল পরিচালনা করেন। মার কাছ থেকে তিনি পেয়েছেন জনহীতকর কাজে নিজেকে নিয়োজিত করার শিক্ষা।

এদিকে, তাঁর স্কুলের প্রিন্সিপাল সাফিয়া গাজী রহমান সানজানাকে দিয়েছেন অপরের প্রতি ভালোবাসা ও সহযোগিতার শিক্ষা।

“আমি বাবার কাছেও বেশ কৃতজ্ঞ। তিনি আমাকে দিয়েছেন নিয়মানুবর্তিতার শিক্ষা।”

“জীবনে ভয় পাওয়ার মতো কিছু নেই” – বিজ্ঞানী মাদাম কুরির এই আপ্তবাক্য দ্বারা অনুপ্রণিত হয়ে সানজানা ‘ও’ লেভেলে ১৫টি বিষয় নেন এবং সবগুলো বিষয়েই ভালো ফলাফল লাভ করেন।

সানজানার ইচ্ছা জ্যোর্তিবিদ্যা নিয়ে পড়াশোনা করার।

পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে সানজানা বলেন, “আমি যেখানেই যাই না কেনো, মন-প্রাণ দিয়ে দেশের সেবা করতে চাই।”

মাস্টারমাইন্ড ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল থেকে ১৩টি বিষয়ের মধ্যে ১০টিতে ‘এ’ স্টার পাওয়া মোহাম্মদ মোহাইমেন তাঁর এই সাফল্যের জন্য সর্বশক্তিমানকে ধন্যবাদ দেন। এর সঙ্গে আরও ধন্যবাদ দেন তাঁর মা-বাবা ও শিক্ষকদের।

তিনি বলেন, শিক্ষাজীবনে সাফল্যের প্রয়োজন রয়েছে, কিন্তু এর চেয়েও বেশি গুরুত্বপূর্ণ সাহস, অধ্যবসায় ও ধৈর্য্যের।

“তাই আমি সবাইকে অনুরোধ করি, নিজের উন্নয়নের জন্য শুধুমাত্র সনদ জমানো থেকে দৃষ্টিটা সরানো প্রয়োজন।”

Comments

The Daily Star  | English

475 workplace deaths in 6 months: report

Of the total number, 250 transport workers died in this period, 74 died in service establishments (such as workshops, gas, electricity supply establishments), 66 in agricultural sector, 52 in construction, and 33 died in factories and other manufacturing institutes

29m ago