ভারতে মুসলমানদের ‘তিন তালাক’ অসাংবিধানিক
তিন তালাক প্রথা উঠে গেল ভারতে। সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি জেএস খেহরের নেতৃত্বে গঠিত পাঁচ বিচারপতির বেঞ্চের মধ্যে তিন বিচারপতি এই তালাক প্রথাকে ‘অসাংবিধানিক’ বলেছেন। তবে প্রধান বিচারপতি এবং সাংবিধানিক বেঞ্চের বিচারপতি আব্দুল নাজির এই প্রথার বিরুদ্ধে মত দেননি। কুরিয়ান জোসেফ, রোহিন্তন ফালি নারিমন এবং উদয় উপেশ ললিত এই তিন বিচারপতি মৌখিক তালাকের মাধ্যমে সংবিধানের ১৪ অনুচ্ছেদ লঙ্ঘিত হওয়ার কথা বলেন।
বিচারকদের সংখ্যায় নিরঙ্কুশ রায়ে আদালত বলেছেন, তালাক-ই-বিহাত অসাংবিধানিক। সুন্নি মুসলিম সমাজে প্রায় হাজার বছর ধরে এই প্রথা চালু রয়েছে। তবে এতে ভারতের সংবিধানের ১৪ অনুচ্ছেদ লঙ্ঘিত হয়। এ ব্যাপারে আগামী ছয় মাসের মধ্যে নতুন আইন করতে কেন্দ্রের সরকারকে উদ্যোগী হতে হবে। নতুন আইনের জন্য সরকারকে মুসলিম ল বোর্ডের মতামতও নিতে হবে।
তিন তালাক প্রথা উঠে যাওয়ায় ভারতের সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা স্বস্তি প্রকাশ করেছেন। কেন্দ্রের মন্ত্রীরাও তিন তালাক প্রথা তুলে দেওয়ার বিচার বিভাগের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন। কেন্দ্রের মন্ত্রী মানিকা গান্ধী বলেন, এটা খুবই ইতিবাচক সিদ্ধান্ত। ধর্মের দোহাই দিয়ে এতো দিন মেয়েদের অধিকার হরণ করা হচ্ছিল।
Judgment of the Hon'ble SC on Triple Talaq is historic. It grants equality to Muslim women and is a powerful measure for women empowerment.
— Narendra Modi (@narendramodi) August 22, 2017
এদিন রায়ের সময়, প্রধান বিচারপতি জেএস খেরার ও সাংবিধানিক বেঞ্চের বিচারপতি আবদুল নাজির তিন তালাক প্রথাকে অসাংবিধানিক ঘোষণা করার পক্ষে ছিলেন না। কেন্দ্র সরকার নতুন আইন পাস না করানো পর্যন্ত এই প্রথা সাময়িক নিষিদ্ধ রাখার পক্ষে ছিলেন। এমন কি প্রধান বিচারপতি জেএস খেরারও প্রথার বিরুদ্ধে বলেননি। তিনি বলেছেন, ‘তালাক–ই–বিদাত প্রথা সুন্নি সম্প্রদায়ের অবিচ্ছেদ্য অংশ। প্রায় হাজার বছর ধরে মানুষ এই প্রথা মেনে আসছেন। এতে সংবিধানের ১৪, ১৫, ২১ এবং ২৫ ধারা লঙ্ঘিত হয় না।’ অন্যদিকে বিচারপতি নাজির বলেন, ‘তিন তালাক মুসলিম পার্সোনাল ল বোর্ডের অংশ এবং মৌলিক অধিকারের মধ্যেই পড়ে।’
কিন্তু তাঁদের যুক্তিতে সায় দেননি বেঞ্চের অন্য তিন বিচারপতি। বিচারপতি কুরিয়ান জোসেফ বলেন, ‘প্রধান বিচারপতির সঙ্গে একমত হতে পারছি না। তিন তালাক প্রথা ইসলামি নীতি বিরুদ্ধ। পবিত্র কোরানে এর কোনও উল্লেখ নেই। সংবিধানের ২৫ ধারায় এই প্রথাকে মোটেও প্রশ্রয় দেওয়া হয়নি। তাই খেয়ালখুশি মতো হাজার বছর পুরনো একটি প্রথাকে ব্যবহার করা উচিত নয়।’ বিচারপতি নারিমান বলেন, ‘১৯৩৪ সালে তিন তালাক প্রথা গৃহীত হয়েছিল। কিন্তু এর সাংবিধানিক বৈধতা যাচাই করা উচিত বইকি।’ আদালত কক্ষে তর্ক বিতর্ক চলাকালীন তিন তালাক প্রথাকে ‘ভয়ঙ্কর,’ ‘পাপাচার,’ এবং ‘অবাঞ্ছিত,’ বলে উল্লেখ করে ‘অল ইন্ডিয়া মুসলিম পার্সোনাল ল বোর্ড।’
ভারতীয় মুসলিম ল বোর্ডের আইনজীবী চন্দ্রা রাজন বলেন, এটা অনেক বড় জয় ভারতীয় নারীদের। বিশেষ করে গণতন্ত্রে একটা বড় বাধা ছিল এতো বছর এই কালো আইন। স্ত্রীকে তালাক বললেই তো বিচ্ছেদ হয়ে যেতো এতো বছর।
ভারতের রাজ্যগুলোতে এমন ১০টি তিন তালাকের বিবাহ বিচ্ছেদ নিয়ে লড়াই চালিয়ে গিয়েছে ভারতীয় ‘মুসলিম মহিলা আন্দোলন’ নামের একটি সংগঠন। তাদের নেত্রী রহিমা বিবি জানিয়েছেন, ভারতের আইন ব্যবস্থার প্রতি দেশের নারীরা কৃতজ্ঞ থাকবেন। কেননা এতো দিন নারীদের অন্যায় ভাবে তাদের অধিকার খর্ব করে নেওয়া হতো। দেশের শীর্ষ আদালত সুবিচার করায় ভারতের লক্ষ লক্ষ বিবাহিত নারীরা এখন বেঁচে যাবেন। এতো বছর যারা তিন তালকের শিকার হয়েছেন, ওই স্ত্রীরাও এবার আইনের দ্বারস্থ হতে পারবেন বলেও জানান রহিমা বিবি।
Comments