রোহিঙ্গা ইস্যু: সু চি'র পাঁচটি অবিশ্বাস্য দাবি

rohingya bgb
বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তের নো ম্যানস ল্যান্ডের কাছে একদল রোহিঙ্গা শরণার্থী। ছবি: আনিসুর রহমান

রোহিঙ্গাদের জাতিগত নিধনের উদ্দেশ্যে পরিচালিত সামরিক অভিযানের পর, একদিকে যখন চার লাখের বেশি সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা মুসলিম বাংলাদেশে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়েছে, তখনই আন্তর্জাতিক মহলের নিন্দার মুখে, আজ দেশটির নেতা অং সান সু চি প্রথমবারের মতো জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণ দিয়েছেন। 

সিএনএন বলছে, তার ভাষণের মধ্যে কয়েকটি দাবি জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব কফি আনান কমিশনের দেয়া প্রতিবেদনের সাথে সাংঘর্ষিক এবং অবিশ্বাস্য বটে। 

সু চি'র পাঁচটি অবিশ্বাস্য দাবি:

"রাখাইন মুসলমানরা কেন এভাবে দেশত্যাগ করছে তার কারণ আমরা খুঁজে বের করতে চাই"

সু চি জোরালো ভাবে বলেছেন তার সরকার এই সংকটের মূল কারণ সম্পর্কে কিছু জানে না। 

এই কথাটি বেশ বেমানান, কারণ তিনি বার বার কফি আনানের প্রতিবেদনের দোহাই দিয়েছেন।  এটি সেই চূড়ান্ত প্রতিবেদন, যা রাখাইন রাজ্যের পরিস্থিতি নিয়ে গত আগস্ট মাসে প্রকাশিত হয় এবং বেশ কয়েকটি মূল কারণকে চিহ্নিত করে।  আনান কমিশনের সেই প্রতিবেদনে রাষ্ট্রপরিচয়হীন রোহিঙ্গা মুসলিমদের নাগরিকত্বহীনতা, রাখাইন রাজ্যে আর্থসামাজিক সংকট, পুলিশ এবং সামরিক বাহিনীর অভিযানের কথা বলা হয়েছে। 

২০১৬ সালের অক্টোবরে, সীমান্ত পুলিশ ফাঁড়িতে আক্রমণের ফলশ্রুতিতে, পুলিশ এবং সামরিক বাহিনীর অভিযানের মুখে হাজার হাজার রোহিঙ্গা মুসলিম রাখাইন থেকে পালিয়ে প্রতিবেশী বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে বলে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। 

রিপোর্টে আরো বলা হয়, যদিও নিজের ভূখণ্ড রক্ষার সকল অধিকার মিয়ানমারের আছে, তবুও সম্পূর্ণ সামরিক প্রতিক্রিয়া দিয়ে রাইখাইনে শান্তি নিশ্চিত করা সম্ভব নয়। 

এক বিবৃতিতে কফি আনান আরো বলেন, সরকার এবং সমাজের সকল শ্রেণীর পক্ষ থেকে দ্রুত সমন্বিত পদক্ষেপ গ্রহণ না করলে, আরো সহিংসতা এবং চরমপন্থার আশংকা রয়েছে।  এবং এতে করে, রাখাইন রাজ্যের স্থায়ী দারিদ্রের অবনতিই হবে। 

"মিয়ানমার আন্তর্জাতিক নজরদারির তোয়াক্কা করে না"

সু চি বলেছেন তিনি জানেন বিশ্ববাসীর নজর এখন মিয়ানমারের উপরে, কিন্তু তা সত্বেও তার সরকার আন্তর্জাতিক নজরদারিকে ভয় পায় না। 

"আপনারা যদি আমাদের সাথে কাজ করতে আগ্রহী হোন, তাহলে আমাদেরকে জানান," সু কি বলেছেন, তিনি আরো বলেন, "আপনারা চাইলে আমরা আপনাদেরকে এসব জায়গা পরিদর্শনে নিয়ে যেতে পারি, আর যারা এখনো রয়ে গেছেন, তাদেরকে আপনারা জিজ্ঞেস করতে পারেন তারা কেন এখনো সেখানে আছেন"। 

রাখাইন রাজ্যের পরিস্থিতি হয়তো তার বক্তৃতার পরে কিছুটা বদলাতে পারে, কিন্তু, এটাও সত্য সেখানে সংবাদকর্মী, কূটনীতিক এবং মানবাধিকার কর্মীদের প্রবেশাধিকারে কঠোর কড়াকড়ি রয়েছে। 

সিএনএনের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, সেপ্টেম্বরের শুরুতে, মিয়ানমার সরকার রাখাইন রাজ্যে সংবাদকর্মীদের জন্য একটি সফরের আয়োজন করেছিল।  তবে, সেই সফরে সাংবাদিকদের ওই এলাকায় স্বাধীনভাবে ঢোকা এবং সরকারি নজরদারি ছাড়া কোনো সাক্ষাৎকার নেয়ার অনুমতি পাওয়া প্রায় অসম্ভব ছিল। 

এমনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের প্রতিবেদনে বলা হয়, মিয়ানমার সরকার রাখাইন রাজ্যে সাহায্যকর্মীদের প্রবেশের অনুমতি দিচ্ছে না।  জানুয়ারিতে, মানবাধিকার বিষয়ক জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞ ইয়ান হি লী কে 'নিরাপত্তার কারণে' রাখাইন রাজ্যের কিছু এলাকা পরিদর্শনে বাধা দেয়া হয়। 

গত ডিসেম্বরে, কফি আনান মিয়ানমার সরকারের রাখাইন রাজ্যে সাহায্য সংস্থা এবং অন্যান্য এনজিওর কর্মীদের প্রবেশে বাধা দেয়ার নিন্দা জানান। 

"রাখাইনের সব মানুষ দেশত্যাগ করেনি" 

রাখাইন রাজ্যের জনসংখ্যা প্রায় ৩১ লাখ, তার মধ্যে ১০ লাখ রোহিঙ্গা মুসলিম।  জাতিসংঘের মতে গত ২৫শে আগস্ট থেকে এই পর্যন্ত, ৪ লাখের বেশি রোহিঙ্গা সীমান্ত অতিক্রম করে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে।  সু'চির দাবি রোহিঙ্গা মুসলিমদের ৫০% গ্রাম এখনো অক্ষত রয়েছে।  তবে, সু চি তার বক্তৃতায় একবারও রোহিঙ্গা শব্দটি ব্যবহার করেননি।  তাই এটি অস্পষ্টই রয়ে যায়, যে তিনি পুরো রাজ্যের জনসংখ্যার কথা বলছেন নাকি রোহিঙ্গা জনসংখ্যার কথা বলছেন।  সম্পূর্ণ বক্তৃতায় তিনি শুধু একবার রোহিঙ্গা শব্দটি উচ্চারণ করেছেন, যখন তিনি আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মি (আরসা) নিয়ে কথা বলেছেন।  

"রাখাইনের সব মানুষ শিক্ষা এবং স্বাস্থ্যসেবা পাচ্ছে"

সু চি দাবি করেন যে রাখাইন প্রদেশের সকল রোহিঙ্গা মুসলিম তাদের অমুসলিম প্রতিবেশীদের মতো একই রকম শিক্ষা এবং স্বাস্থসেবা পাচ্ছেন।  যদিও আনান কমিশন রিপোর্টে তার এই দাবির বিপরীত চিত্র পাওয়া যায়।  কমিশনের রিপোর্টে বলা হয়েছে, রাখাইন রাজ্যের মুসলিমদের স্বাধীনভাবে চলা-ফেরার অধিকারও নেই।  

এর ফলে, শিক্ষা, চিকিৎসা এবং ব্যবসা বাণিজ্যে অংশ নেয়ার কোনো সুযোগ রোহিঙ্গা মুসলিমদের নেই।  

"৫ই সেপ্টেম্বর থেকে সকল সামরিক অভিযান বন্ধ আছে"

সু চি'র দাবি, পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে সরকার সচেষ্ট এবং সেপ্টেম্বরের ৫ তারিখ থেকে কোনো সশস্ত্র সংঘর্ষ হয়নি, এবং কোনো সামরিক অভিযান চলছে না।  কিন্তু, এমনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল স্যাটেলাইট ইমেজ পরীক্ষা করে বলেছে, ওই তারিখের পর কয়েক ডজন গ্রাম পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে এবং সেখানে আগুন দেখা যাচ্ছে | অন্যদিকে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ বলছে আগস্টের ২৫ থেকে সেপ্টেম্বরের ১৪ তারিখ পর্যন্ত কমপক্ষে ৬২টি গ্রাম জ্বালিয়ে দেয়া হয়েছে।  

Comments

The Daily Star  | English

JP central office vandalised, set ablaze

A group of unidentified people set fire to the central office of Jatiyo Party in Dhaka's Kakrail area this evening

1h ago